রাশিয়ার পাঁচ ব্যাংক ও তিন ব্যক্তির উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাজ্য। মঙ্গলবার (২২ ফেব্রুয়ারি) ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন পার্লামেন্টে এ ঘোষণা দেন। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনের দু’টি অঞ্চলকে স্বাধীন হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার পরদিনই এ সিদ্ধান্ত নিলো যুক্তরাজ্য।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী রাশিয়াকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ইউক্রেন ইস্যুতে এ নিষেধাজ্ঞা কেবল ধারাবাহিক প্রতিক্রিয়ার শুরু, শিগগিরই রাশিয়ার উপর আরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে তার দেশ।
মঙ্গলবার ব্রিটিশ পার্লামেন্টে বরিস জনসন বলেন, নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসা পাঁচটি রুশ ব্যাংক হলো—রাসিয়া, আইএস ব্যাংক, জেনব্যাংক, প্রমসভিয়াজ ব্যাংক এবং ব্ল্যাক সি ব্যাংক। এছাড়া তিন ব্যক্তি হলেন, টিমচেনকো, ইগর রোটেনবার্গ এবং বরিস রোটেনবার্গ।
তিনি বলেন, যুক্তরাজ্যে এসব ব্যক্তি ও ব্যাংকের যেকোনো সম্পদ জব্দ করা হবে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের যুক্তরাজ্য ভ্রমণও নিষিদ্ধ করা হবে।
আরও পড়ুন-
- যুদ্ধের মুখে জ্বালানির বাজারে অস্থিরতা
- রুশ সেনাদের পূর্ব ইউক্রেনে প্রবেশের হুকুম দিলেন পুতিন
- ইউক্রেনের দোনেস্ক-লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি রাশিয়ার
- দোনেস্ক ও লুহানস্ককে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিতে রাশিয়ার আহ্বান
- ইউক্রেন সংকট: আলোচনার মাধ্যমে মতপার্থক্য দূর করার আহ্বান চীনের
যুক্তরাজ্য সরকারের দাবি, গুনভর ট্রেডিং কোম্পানির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা টিমচেনকো ব্যাংক রসিয়ারও একজন প্রধান অংশীদার। এছাড়া তিনি ন্যাশনাল মিডিয়া গ্রুপের মালিকদের একজন। ওই মিডিয়া গ্রুপ ২০১৪ সালে রাশিয়া ক্রিমিয়া দখলের পর ইউক্রেনের অস্থিতিশীলতায় সমর্থন যুগিয়েছিল।
যুক্তরাজ্যে জানিয়েছে, রুশ নাগরিক বরিস রোটেনবার্গ একজন বিশিষ্ট রুশ ব্যবসায়ী। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিগত সম্পর্ক রয়েছে। ইগর রোটেনবার্গ আরেক বিশিষ্ট ব্যবসায়ী যার সঙ্গে প্রেসিডেন্ট পুতিনের ঘনিষ্ঠ পারিবারিক সম্পর্ক রয়েছে।
এর আগে মার্কিন ট্রেজারিও রোটেনবার্গদের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের প্রভাব কাজে লাগিয়ে তারা বিত্তশালী হয়েছিলেন বলে দাবি যুক্তরাষ্ট্রের।
ইউক্রেনে পূর্ণ মাত্রায় আগ্রাসন করা হবে না বলে এতদিন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন মিথ্যাচার করেছেন বলে অভিযোগ তুলে বরিস জনসন পার্লামেন্টে বলেন, বিশ্ব-সম্প্রদায়ে রাশিয়া অন্ত্যজ মর্যাদার রাষ্ট্রে পরিণত হচ্ছে। বিশ্বকে এখন পুতিনের পরিকল্পনার পরবর্তী পর্যায়ের জন্য প্রস্তুত হতে হবে।
গত বছর ধরে ইউক্রেন সীমান্তে রুশ সৈন্য সমাবেশের পর থেকেই আমেরিকাসহ পশ্চিমা দেশগুলো দাবি করে আসছে রাশিয়া যেকোনো সময় ইউক্রেনে হামলা চালাবে। যদিও বরাবরই প্রতিবেশী রাষ্ট্রে হামলা করার পরিকল্পনা নেই বলে দাবি করে আসছে ক্রেমলিন। তবে ইউক্রেন যেন কখনই ন্যাটোতে যোগদান না করে—সেই নিশ্চয়তাও পশ্চিমাদের কাছে চায় রাশিয়া।
এর আগে ২০১৪ সালে ইউক্রেনের ক্রিমিয়া অঞ্চল নিজেদের দখল নেয় রাশিয়া। এ কাজে রুশপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ব্যবহার করে মস্কো।
ইউক্রেন ভূখণ্ডে মঙ্গলবার রাতে ফের প্রবেশ করল রুশ সেনারা। ওইদিন রাতে প্রেসিডেন্ট পুতিন ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের বিচ্ছিন্নতাবাদী দোনেস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি প্রদান করেন। ইউক্রেনের দুটি অঞ্চলের স্বাধীনতা স্বীকৃতি দেওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর পূর্ব ইউক্রেনের বিচ্ছিন্নতাবাদী অঞ্চলে শান্তি বজায় রাখার জন্য তার বাহিনীকে নির্দেশ দেন পুতিন। তিনি এই দু’টি এলাকায় শান্তি রক্ষার কার্যক্রমের জন্য রুশ সৈন্য প্রেরণের জন্য একটি ফরমানে সই করেন। তার এ নির্দেশ ইউক্রেনে রুশ আক্রমণের সূচনা বলে আশঙ্কা করছে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা শক্তি। রাশিয়ার এমন পদক্ষেপের জবাবে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপের হুমকি দিয়েছে পশ্চিমা শক্তি।
আরও পড়ুন