শ্রমিক নেতা হত্যা: পিবিআই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থার নির্দেশ
২২ মে ২০২২ ১৫:২৫
ঢাকা: রাজশাহীর পুঠিয়ার শ্রমিক নেতা নুরুল ইসলাম হত্যার ঘটনায় উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে অভিযোগপত্র দেওয়ায় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (আইওর) পিবিআইয়ের পরিদর্শক শামীম আক্তারের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে ওই মামলায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) দেওয়া চার্জশিট বাতিলের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
রোববার (২২ মে) বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. সেলিমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মিজানুর রহমান। আর তদন্ত কর্মকর্তার (আইওর) পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. আসাদুজ্জামান।
এদিন শুনানিতে আদালত অসন্তোষ প্রকাশ করে তদন্ত কর্মকর্তার উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা (তদন্ত কর্মকর্তা) যা ইচ্ছা তাই করবেন, সেটা মেনে নেওয়া যায় না।’
এর আগে, তদন্তের দায়িত্বে থাকা পিবিআইয়ের পরিদর্শক শামীম আক্তারকে তলব করেছিলেন হাইকোর্ট। নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যাখ্যা দিতে আদালতে উপস্থিত হন তিনি। কিন্তু হাইকোর্ট তার ব্যাখ্যায় অসন্তোষ প্রকাশ করেন। পরে আদালত দুই সপ্তাহের মধ্যে তাকে পুনরায় লিখিত ব্যাখ্যা দাখিলের নির্দেশ দেন। তারই আলোকে আজ শুনানি শেষে আদেশ দেন।
২০১৯ সালের ১১ জুন পুঠিয়ার কাঁঠালবাড়িয়া এলাকার ‘এসএস ব্রিকস ফিল্ড’ নামে ইটভাটা থেকে শ্রমিক নেতা নুরুল ইসলামের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় নিহত নুরুল ইসলামের মেয়ে নিগার সুলতানা থানায় মামলা করেন। কিন্তু তার এজাহার গ্রহণ না করে তার কাছ থেকে সাদা কাগজে সই নেন পুঠিয়া থানার সাবেক ওসি সাকিল উদ্দিন আহমেদ।
পরে মামলার এজাহার ও প্রাথমিক তথ্য বিবরণী (এফআইআর) সংগ্রহ করে দেখেন, সেখানে নুরুল ইসলামের মেয়ে নিগার সুলতানার দেওয়া আট আসামির নাম নেই। এজাহারে ঘটনার বিবরণও পাল্টে দেওয়া হয়েছে। আসামির তালিকায় ছয় জনের নাম যুক্ত করা হয়েছে।
এই এজাহারের বিষয়ে তখনই নিগার সুলতানা ও তার মা সাজেদা বেগম আপত্তি জানিয়ে বলেন, ‘এই এজাহার তাদের নয়।’
পরবর্তীতে ২০১৯ সালের ১৮ জুলাই নিহত নুরুল ইসলামের পরিবারের পক্ষ থেকে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজি), রাজশাহী রেঞ্জের পুলিশের ডিআইজি ও রাজশাহীর এসপির কাছে এজাহার বদলে ফেলার অভিযোগ দায়ের করা হয়। কিন্তু এ বিষয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এর পর প্রতিকার চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়। ওই রিটের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট রুল জারি করেন এবং বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেন।
হাইকোর্টের নির্দেশে রাজশাহীর মুখ্য মহানগর হাকিম মো. মেহেদী হাসান তালুকদার অভিযোগ তদন্ত করে পুঠিয়া থানার ওসি সাকিলসহ পাঁচ পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দাখিল করেন। এজাহার পাল্টে দেওয়ার অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় ওসি সাকিলকে পুলিশ বাহিনী থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। পরে হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুসারে গত বছরের ১২ ডিসেম্বর রাজশাহী বিভাগীয় স্পেশাল জজ আদালতে আত্মসমর্পণ করলে ওসি শাকিলকে জামিন না দিয়ে জেল হাজতে পাঠানো হয়। এরপর তিনি হাইকোর্টে জামিন চেয়ে আবেদন করলে গত ১৬ মে বিচারপতি এ এস এম আব্দুল মোবিন ও বিচারপতি মো. আতোয়ার রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ তাকে ছয় মাসের জামিন দেন।
অন্যদিকে, রাজশাহীর মুখ্য মহানগর হাকিম মো. মেহেদী হাসান তালুকদার অভিযোগ তদন্ত করে ২০১৯ সালের ৬ নভেম্বর হাইকোর্টে প্রতিবেদন দাখিল করেন। পরে ২০১৯ সালের ১ ডিসেম্বর নুরুল ইসলামের মেয়ের করা রিটের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট রায় ঘোষণা করেন। রায়ে মামলাটি তদন্তের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
রায়ে আদালত আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘পিবিআই প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার তদন্ত তদারকিতে বিশেষ ভূমিকা রাখবেন। বর্তমান তদন্তকারী কর্মকর্তা বা সংস্থাকে অবিলম্বে কেস ডকেট পিবিআইয়ের নিকট হস্তান্তরের নির্দেশ দেওয়া হলো। পিবিআইকে তদন্তকালে মূল এজাহারের বর্ণনা, রাজশাহীর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের অনুসন্ধান রিপোর্ট ও অনুসন্ধান কার্যক্রমে সাক্ষীদের সাক্ষ্য বিবেচনায় গ্রহণের জন্য নির্দেশ দেওয়া হলো।’
পরে পিবিআইয়ের পরিদর্শক শামীম আক্তারকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু তার দেওয়া অভিযোগপত্রে সন্তুষ্ট হতে পারেননি আদালত। এরপর মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে (আইও) তলব করে হাইকোর্ট। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যাখ্যা দিতে হাইকোর্টে উপস্থিত হন তিনি। কিন্তু হাইকোর্ট তদন্ত কর্মকর্তার (আইও) ব্যাখ্যায় অসন্তোষ প্রকাশ করেন। পরে আদালত দুই সপ্তাহের মধ্যে আইওকে পুনরায় লিখিত ব্যাখ্যা দাখিলের নির্দেশ দেন। তারই ধারাবাহিকতায় আদালতে আজ সে বিষয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শুনানি শেষে হাইকোর্ট পিবিআইয়ের তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) পরিদর্শক শামীম আক্তারের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন।
সারাবাংলা/কেআইএফ/পিটিএম