‘অন্ধজনে দেহো আলো’
১১ মার্চ ২০২২ ২৩:১৪
ঢাকা: রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থী তরিকুল ইসলাম নাজিম। তিনি চোখে দেখতে পান না। বইমেলার স্পর্শ ব্রেইল প্রকাশনীর স্টলে বসে আছেন তিনি। ব্রেইল পদ্ধতির বই সম্বন্ধে উৎসাহীদের জানাচ্ছেন। নিজে পড়ছেন।
শুক্রবার (১১ মার্চ) বইমেলার বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গনে স্পর্শ ব্রেইল প্রকাশনীর স্টলে গিয়ে এই চিত্রের দেখা মেলে। শুধু নাজিমই নন, সেখানে তার মতো আরও বেশ কয়েকজন আছেন সেখানে।
গত ১৫ বছর ধরে দৃষ্টিহীনদের বইয়ের আলোয় আলোকিত করতে কাজ করে যাচ্ছে স্পর্শ ব্রেইল প্রকাশনী। বইমেলার বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণের বহির্গমন ফটকের পাশেই আছে তাদের স্টল। এই প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানটি মূলত স্পর্শ ফাউন্ডেশনের একটি অঙ্গপ্রতিষ্ঠান।
বর্তমানে এই প্রকাশনী ব্রেইল পদ্ধতিতে প্রকাশ করেছে ১০০টি। পাঠ্যপুস্তকের বাইরে, বিশেষত সাহিত্যের বইগুলো ব্রেইল পদ্ধতিতে প্রকাশ করে যাচ্ছে স্পর্শ ব্রেইল প্রকাশনী। জাফর ইকবাল, সেলিনা হোসেন, লুৎফর রহমান লিটনসহ প্রতিথযশা লেখকদের বই ব্রেইল পদ্ধতিতে করে বিনামূল্যে বিতরণ করে প্রতিষ্ঠানটি।
স্টলে থাকা তরিকুল ইসলাম নাজিম সারাবাংলাকে বলেন, ‘যারা ভিজুয়ালি চ্যালেঞ্জড, তাদের জ্ঞানের আলোয় উদ্ভাসিত করাই স্পর্শ ব্রেইলের উদ্দেশ্য। বইমেলায় আমরা যুক্ত হয়েছি ২০১১ সাল থেকে। আমি নিজে ব্যক্তিগতভাবে ফাউন্ডেশনের সঙ্গে যুক্ত আছি ২০১৯ সাল থেকে।’
নাজিম জানান, স্পর্শ ব্রেইলের স্টলে কোনো বই বিক্রয় করা হয় না। চ্যালেঞ্জড কেউ নিতে চাইলে রেজিস্ট্রেশন সাপেক্ষে বিনামূল্যেই বই দেওয়া হয়।
২০১১ সালে বইমেলায় যুক্ত হয় স্পর্শ ব্রেইল প্রকাশনী। নাজিম আশা করেন, বইমেলার প্রতিটি স্টলে অন্তত একটি করে হলেও ব্রেইল পদ্ধতির বই থাকবে।
ব্রেইল পদ্ধতি হলো স্পর্শ ভিত্তিক পদ্ধতি পঠনপদ্ধতি। এর মাধ্যমে দৃষ্টিহীন ব্যক্তিরা বই পাঠ করতে পারেন। বর্ণকে সাংকেতিক চিহ্নে পরিণত করে এই পদ্ধতিটি কাজ করে।
ব্রেইলের গঠন হল আয়তাকার প্লেটের মতো। এর উপরে রয়েছে দু’টি সারিবিশিষ্ট একটি বিশেষ উপকরণ। প্রতিটি সারিতে রয়েছে একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক ব্রেইল কোশ। প্রতিটি কোশে ৬টি বিন্দু থাকে। বিন্দু বা ডটগুলো বিন্যাসের একটি নিজস্ব পদ্ধতি আছে। ডটগুলো বিভিন্ন ভাবে সাজিয়ে বিভিন্ন বর্ণ তৈরি করা হয়েছে। এ ছাড়া থাকে স্টাইলাস, যেটি দিয়ে চাপ দিলে নিচে রাখা শক্ত কাগজ চাপের ফলে গর্ত হয়ে যায়। এভাবে সাংকেতিক পদ্ধতিতে কাজ করে এই পদ্ধতি।
উদ্যোক্তার কথা
স্পর্শ ব্রেইল প্রকাশনের উদ্যোক্তা নাজিয়া জাবীন সারাবাংলাকে বলেন, ‘একটি বই দিয়ে আমরা শুরু করেছিলাম। এবারের বইমেলায় আমরা শততম বইটি ব্রেইল পদ্ধতিতে প্রকাশ করতে পেরেছি। এটা অনেক আনন্দের। যারা বই পড়তে চায়, কিন্তু পারে না, তাদের জন্য কিছু করাটা অবশ্যই আনন্দের।’
প্রকাশকদের নিকট অন্তত একটি করে বই ব্রেইল পদ্ধতিতে রূপান্তর করে স্টলে রাখার অনুরোধ করে নাজিয়া জাবীন বলেন, ‘যারা প্রকাশক আছেন, তারা যদি প্রতিবার একটি করে হলেও বই ব্রেইল পদ্ধতিতে রূপান্তর করেন, আমাদের দেন, তাইলেও কিন্তু অনেক বড় একটি কাজ হয়। অন্তত বড় বড় প্যাভিলয়ন যেসব প্রকাশনা সংস্থা নেয়, তারাও তো করতে পারেন কাজটা।’
দৃষ্টিহীনদের আত্মবিশ্বাস যোগাতে লেখকদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘অনেক লেখক বই দিতে চান না, ব্রেইল পদ্ধতিতে প্রকাশের জন্য অনুমতি দেন না। আমরা বলতে চাই, কোনো ব্যবসায়িক উদ্দেশে তো আমরা এটা করছি না। আপনারা যদি অনুমতি দেন, সেক্ষেত্রে আমরা কাজটা করতে পারি। এতে করে দৃষ্টিহীনরা আরও বেশি উৎসাহ পাবে। তাদের আত্মবিশ্বাস আরও বাড়বে।’
সারাবাংলা/আরআইআর/এমও
অমর একুশে বইমেলা ২০২২ বইমেলা ব্রেইল পদ্ধতি স্পর্শ ব্রেইল প্রকাশনী