কারিগরি কমিটির ৪ সুপারিশে সমাবেশ বন্ধ, ভ্যাকসিন-স্ক্রিনিং জোরদার
৭ জানুয়ারি ২০২২ ২৩:২৯
ঢাকা: করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সব ধরনের সমাবেশ বন্ধ রাখা এবং ভ্যাকসিন প্রয়োগ ও স্ক্রিনিং কার্যক্রম জোরদার করাসহ চার দফা সুপারিশ করেছে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। সংক্রমণ বেড়ে গেলে পরিস্থিতি মোকাবিলায় হাসপাতালগুলোকে প্রস্তুতও রাখার কথাও বলা হয়েছে সুপারিশে।
শুক্রবার (৭ জানুয়ারি) কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ সহিদুল্লার সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই সুপারিশগুলোর কথা জানানো হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির ৫০তম সভায় এই চারটি সুপারিশ গৃহীত হয়েছে।
সুপারিশে পরামর্শক কমিটি বলছে, প্রতিবেশী দেশ ভারতসহ সারাবিশ্বে কোভিড-১৯-এর সংক্রমণ উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। আমাদের দেশেও সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী এবং সংক্রমণ আরও বাড়তে পারে বলে কমিটি মনে করছে। এ পরিস্থিতিতে সরকার এরই মধ্যে যেসব কর্মসূচি ঘোষণা করেছে, কারিগরি পরামর্শক কমিটি ওই সব কর্মসূচি বাস্তবায়নে গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলেছে। প্রয়োজনে এসব কর্মসূচির বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাসহ আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন- এক দিনে সংক্রমণ আরও বেড়ে ১১৪৬, শনাক্তের হার ছাড়াল ৫%
জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি সুপারিশে বলছে, শতভাগ সঠিকভাবে মাস্ক পরা নিশ্চিত করা, হাত পরিষ্কার রাখা ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করার জন্য সব ধরনের পদক্ষেপ নিতে হবে। বিভিন্ন স্থানে আবারও আগের মতো হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে বিয়ের অনুষ্ঠান বা মেলাসহ সব ধরনের সামাজিক, ধর্মীয় (যেমন— ওয়াজ মাহফিল) ও রাজনৈতিক সমাবেশ বন্ধ করতে হবে। সভা ও কর্মশালা অনলাইনে আয়োজন করতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতের পাশাপাশি সংক্রমণের বিষয়ে নিয়মিত নজরদারিতে পরামর্শক কমিটি গুরুত্বারোপ করেছে।
পরামর্শক কমিটির সুপারিশে বলা হয়েছে, শিক্ষার্থীসহ সবাইকে দ্রুত ভ্যাকসিনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। এছাড়া দেশের প্রবেশ পথগুলোতে (স্থল, নৌ ও বিমানবন্দর) স্ক্রিনিং স্ক্রিনিং, কোয়ারেনটাইন ও আইসোলেশন আরও জোরদার করতে হবে।
আরও পড়ুন- ৩ মাস পর ফের একদিনে নতুন সংক্রমণ হাজার ছাড়াল
সংক্রমণ বেড়ে গেলে করণীয় প্রসঙ্গে সুপারিশে বলা হয়েছে, পরিস্থিতি মোকাবিলায় হাসপাতালগুলোকে প্রস্তুত করতে হবে। বিশেষ করে পর্যাপ্ত সাধারণ ও আইসিইউ শয্যা এবং পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবাহের ব্যবস্থা রাখতে হবে।
গত কয়েকদিনের করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণেই মূলত নতুন করে উদ্বেগ ছড়িয়েছে দেশে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য বলছে, আজ শুক্রবার ও গতকাল বৃহস্পতিবার টানা দুই দিন দেশে ২৪ ঘণ্টার নতুন সংক্রমণ ছিল সহস্রাধিক। এর আগে সবশেষ গত ২৯ সেপ্টেম্বর দেশে ২৪ ঘণ্টায় সহস্রাধিক নতুন সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছিল।
আরও পড়ুন- করোনা নিয়ন্ত্রণে বিধিনিষেধের প্রজ্ঞাপন দুয়েক দিনের মধ্যেই
এদিকে, ওই সেপ্টেম্বরের পর থেকেই নমুনা পরীক্ষার বিপরীতেও করোনা সংক্রমণ শনাক্তের হার কমছিল। এটি ১ শতাংশের ঘরেও নেমে এসেছিল। কিন্তু স্বাস্থ্য অধিদফতরের শুক্রবারের কোভিড-১৯ সংক্রান্ত নিয়মিত বিজ্ঞপ্তির তথ্য বলছে, আগের ২৪ ঘণ্টার এই শনাক্তের হার ছিল ৫ শতাংশের বেশি। ২০ সেপ্টেম্বরের পর সাড়ে তিন মাসেরও বেশি সময়ের মধ্যে এই প্রথম শনাক্তের হার এত বেশি হলো।
বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ওমিক্রণ ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়াসহ দেশে সংক্রমণের হারের এই ঊর্ধ্বগতির কারণেই ফের সরকার নড়েচড়ে বসছে। এর মধ্যে গত সপ্তাহে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকও হয়েছে। ওই বৈঠকের পর স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, গণমাধ্যমে অর্ধেক আসনে যাত্রী পরিবহন, ভ্যাকসিন না নেওয়া থাকলে রেস্টুরেন্টে বসে খাওয়ার সুযোগ না দেওয়া, মার্কেট ও শপিং মল রাত ১০টার বদলে ৮টা পর্যন্ত খোলা রাখা, মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ নিশ্চিত করতে প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার মতো ব্যবস্থার কথা ভাবছে সরকার।
আরও পড়ুন- নতুন কোনো নির্বাচনের তফসিল না দেওয়ার অনুরোধ
স্বাস্থ্যমন্ত্রী শুরুতে জানান, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে ১৫ দিনের মধ্যেই এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি হতে পারে। পরদিনই অবশ্য মন্ত্রী জানান, এক সপ্তাহের মধ্যেই এসব ব্যবস্থা কার্যকরের ঘোষণা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারির অনুরোধ করা হয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে।
ফাইল ছবি
আরও পড়ুন-
- ভ্যাকসিন ছাড়া খাবার মিলবে না রেস্টুরেন্টে: স্বাস্থ্যমন্ত্রী
- সপ্তাহের ব্যবধানে সংক্রমণ দেড় গুণ, মৃত্যু বেড়েছে ৪০%
- গণপরিহনে অর্ধেক যাত্রী, ৮টা পর্যন্ত দোকান খোলা রাখার প্রস্তাব
- মাস্ক না পরলে জরিমানা, গণপরিবহনে কমতে পারে আসন সংখ্যা
সারাবাংলা/এসবি/টিআর
করোনা সংক্রমণ করোনাভাইরাস কোভিড-১৯ জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি সমাবেশ বন্ধের সুপারিশ