নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগ: মেয়াদ শেষ নভেম্বরে, নেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি!
১৪ মে ২০২২ ২২:২৩
ঢাকা: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে কৌশল-কর্মসূচি নির্ধারণে দীর্ঘ আড়াই বছর পর গত ৭ মে কার্যনির্বাহী পরিষদের পূর্ণাঙ্গ কমিটিকে নিয়ে বৈঠক করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। বৈঠকে দলটির জাতীয় সম্মেলন এবং মেয়াদোত্তীর্ণ সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণসহ গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেই ধারাবাহিকতায় পরবর্তী সময়ে দলের সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে মূল দল ও সহযোগী সংগঠনগুলোকে নির্বাহী পরিষদের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সেই ধারাবাহিকতায় মূলদলসহ আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ, ছাত্রলীগসহ অন্যান্য সংগঠনও কেন্দ্রীয় সম্মেলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এদিকে, দুই বছরের বেশি সময় আগে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক লীগের আংশিক কমিটি (শুধুমাত্র সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক) হলেও এখনও গঠিত হয়নি পূর্ণাঙ্গ কমিটি। অথচ কমিটির তিন বছর মেয়াদ প্রায় শেষের পথে।
পৃথিবীর কক্ষপথে উত্তর ও দক্ষিণ মেরুর কোনো মিল পাওয়া না গেলেও মিল পাওয়া গেছে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক লীগের মধ্যে। তিন বছর মেয়াদী কমিটির মেয়াদ শেষ হতে চললেও কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে পারেনি দুই ইউনিটের কোনোটিই। আজ হবে, কাল হবে করে পেরিয়ে যাচ্ছে তিন বছর। এ অবস্থায় নতুন সম্মেলনের আগে পূর্ণাঙ্গ কমিটি আদৌ দেওয়া হবে কি না তাই নিয়ে সংশয়ে নেতাকর্মীরা।
তবে নেতারা বলছেন, করোনার কারণে পিছিয়ে গিয়েছে কমিটি পূর্ণাঙ্গ হওয়ার প্রক্রিয়া। করোনাকালে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের চেয়ে মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সামাজিক কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত ছিলেন সংগঠনের নেতাকর্মীরা। সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় শিগগিরই কমিটি পূর্ণাঙ্গের আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
জানা যায়, নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী লোককে পদ দেওয়া নিয়ে আটকে আছে স্বেচ্ছাসেবক লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি। জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে নিজের পছন্দের লোক দিয়ে কমিটি তৈরি করা বড় ব্যাপার না কি দলকে শক্তিশালী করা বড় ব্যাপার- এই প্রশ্ন এখন সংগঠনটির নেতাকর্মীদের মাঝে।
এদিকে নাজুক অবস্থায় রয়েছে ঢাকা মহানগরের থানা-ওয়ার্ড কমিটিগুলোতেও। দুই শাখার প্রায় সবগুলো থানা-ওয়ার্ড কমিটিই মেয়াদোত্তীর্ণ। সম্মেলন না হওয়ার অগোছালো অবস্থায় রয়েছে সংগঠনের তৃণমূল।
স্বেচ্ছাসেবক লীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণ-উত্তর শাখার সর্বশেষ সম্মেলন ২০১৯ সালের ১১ ও ১২ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হয়। ১৬ নভেম্বর আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের নতুন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব নির্বাচনের পাশাপাশি ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখায়ও নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করা হয়।
উত্তর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মনোনীত হন ইসহাক মিয়া ও সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান নাঈম। দক্ষিণের সভাপতি পদে মনোনীত হন কামরুল হাসান রিপন এবং সাধারণ সম্পাদক হন তারিক সাঈদ। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তিন বছর মেয়াদী এই কমিটি দুই বছরের বেশি সময় পার করলেও এখনো পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে পারেনি। এতে সংগঠনের পদপ্রত্যাশী নেতারা হতাশ হয়ে পড়েছেন।
কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার বিষয়ে মহানগর দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি কামরুল হাসান রিপন সারাবাংলাকে বলেন, ‘এক বছর আগে কমিটি পূর্ণাঙ্গ করে কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা যেদিন চাইবেন সেদিনই কমিটি পূর্ণাঙ্গ হবে।’
তবে কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের দফতর সম্পাদক আজিজুল হক আজিজ সারাবাংলাকে বলেন, ‘উত্তর স্বেচ্ছাসেবক লীগের খসড়া কমিটি ইতোমধ্যে জমা হয়েছে। তবে দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক লীগের খসড়া কমিটি এখনো জমা হয়নি। আশা করি সেটিও আমরা হাতে পাব। দ্রুতই পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেওয়া হবে বলে আশা করছি।’
উত্তর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ইসহাক মিয়া সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে খসড়া কমিটি জমা দিয়েছি। করোনার কারণেই আসলে একটু বিলম্ব হয়েছে। শিগগিরই কমিটি পূর্ণাঙ্গ হবে।’
উত্তর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান নাঈম সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা আমাদের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ আন্তরিক। খসড়া কমিটি জমা দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক বাকি সিদ্ধান্ত নিয়ে কমিটি প্রকাশ করবেন দ্রুতই।’
এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি নির্মল রঞ্জন গুহ সারাবাংলাকে বলেন, ‘করোনার কারণে অনেকদিন আমাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ ছিল। আমরা তখন সামাজিক কর্মকাণ্ডের দিকে নজর দিয়েছিলাম। করোনাকালে আমাদের সংগঠনের নেতাকর্মীরা ঝাঁপিয়ে পড়ে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। সেজন্য পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে দেরি হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে উত্তর স্বেচ্ছাসেবক লীগের খসড়া কমিটি আমরা হাতে পেয়েছি। দ্রুতই দক্ষিণের খসড়া কমিটিও আমরা হাতে পাব। তারপর যাচাই-বাছাই শেষে দ্রুতই নগরের পূর্ণাঙ্গ কমিটি প্রকাশ করব।’
সারাবাংলা/এসএসএ/পিটিএম