এপ্রিলে বাড়ি যেতে চেয়েছিলেন মুহিত, এপ্রিলেই ‘ফিরছেন’ বাড়িতে
৩০ এপ্রিল ২০২২ ১১:৫৯
ঢাকা: বয়স ৮৮ বছর। আক্রান্ত নানা ধরনের শারীরিক জটিলতায়। এর মধ্যেই বেশ অনেকদিন ধরেই আবুল মাল আবদুল মুহিত তার পরিবারের সদস্যদের বলে আসছেন, এপ্রিল মাসে তিনি বাড়ি যাবেন। বাবার জন্মদিন পালন করবেন। বাবার জন্মদিন জুনে— এ কথা মনে করিয়ে দিলেও নিজের অবস্থানে অনড় থাকেন তিনি। ভাইদের বলেন, তারাও যেন এপ্রিল মাসেই তার সঙ্গে বাড়ি যান।
সেই এপ্রিল মাসের শেষ দিনেই বাড়ি ফিরছেন আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। আর এবার যে যাচ্ছেন, আর কখনো বাড়ি ছাড়তে হবে না তাকে। না ফেরার দেশে পাড়ি জমানো মুহিত সমাহিত হবেন পারিবারিক কবরস্থানে, মা-বাবা আর দাদা-দাদির কবরের পাশে।
শনিবার (৩০ এপ্রিল) গুলশান কেন্দ্রীয় মসজিদে (আজাদ মসজিদ) মুহিতের জানাজার সময় এ কথা জানিয়েছেন তার ছোট ভাই সাবেক সচিব ড. এ কে আবদুল মুবিন। ভাইয়ের এপ্রিলে সবাইকে নিয়ে বাড়ি ফেরার ইচ্ছার কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
আরও পড়ুন-
- মুহিতের প্রথম জানাজা সম্পন্ন
- সাবেক অর্থমন্ত্রী মুহিতের মৃত্যুতে শোক
- সাবেক অর্থমন্ত্রী আবদুল মুহিত আর নেই
- সদ্যপ্রয়াত মুহিতের দখলে বাজেট উত্থাপনের ২ রেকর্ড
- আমলা থেকে রাজনীতিবিদ-অর্থমন্ত্রী— বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ার মুহিতের
- ‘প্রস্তুতি না থাকায় মুহিতের মরদেহ নেওয়া হচ্ছে না জাতীয় সংসদে’
ড. এ কে আবদুল মুবিন বলেন, ভাই অসুস্থ থাকাকালীন প্রায়ই বলতেন, ‘আমি এপ্রিলে বাড়ি যাব। তোমরা সবাই আমার সঙ্গে বাড়ি যাবে। বাড়ি গিয়ে আমি বাবার জন্মদিন পালন করব।’
এ কথা শুনে অবাক হতেন মুহিতের ভাইয়েরা। ড. মুবিন বলেন, আমরা ভাইকে বলেছি— ‘বাবার জন্মদিন তো জুনে। এপ্রিলে কেন তার জন্মদিন পালন করবে?’ তারপরও তিনি বারবার বলতেন, আমি এপ্রিলেই বাড়ি যাব। তোমরা আমার সঙ্গে যেও।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে ড. মুবিন বলেন, ‘আমরা তখন বুঝতে পারিনি, তিনি হয়তো বুঝতে পেরেছিলেন। তিনি হয়তো বুঝে গিয়েছিলেন— এপ্রিল মাসেই তিনি পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করবেন। ঠিক ঠিক সেই এপ্রিল মাসেই তিনি বাড়ি ফিরে চলেছেন।’
মুহিতের পরিবার জানিয়েছে, হেলিকপ্টারের বদলে ফ্রিজিং ভ্যানে করে সড়কপথেই ঢাকা থেকে সিলেটে নেওয়া হবে তার মরদেহ। হেলিকপ্টারে না নিয়ে সড়কপথে কেন নেওয়া হচ্ছে মরদেহ— সে প্রশ্নেরও জবাব দিলেন ড. মুবিন।
তিনি বলেন, ভাই তো এপ্রিলে বাড়ি যেতে চেয়েছিলেন। আমাদের সবাইকে তার সঙ্গে যেতে বলেছিলেন। আমরা সবাই ভাইয়ের সঙ্গে থেকেই তাকে বাড়িয়ে নিয়ে যেতে চাই। সে কারণেই হেলিকপ্টারে না নিয়ে আমরা সড়কপথে তার মরদেহ নিয়ে যাচ্ছি।
সিলেটের রায়নগরের সাহেব বাড়িতে পারিবারিক কবরস্থান রয়েছে মুহিত পরিবারের। রোববার (১ মে) বাদ জোহর জানাজার পর সেখানে দাফন করা হবে মুহিতের মরদেহ।
ড. মুবিন বলেন, ভাই বলতেন— ‘আমরা মারা যাওয়ার পর তোমরা সবাই আমার লাশ দ্রুত সিলেট নিয়ে যেও। তোমরা আমার সঙ্গে যেও। আমার মা-বাবা, দাদা-দাদির কবরের পাশে আমাকে দাফন করবে। কারও জন্য অপেক্ষা করার প্রয়োজন নেই। যত দ্রুতসম্ভব দাফন করবে।’ তাই পারিবারিক কবরস্থানেই তাকে দাফন করা হবে।
তবে সিলেটে কোথায় মুহিতের জানাজা হবে, সেটি নির্ধারণ করা হয়নি এখনো। পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, সিলেটের স্থানীয় নেতারা সেখানকার জানাজার স্থান নির্ধারণ করবেন। তবে সেখানে বাদ জোহর জানাজা হবে তার। তার মরদেহ সিলেটের কোথায় রাখা হবে, সেটিও সিলেটের নেতারাই নির্ধারণ করবেন।
গুলশানের কেন্দ্রীয় মসজিদে (আজাদ মসজিদ) সকাল ১১টা ৬ মিনিটে আবুল মাল আবদুল মুহিতের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে তার মরদেহটি নিয়ে যাওয়া হয় কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে। সব শ্রেণিপেশার মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য মরদেহটি রাখা হবে সেখানে। এরপরই মরদেহ নিয়ে সিলেটের পথে রওনা হবেন পরিবারের সদস্যরা।
জানাজায় মুহিত পরিবারের সদস্যদের মধ্যে আবুল মাল আবদুল মুহিতের ছোট ভাই ড. এ কে আবদুল মুবিন, ড. এ কে আবদুল মোমেন, সুজন মুহিত এবং বড় ছেলে শাহেদ মুহিত উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জমানসহ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিরা জানাজায় অংশ নেন।
সারাবাংলা/জিএস/টিআর