সরকারি হাসপাতাল থেকে ভাগাত রোগী, ব্যবসা ছিল আইসিইউ
৭ জানুয়ারি ২০২২ ১৮:২৩
ঢাকা: অগ্রিম বিল পরিশোধ না করাকে কেন্দ্র করে হাসপাতাল থেকে যমজ শিশুকে বের করে দেওয়ার ঘটনায় এক শিশুর মৃত্যুর পর অভিযুক্ত হাসপাতালের মালিককে গ্রেফতার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ান (র্যাব)। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মালিক গোলাম সারওয়ার স্বীকার করে নিয়েছেন, বিভিন্ন কৌশলে সরকারি হাসপাতাল থেকে রোগী ভাগিয়ে আনতেন তারা। আর অনুমোদনহীন বাড়তি আইসিইউ বেড চালু রেখে সেখান থেকে সেটিকে পুঁজি করেই ব্যবসা চালিয়ে আসছেন।
শুক্রবার (৭ জানুয়ারি) বিকেলে কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে অনুষ্ঠিত এক ব্রিফিংয়ে র্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন গণমাধ্যমকে এসব তথ্য জানিয়েছেন।
এর আগে, শুক্রবার বিকেলে ‘আমার বাংলাদেশ হাসপাতাল’ নামে ওই হাসপাতালের মালিককে আটক করে র্যাব। এ ঘটনায় মোহাম্মদপুর থানায় যমজ শিশু দুইটির মায়ের দায়ের করা মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।
আরও পড়ুন- হাসপাতাল থেকে বের করে দেওয়ায় শিশুর মৃত্যু, মালিক আটক
ব্রিফিংয়ে র্যাব কমান্ডার বলেন, রাজধানীর শ্যামলীতে আমার বাংলাদেশ হাসপাতালে সম্পূর্ণ বিল পরিশোধ না করায় চিকিৎসাধীন যমজ শিশুকে জোর করে বের করে দেওয়ার ফলে জমজ এক ভাইয়ের মৃত্যু ও আরেক ভাইকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। নির্মম ও অমানবিক এ ঘটনা দেশব্যাপী ব্যাপক আলোড়ন ফেললে র্যাব তাৎক্ষণিকভাবে ঢামেক হাসপাতালে গিয়ে ভুক্তভোগী পরিবারের পাশে দাঁড়ায়। এ ঘটনায় মামলা দায়ের হলে র্যাব হাসপাতালের মালিক ও পরিচালককে ধরতে নজরদারি বাড়ায়।
পরে র্যাব সদর দফতরের গোয়েন্দা শাখা এবং র্যাব-২ ও র্যাব-৩-এর যৌথ অভিযানে শুক্রবার বিকেলে মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে আমার বাংলাদেশ হাসাপাতালের মালিক মোহাম্মদ গোলাম সরোয়ারকে গ্রেফতার করা হয়।
র্যাব কমান্ডার জানান, গ্রেফতার গোলাম সারওয়ারকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, গত ২০-২২ বছর ধরে রাজারবাগ, বাসাবো, মুগদা, মোহাম্মদপুর ও শ্যামলী এলাকায় বিভিন্ন হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক ব্যবসার সঙ্গে তিনি যুক্ত। গত প্রায় এক বছর ধরে তিনি শ্যামলীতে আমার বাংলাদেশ হাসপাতাল খুলে ব্যবসা শুরু করেন। এর আগের অভিজ্ঞতা থেকে তিনি বিভিন্ন হাসপাতালের সঙ্গে একটি দালাল সিন্ডিকেটও গড়ে তোলেন। এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বিভিন্ন সরকারি হাসপাতাল থেকে রোগীদের ফুঁসলিয়ে ওই হাসপাতালে তারা নিয়ে আসতেন।
গোলাম সারওয়ারকে জিজ্ঞাসাবাদে র্যাব আরও জানতে পারে, আমার বাংলাদেশ হাসপাতালে নানা ধরনের অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা রয়েছে। হাসপাতালে নিয়ম অনুযায়ী সার্বক্ষণিক তিন জন চিকিৎসক কর্তব্যরত থাকার কথা ছিল। কিন্তু সেখানে সার্বক্ষণিক এক জনের বেশি চিকিৎসক থাকতেন না। আবার হাসপাতালটিতে দুইটি আইসিইউ বেডসহ ৩০টি শয্যা থাকার কথা ছিল। কিন্তু হাসপাতালটি অনুমতির বাইরে আরও চারটি আইসিইউ শয্যা চালু রেখেছিল। এর মধ্যে দুইটিতে ভেন্টিলেশন সুবিধা রাখার কথা জানিয়েছেন গোলাম সারওয়ার। এর বাইরেও ৯টি নবজাতক আইসিইউ (এনআইসিইউ) থাকলেও ইনকিউবেটর ছিল একটি, ১৫টি ছিল সাধারণ শয্যা।
গোলাম সারওয়ারকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে র্যাব কমান্ডার বলেন, আমার বাংলাদেশ হাসপাতালে রোগী ভর্তি করতে বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে দালাল নিয়োগ করা আছে। মূলত আইসিইউকেন্দ্রিক ব্যবসার ফাঁদ তৈরি করে এই হাসপাতালিটি অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছিল।
বৃহস্পতিবারের ঘটনা প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গত ২ জানুয়ারি ওই দুই যমজ ভাইকে আমার বাংলাদেশ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর হাসপাতাল থেকে বিল পরিশোধের জন্য চাপ দেওয়া হয়। বলা হয়, বিল পরিশোধ না করলে চিকিৎসা দেওয়া হবে না। এর মধ্যে যমজ দুই ভাইয়ের মা আয়শা আক্তার ৪০ হাজার টাকা পরিশোধ করলেও হাসপাতাল থেকে আরও টাকা পরিশোধের জন্য চাপ দেওয়া হয়। সেই টাকা দিতে না পারলে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় যমজ দুই সন্তানসহ আয়শাকে হাসপাতাল থেকে বের করে দেওয়া হয়।
সারাবাংলা/ইউজে/টিআর