অনাস্থা ভোটে ইমরান খানের প্রধানমন্ত্রিত্ব হারানোর পাকিস্তান সংসদে শুরু হয়েছে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের কার্যক্রম। এর ঠিক আগ মুহূর্তেই সংসদ থেকে পদত্যাগ করেছেন ইমরান খানের পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) সব সংসদ সদস্য।
গণপদত্যাগের পর তারা সংসদ অধিবেশে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের কার্যক্রম শুরু হওয়ার আগেই ওয়াক আউট করেছেন। ফলে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনে বিরোধী দল পাকিস্তান মুসলিম লীগের (নওয়াজ) প্রেসিডেন্ট শাহবাজ শরীফের জয় পাওয়া এখন সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সোমবার (১১ এপ্রিল) কুরআন থেকে তেলওয়াতের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের উদ্দেশ্যে পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের অধিবেশন শুরু হয়। পরিষদের স্পিকার আসাদ কায়সারের পদত্যাগের পর ডেপুটি স্পিকার কাসিম সুরির সভাপতিত্বে অধিবেশনের কার্যক্রম শুরুর কথা ছিল।
দ্য ডনের খবরে বলা হয়েছে, এর আগে ইমরানের বিরুদ্ধে আনীত অনাস্থা প্রস্তাব খারিজ করে দেওয়ার পর সেই প্রস্তাবটি আদালতের রায়ে সংসদে ফের উত্থাপন হওয়ায় কাসিম সুরি অধিবেশন চালিয়ে যেতে অস্বীকৃতি জানান। এ পর্যায়ে অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন পিএমএল-এন’র আয়াজ সাদিক।
আরও পড়ুন-
- ইমরানের ডাকে ব্যাপক বিক্ষোভ
- প্রধানমন্ত্রিত্বের দৌড়ে এগিয়ে শাহবাজ
- অনাস্থা ভোটে প্রধানমন্ত্রিত্ব হারালেন ইমরান
- পাকিস্তানের নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন সোমবার
- পার্লামেন্ট থেকে পদত্যাগ করবেন পিটিআই সদস্যরা
- পাকিস্তানের কোনো প্রধানমন্ত্রীই শেষ করতে পারেননি মেয়াদ
- প্রধানমন্ত্রী পদে ইমরানের মনোনয়ন কুরেশিকে, বিরোধীদের শেহবাজ
প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনে শাহবাজ শরিফের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ইমরান খানের দলের নেতা শাহ মাহমুদ কুরেশি। তবে দলটির সদস্যরা সংসদ থেকে গণপদত্যাগ করায় শাহবাজই পাকিস্তানের নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনে জয় পেতে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছে ডন।
এর আগে, সংসদে অনাস্থা ভোটে হেরে যাওয়ার পর ইমরান খান রোববার (১০ এপ্রিল) জানান, সংসদ থেকে তার দলের সদস্যরা পদত্যাগ করতে পারেন। এ মত নিয়ে অবশ্য দলের মধ্যে দ্বিধাবিভক্তি ছিল। শেষ পর্যন্ত সোমবার সকালে পিটিআইয়ের পার্লামেন্টারি কমিটির সভায় পদত্যাগের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর পদে থাকা ইমরান খান ও তার নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের বিরুদ্ধে গত ৭ মার্চ অনাস্থা প্রস্তাব আনে বিরোধী দলগুলো। পরে সরকারের শরিক দল মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্টে (এমকিউএম) বিরোধী শিবিরে যোগ দিলে জাতীয় পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারায় ইমরান সরকার। এ ক্ষেত্রে অনাস্থা ভোটে তিনি হেরে যাবেন এবং প্রধানমন্ত্রিত্ব হারাবেন— এরকমই অনুমান করছিলেন সবাই।
গত ২৫ মার্চ অনাস্থা প্রস্তাবটি সংসদে উত্থাপন করেন স্পিকার আসাদ কায়সার। নিয়ম অনুযায়ী প্রস্তাব উত্থাপনের ১০ দিন তথা ৩ এপ্রিলের মধ্যে অনাস্থা প্রস্তাবটি ভোটে পাঠানোর কথা ছিল। সে অনুযায়ী ৩ এপ্রিলের সংসদের কার্যক্রমে অনাস্থা প্রস্তাবটি ভোটে ওঠারও কথা ছিল। কিন্তু সেদিন অধিবেশন শুরুর পর কাসিম সুরি সেটি খারিজ করে দেন। পরে ইমরান খানের পরামর্শে সংসদ ভেঙে দেন প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি।
পরে পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট এক রায়ে ডেপুটি স্পিকার কাসিম সুরির ৩ এপ্রিলের আদেশ অবৈধ ঘোষণা করেন। প্রেসিডেন্টের ভেঙে দেওয়া সংসদও পুনর্বহাল করেন। একইসঙ্গে আদালত শনিবার (৯ এপ্রিল) ইমরান খানের ব্যাপারে অনাস্থা প্রস্তাবের ওপর সংসদে ফের ভোটাভুটিরও নির্দেশ দেন।
আদালতের নির্দেশে শনিবার মধ্যরাত পেরিয়ে বসে সংসদ অধিবেশন। এর মধ্যে স্পিকার আসাদ কায়সার পদত্যাগ করেন। ডেপুটি স্পিকারও অনুপস্থিত থাকায় বিরোধী দল পিএমএল-এন’র নেতা আয়াজ সাদিকের সভাপতিত্বে ৩৪২ আসনের সংসদের ১৭৪ জন সদস্য ইমরান খানের বিরুদ্ধে ভোট দেন। তাতে প্রধানমন্ত্রিত্ব হারান ইমরান খান।
অনাস্থা প্রস্তাবের ভোটাভুটির পর আয়াজ সাদিক ঘোষণা দেন, সোমবার নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করতে ভোট হবে সংসদে। তিনি রোববারের (১০ এপ্রিল) স্থানীয় সময় সকাল ১১টার মধ্যে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দিতে বলেন। শাহবাজ শরিফের পাশাপাশি শাহ মাহমুদ কুরেশি এই পদে মনোনয়নপত্র জমা দেন।
আরও পড়ুন-
- পাকিস্তানে গণতন্ত্রের মৃত্যু
- শাহবাজকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা
- সংকট মোকাবিলায় ইমরানের সামনে যেসব পথ
- পাকিস্তানে পার্লামেন্ট পুনর্বহাল, শনিবার ফের আস্থা ভোট
- ‘রাষ্ট্রীয় নীতি নয়, ডেপুটি স্পিকারের সিদ্ধান্তে রায় দেবে আদালত’
- সংসদ ভেঙে দিলেন প্রেসিডেন্ট, আগাম নির্বাচনের পথে পাকিস্তান
- অনাস্থা প্রস্তাব খারিজ, পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার পরামর্শ ইমরানের
- তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে গুলজার আহমেদকে ইমরানের মনোনয়ন