ইউরোপের যেসব জায়গায় ন্যাটো বাহিনী মোতায়েন
২৫ জানুয়ারি ২০২২ ০৮:১৮
ইউক্রেনে সম্ভাব্য রুশ আগ্রাসন রুখতে পূর্ব ইউরোপে সামরিক শক্তি বাড়িয়েছে উত্তর আটলান্টিক নিরাপত্তা জোট-ন্যাটো। সোমবার (২৪ জানুয়ারি) ন্যাটোর মহাসচিব জেন্স স্টলটেনবার্গ এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানান।
আরও পড়ুন- রুশ আগ্রাসন মোকাবিলায় পূর্ব ইউরোপে শক্তি বাড়াচ্ছে ন্যাটো
বিবৃতিতে ন্যাটো প্রধান জানান, রাশিয়াকে নিবৃত্ত করতে বাল্টিক সাগরে একটি ফ্রিগেট রণতরী পাঠাচ্ছে ডেনমার্ক। এছাড়া ওই অঞ্চলে এফ-১৬ যুদ্ধবিমান মোতায়েন করছে লিথুয়ানিয়া। পূর্ব ইউরোপের দেশ বুলগেরিয়ায় ৪টি যুদ্ধবিমান পাঠাচ্ছে স্পেন। এছাড়া কৃষ্ণ সাগরে ন্যাটোর নৌবহরে আরও তিনটি রণতরী পাঠাচ্ছে দেশটি। বুলগেরিয়ায় দু’টি এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান পাঠাচ্ছে নেদারল্যান্ডস। পূর্ব ইউরোপের আরেক দেশ রোমানিয়ায় স্থল সেনা পাঠাচ্ছে ফ্রান্স।
ইউরোপের যেসব স্থানে ন্যাটো ইতিমধ্যে সেনা মোতায়েন করে রেখেছে তার চিত্র তুলে ধরেছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
বাল্টিক ও পোল্যান্ড
এস্টোনিয়া, লাটভিয়া ও লিথুয়ানিয়া তিনটি বাল্টিক দেশ এবং পোল্যান্ডে ন্যাটোর বহুজাতিক ব্যাটালিয়নে ৪ হাজার সেনা রয়েছে। এসব সেনাদের কাছে ট্যাঙ্ক অত্যাধুনিক এয়ার ডিফেন্স, ইন্টেলিজেন্স এবং সার্ভিল্যান্স ইউনিট রয়েছে।
ন্যাটো এসব ব্যাটালিয়নকে যুদ্ধের জন্য পূর্ণ প্রস্তুত বলে দাবি করেছে। ন্যাটো ক্ষুদ্র এসব সেনাদলকে রুশ সামরিক বাহিনীর আগ্রাসন মোকাবিলায় প্রাথমিক তথ্য প্রদানকারী ইউনিট হিসেবে মোতায়েন করেছে। রুশ সেনারা অনুপ্রবেশ করলে দ্রুত সেনা ও অস্ত্রশস্ত্র পাঠিয়ে এসব ইউনিটকে শক্তিশালী করবে ন্যাটো।
আরও পড়ুন- রুশ হামলার সম্ভাব্য তারিখ জানালেন ইউক্রেনের শীর্ষ জেনারেল
চারটি দেশে ন্যাটোর একটি এয়ার পুলিশিং মিশনও কাজ করছে। চার দেশের আকাশসীমায় সবসময় টহল দিচ্ছে এই মিশন। এছাড়া ন্যাটোর চারটি বহুজাতিক নৌবাহিনী রয়েছে যেগুলো বাল্টিক সাগর ও আন্তর্জাতিক জলসীমায় টহল দিচ্ছে।
রোমানিয়া, বুলগেরিয়া
রোমানিয়ায় ৪ হাজার বহুজাতিক সৈন্যের একটি স্থলবাহিনী রয়েছে ন্যাটোর। এ বাহিনীতে ফ্রান্স আরও সেনা পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে। এছাড়া রোমানিয়া ও বুলগেরিয়ার পৃথক ঘাঁটিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও সেনা মোতায়েন করেছে। বুলগেরিয়া ও রোমানিয়ার জাতীয় আকাশ টহল পুলিশ বিভাগের জন্য নিয়মিত সেনা সহায়তা পাঠায় ন্যাটো মিত্ররা।
ফ্রান্স
এ বছর থেকে জার্মানির সঙ্গে আকাশ, স্থল ও সমুদ্রে যৌথ একটি উচ্চ-প্রস্তুতিসম্পন্ন স্পিয়ারহেড ফোর্সের নেতৃত্ব দিচ্ছে ফ্রান্স। এ যৌথ বাহিনীর নাম দেওয়া হয়েছে উচ্চ প্রস্তুতিসম্পন্ন যুগ্ম টাস্কফোর্স। এ টাস্কফোর্সে ৫ হাজার সেনা রয়েছে যারা ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ইউরোপে যেকোনো যুদ্ধে যোগ দিতে সক্ষম। স্পেন, পর্তুগাল ও পোল্যান্ড এ টাস্কফোর্সে আরও সেনা পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। টাস্কফোর্সটি ন্যাটোর ৪০ হাজার সদস্যের শক্তিশালী প্রতিক্রিয়া বাহিনীর সবচেয়ে প্রস্তুত একটি শাখা।
ইউরোপে মার্কিন বাহিনী
মার্কিন কংগ্রেশনাল রিসার্চ সার্ভিসের মতে, ইউরোপে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ৭৪ হাজার সেনা অবস্থান করছে। অবশ্য সকল সেনা সক্রিয় বা কর্মরত নয়।
জার্মানিতে প্রায় ৩৬ হাজার মার্কিন সৈন্য অবস্থান করছে। এছাড়া ইতালিতে প্রায় ১২ হাজার, যুক্তরাজ্যে প্রায় ৯ হাজার, স্পেনে প্রায় ৩ হাজার, তুরস্কে প্রাত ১৬০০ মার্কিন সেনা অবস্থান করছে। প্রায় ৪৫০০ সেনাকে যুক্তরাষ্ট্র পোল্যান্ডে অস্থায়ী মোতায়েন করেছে। প্রয়োজন পড়লে এসব সেনাদের ন্যাটোর পক্ষে মোতায়েন করতে পারে ওয়াশিংটন।
বলকান
শান্তিরক্ষী বাহিনী হিসেবে বলকান দেশ কসোভোতে প্রায় ৩৫০০ সেনা রয়েছে ন্যাটোর। এছাড়া বলকান দেশগুলোর আকাশ প্রতিরক্ষার জন্যও সহায়তা দিয়ে থাকে ন্যাটো মিত্ররা। স্লোভেনিয়ার আকাশ সুরক্ষা দিয়ে থাকে হাঙ্গেরি ও ইতালি। এছাড়া আলবেনিয়া ও মন্টেনেগ্রোর আকাশের সুরক্ষা দেয় গ্রিস ও ইতালি। নর্থ মেসিডোনিয়ার আকাশেও টহল দেয় ইতালি।
ভূমধ্যসাগর
সি গার্ডিয়ান নামে ন্যাটোর একটি নৌ মিশন রয়েছে। এ মিশন ভূমধ্যসাগরে টহল দেয়। মিশনটি সমুদ্রে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানকে সহায়তা করে। ন্যাটো জোট প্রয়োজনে এই মিশনটিকে যুদ্ধে ব্যবহার করতে পারে। এছাড়া ভূমধ্যসাগরে অবাধ জাহাজ চলাচলে এই মিশন ন্যাটো মিত্রদের সহায়তা করতে পারে।
আরও পড়ুন
- ইউক্রেনে অস্ত্র পাঠানোর ঘোষণা বাল্টিক দেশগুলোর
- রুশ আগ্রাসন মোকাবিলায় ইউক্রেনে অস্ত্র পাঠিয়েছে আমেরিকা
- চীন-তাইওয়ান, রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত— ২ ফ্রন্টে যুদ্ধ করবে আমেরিকা?
সারাবাংলা/আইই
ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাত উত্তর আটলান্টিক নিরাপত্তা জোট-ন্যাটো ন্যাটো