প্রকল্পের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে
১৮ মে ২০২২ ১০:০৭
টাঙ্গাইল: জেলার ঘাটাইল উপজেলায় দরিদ্রদের কর্মসৃজন প্রকল্পের শ্রমিকের মজুরির টাকা কৌশলে নিজের পকেটে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এক ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত হেকমত সিকদার উপজেলার সাগরদীঘি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান। এ বিষয়ে ভুক্তভোগীদের পক্ষ থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার সাগরদীঘি ইউনিয়নে গত ১৫ জানুয়ারি থেকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা শাখার ২০২১- ২০২২ অর্থ বছরের অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচির প্রথম পর্যায়ের প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। আর এই প্রকল্পের কাজে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে চেয়ারম্যান হেকমত সিকদারের বিরুদ্ধে। ৪০ দিনের এই প্রকল্পে গ্রামের অসহায় হতদরিদ্র লোকজনের কাজ করার কথা থাকলেও তা করানো হয়নি। শ্রমিক নয়, বরং মাটি কাটার বেকু দিয়ে নামমাত্র কাজ করিয়েছেন তিনি। নিজের লোকদের মোবাইল নম্বর দিয়ে প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে এলাকাবাসী অভিযোগ করেছেন।
আরও জানা গেছে,প্রকল্পের এই কাজে সাগরদীঘি ইউনিয়নের জন্য ১৩ লাখ ১২ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। ৪০ দিনের ওই প্রকল্পে গ্রামের অসহায় হতদরিদ্র লোকজনের কাজ করার কথা থাকলেও সেখানে নাম রয়েছে স্বচ্ছল ব্যক্তিদের। কলেজের শিক্ষক থেকে ব্যবসায়ী, শিক্ষার্থী থেকে ইউনিয়ন পরিষদের কম্পিউটার অপারেটরের নাম সেই তালিকায়। এমনকি সিঙ্গাপুর ফেরত জোড়দিঘী এলাকার যুবলীগের নেতা মেহের আলীর নাম রয়েছে ওই তালিকায়। ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ডের মোট ৮১ জন ব্যাক্তির নাম এই কর্মসূচির তালিকায় রয়েছে। তাদের একাংশের মোবাইল সিমকার্ডসহ তাদের পিন কোড কৌশলে হাতিয়ে নেন চেয়ারম্যান। পরে ওই ভুক্তভুগীরা টাকা এবং সিমকার্ড কোনোটিই ফেরত পাননি বলে অভিযোগ করেন। এ কর্মসূচির আওতায় শ্রমিক দিয়ে কোনো কাজ হয়নি বলেও জানা যায়।
ভুক্তভোগী মেহের আলী জানান, আমার নাম তালিকায় থাকলেও আমি কোনো টাকা পাইনি। ওই কর্মসূচির তালিকায় থাকা কামালপুর ওয়ার্ডের আনোয়ারা, নার্গিজ, খাদিজা আক্তার এবং আব্দুর রহিম মিয়ার সঙ্গেও কথা হয়। তারা জানান, যাচাই-বাছাই করার কথা বলে হেকমত চেয়ারম্যান আমাদের বিকাশের পিনকোডসহ সিমকার্ড নিয়ে যায়। পরে সিমকার্ড ফেরত চাইলে নানা টালবাহানা করেন। এসব ভুক্তভুগীরা প্রকল্পের কোনো প্রকার টাকা পাননি বলেও জানান।
পাগাড়িয়া জালালপুর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শফিক মিয়ার বলেন, চেয়ারম্যান হেকমত সিকদার আমাকে ৯টি শ্রমিকের নামের মধ্যে ৩টি নাম দিতে বলেন। বাকি ৬টি চেয়ারম্যানের লোকদের দিবে বলে জানিয়ে দেন। আমার এলাকায় শ্রমিক দিয়ে এই প্রকল্পের কোনো কাজ করা হয়নি।
ওই ইউনিয়নের আরেক ইউপি সদস্য ফরহাদ আলী বলেন, আমার ৭নং ওয়ার্ডে প্রকল্পের কোনো কাজ হয়নি। সম্পূর্ণ টাকা চেয়ারম্যান তার লোকজন নিয়ে ভাগাভাগি করে খেয়েছেন।
এ বিষয়ে সাগরদীঘি ইউপি চেয়ারম্যান হেকমত সিকদার জানান, এই অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই। এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট।
এ বিষয়ে ভুক্তভুগীদের পক্ষে ওই ইউনিয়নের গ্রাম পুলিশ লাল মিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দফতরে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। অভিযোগের ব্যাপারে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা এনামুল হক জানান, শ্রমিকদের নামের তালিকা করেছে স্থানীয় মেম্বাররা। সেখানে কোনো অনিয়ম হলে শ্রমিকদের বিল দেওয়া হবে না।
এ বিষয়ে ঘাটাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুনীয়া চৌধুরী জানান, বিষয়টি আমার জানা ছিল না। তবে সঠিক তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সারাবাংলা/এনএস