‘হঠাৎ দৌড় দেবে, তারপর দুর্ঘটনা হলে বাসে আগুন দেবে— এটা কেমন কথা’
১ ডিসেম্বর ২০২১ ১৩:৩৪
ঢাকা: সড়ক দুর্ঘটনা এড়াতে সবাইকে ট্রাফিক আইন মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর ট্রাফিক আইন না মেনে যেখানে সেখানে রাস্তা পারাপার হতে গেলে দুর্ঘটনা ঘটতেই পারে মন্তব্য করেছেন তিনি। এ ধরনের ঘটনার পর বাসে ভাঙচুর চালানো বা বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনাগুলো যেন না ঘটে, সেদিকে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেকোনো জায়গা থেকে রাস্তা পার হতে গেলে দুর্ঘটনা ঘটবেই। কারণ একটি চলমান গাড়ি চট করে ব্রেক করতে পারে না। তাই নির্দিষ্ট জায়গা দিয়ে রাস্তা পার হওয়া সমীচীন। হঠাৎ করে দৌড় দেবে, তারপর দুর্ঘটনা হবে, আর দুর্ঘটনা হলেই রাস্তায় লোক নেমে গাড়ি ভাঙা, গাড়িতে আগুন দেওয়া, গাড়ি পোড়ানো— এটা কী ধরনের কথা!
বুধবার (১ ডিসেম্বর) জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল উদ্বোধন ও জয়িতা টাওয়ারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনের এই অনুষ্ঠানে তিনি তার সরকারি বাসভবন গণভবন প্রান্ত থেকে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে যুক্ত হন।
আরও পড়ুন- ‘যারা বাসে আগুন দেবে, তাদেরও শাস্তি দেওয়া হবে’
অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমি একটি কথা বলব— সবাইকে লেখাপড়া করতে হবে। মা-বাবা-গার্জিয়ানের কথা মানতে হবে। আরেকটি বিষয় বলতে চাই, এটা সবার জন্য প্রযোজ্য— রাস্তাঘাটে চলার সময় সতর্ক থাকতে হবে। ট্রাফিক আইন মেনে চলতে হবে। এটা সবাইকেই করতে হবে।
সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানির পর বাস ভাঙচুর করা বা বাসে আগুন দেওয়ার বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, একটি দুর্ঘটনায় একজন মানুষ মারা গেছেন। তাকে বাঁচানোর চেষ্টা না করে, তার সেবা না করে লাঠিসোটা নিয়ে নেমে পড়া, গাড়ি ভাঙ্গা কিংবা গাড়িতে আগুন দেওয়া— এগুলো কীভাবে করা যায়?
এরকম ঘটনায় পাল্টা প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমি সমগ্র জাতির কাছে প্রশ্ন করছি— এই যে গাড়িতে আগুন দেওয়া হলো, ওই গাড়িতে কি যাত্রী নেই? ওই গাড়িতে কোনো শিশু নেই, শিক্ষার্থী নেই? ওই আগুনে যারা পুড়বে, আহত হবে বা কেউ তো মারাও যেতে পারে— তার দায়িত্ব কে নেবে?
তিনি বলেন, একটি গাড়িতে অ্যাকসিডেন্ট হলো বলে আরও ১৫টি গাড়ি ভাঙা এবং আগুন দেওয়ার ফলে গাড়িতে যাত্রী বা চালক-সহকারীদের যে হতাহত হতে হয়, সেই দায়িত্বটা কারা নেবে? যারা গাড়িটা ভাঙচুর করছে, খুব স্বাভাবিকভাবে দায়িত্বটা তাদের ওপর বর্তায়! তাহলে আইনশৃঙ্খলা সংস্থাকে তাদের বিষয়েও ব্যবস্থা নিতে হবে।
সড়কে সতর্কভাবে চলাচলের পরামর্শ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, কেউ আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না। ছাত্র-ছাত্রীদের বলব— হ্যাঁ, এখানে একজন ছাত্রের মৃত্যুটা অত্যন্ত দুঃখজনক। আর তাছাড়া সিটি করপোরেশনের গাড়ির রহস্যটা আমি বুঝলাম না। দক্ষিণে এক জন মারা গেল, পরের দিন আবার উত্তরে মারা গেল! এর কারণটা কী? সেটা খুঁজে বের করতে হবে। তবে তখন ময়লার যে গাড়ি যাচ্ছিল, সেই ময়লার গাড়ির সামনে দিয়ে কেউ হেঁটে যাবে কেন, সেটাও তো দেখতে হবে।
সরকার গাড়িচালকদের উন্নত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর পদক্ষেপ নিয়েছে বলে জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমাদের প্রচুর দক্ষ চালক দরকার। আমাদের সরকারি বাস আছে, বেসরকারি বাস আছে। সরকারি বাসে যারা ড্রাইভিং করে, তারা সবাই ট্রেনিং নিয়ে আসে। বেসরকারি বাসগুলোতে যারা গাড়ি চালায়, অবশ্যই তাদের ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।
তিনি বলেন, একইসঙ্গে এক জন মানুষ টানা কয় ঘণ্টা গাড়ি চালাতে পারে, সেটাও দেখতে হবে। তাকেও বিশ্রামের সময় দিতে হবে। এ জন্যই সরকার চালকদের জন্য হাইওয়েতে বিশ্রামাগারসহ উন্নত সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর ব্যবস্থা করছে।
আরও পড়ুন-
ডিএসসিসি’র গাড়ির ধাক্কায় নটর ডেম শিক্ষার্থী নিহত
বাস থেকে ধাক্কা দিয়ে ছাত্রীকে ফেলে দেওয়ার অভিযোগ
অনাবিলের চাপায় এসএসসি পরীক্ষার্থী নিহত, ৮ বাসে আগুন
মোটরসাইকেল আরোহী নিহত— এবার ঘাতক ডিএনসিসির ময়লার গাড়ি
সারাবাংলা/এনআর/টিআর
নিরাপদ সড়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সড়ক দুর্ঘটনা সড়ক পারাপার