আইভী বনাম তৈমুর— নাসিকে ভোটযুদ্ধ শুরু
১৬ জানুয়ারি ২০২২ ০৮:১১
নারায়ণগঞ্জ: মাঘের সকাল। শীতের তীব্রতা নেহায়েত কম নয়। তবে নারায়ণগঞ্জে যেন শীত উধাও। ভোটযুদ্ধের আমেজ রীতিমতো নির্বাচনের গরম ছড়িয়ে দিয়েছে। সকাল ৮টায় ভোট শুরুর কথা থাকলেও আগে থেকেই ভোটকেন্দ্রের সামনে উপস্থিত হতে শুরু করেছে ভোটাররা। এর আগেই কেন্দ্রে কেন্দ্রে প্রস্তুত প্রিজাইডিং অফিসারসহ নির্বাচনি কর্মকর্তারা। ৮টা বাজতেই শুরু ভোটগ্রহণ। এখন কেবল জনরায়ের অপেক্ষা।
রোববার (১৬ জানুয়ারি) সকাল ৮টায় ভোট শুরু হয়েছে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচনে। চলবে একটানা বিকেল ৪টা পর্যন্ত। ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করে ভোট দেবেন ভোটাররা। দিন শেষে জানা যাবে কে হচ্ছেন নাসিকের মেয়র।
নৌকা প্রতীক নিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী কি টানা হ্যাটট্রিক জয়ে ফের বসবেন নাসিকের নগরপিতার আসনে? নাকি দল থেকে বহিষ্কৃত তৈমুর আলম খন্দকারকেই নগরপিতার আসনে স্থান দেবেন নারায়ণগঞ্জের জনতা? সেই প্রশ্নের উত্তর পেতে অপেক্ষা করতে হবে আরও কয়েক ঘণ্টা। তার আগে দেখে নেওয়া যাক এই নির্বাচনের বাকি তথ্যগুলো।
দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই সিটি করপোরেশনে এবার মেয়র পদে লড়ছেন সাত প্রার্থী। তারা হলেন— আওয়ামী লীগের ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী (নৌকা), খেলাফত মজলিসের এ বি এম সিরাজুল মামুন (দেয়াল ঘড়ি), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মাওলানা মোহাম্মদ মাছুম বিল্লাহ (হাত পাখা), বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন (বটগাছ), বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির মোহাম্মদ রাশেদ ফেরদৌস (হাত ঘড়ি) এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার (হাতি) ও কামরুল ইসলাম বাবু (ঘোড়া)। প্রার্থী সাত জন হলেও সবাই একমত— মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতাটা হবে আইভী আর তৈমুরের মধ্যেই।
এর বাইরে সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডে ৩৪ জন ও সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে ১৪৮ জন প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সব মিলিয়ে নাসিক নির্বাচনে মোট প্রার্থীর সংখ্যা ১৮৯ জন।
এই সিটিতে ২৭ ওয়ার্ডে ১৯২ কেন্দ্রের এক হাজার ৩৩৩ ভোটকক্ষে অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে মোট ভোটার পাঁচ লাখ ১৭ হাজার ৩৬১ জন। এর মধ্যে পুরুষ দুই লাখ ৫৯ হাজার ৮৪৬ জন, নারী ভোটার দুই লাখ ৫৭ হাজার ৫১১ জন। এছাড়া তৃতীয় লিঙ্গের ভোটারও রয়েছেন চার জন।
নাসিক সিটি নির্বাচনের প্রতিটি সাধারণ ভোটকেন্দ্রে ১৫ জন করে এবং গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ১৬ জন করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য সার্বক্ষণিকভাবে মোতায়েন থাকবেন। এছাড়াও পুরো নির্বাচনি এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিভিন্ন মোবাইল টিম ও স্ট্রাইকিং ফোর্স নিয়োগ করা হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনের তথ্য বলছে, সাধারণ ওয়ার্ডে একটি মোবাইল ফোর্স, তিনটি সাধারণ ওয়ার্ডে একটি স্ট্রাইকিং ফোর্স, সিটি করপোরেশনের নির্বাচনি এলাকার প্রতি থানায় একটি করে রিজার্ভ স্ট্রাইকিং ফোর্স রাখা হয়েছে। এছাড়াও দুইটি সাধারণ ওয়ার্ডে একটি করে র্যাবের টিম এবং প্রতি দুইটি সাধারণ ওয়ার্ডে এক প্লাটুন বিজিবিসহ মোট ১০ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।
দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নদীবন্দর নারায়ণগঞ্জ একসময় ‘প্রাচ্যের ড্যান্ডি’ নামে খ্যাত ছিল। ১৮৭৬ সালে পৌরসভা হিসেবে যাত্রা শুরু করা নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে উন্নীত হয় ২০১১ সালে। সেবারে দলীয় প্রতীক ছাড়া নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে শামীম ওসমান পেয়েছিলেন ৭৮ হাজার ৭০৫ ভোট। আর আওয়ামী লীগের সমর্থন চেয়ে না পেয়েও ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হিসেবে আইভী ১ লাখ ৮০ হাজার ৪৮ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন।
২০১৬ সালে এই সিটিতে ভোট হয় দলীয় প্রতীকে। সেবারে নৌকা নিয়ে আইভী ১ লাখ ৭৪ হাজার ৬০২ ভোট পেয়ে ফের মেয়র নির্বাচিত হন। সেবার তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপি নেতা আইনজীবী সাখাওয়াত হোসেন।
এবারে আইভীর মূল প্রতিদ্বন্দ্বী তৈমুর, যাকে তিনি চাচা বলেই ডাকেন। কেননা রাজনীতিতে আইভীর বাবা আহম্মেদ আলী চুনকার অনুসারী ছিলেন তৈমুর। সেই সুবাদে চাচা-ভাতিজির ভোটযুদ্ধে যে বিজয়ী হিসেবে শেষ হাসি হাসবেন— সেটি দেখার অপেক্ষাতেই তাকিয়ে আছে নারায়ণগঞ্জসহ দেশবাসী।
সারাবাংলা/টিআর
ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী তৈমুর আলম খন্দকার নারায়ণগঞ্জ সিটি রপোরেশন নাসিক নির্বাচন