Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বাম গণতান্ত্রিক জোট ছাড়ছে একাংশ, যুক্ত হবে ৭ দলীয় মঞ্চে

আজমল হক হেলাল, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২২ মে ২০২২ ২৩:৪৫

ঢাকা: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বাম গণতান্ত্রিক জোটের ভাঙন অবশ্যসম্ভাবী হয়ে উঠেছে। যে গুঞ্জন গত কিছুদিন ধরেই ঘুরছিল রাজনৈতিক অঙ্গনে, সেই গুঞ্জনই সত্যি হতে চলেছে। বাম গণতান্ত্রিক জোটের একাংশ ছাড়তে যাচ্ছে এই জোট। আর তাদের নতুন গন্তব্য সাত দলীয় মঞ্চ। এ ক্ষেত্রে বাম জোট ছাড়ার তালিকায় রয়েছে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ও গণসংহতি আন্দোলন। গণঅধিকার পরিষদ, রাষ্ট্রসংস্কার আন্দোলনের মতো সংগঠনগুলোর সঙ্গে সাত দলীয় মঞ্চে যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে তাদের।

বিজ্ঞাপন

জোট সূত্রগুলো বলছে, আগামী সপ্তাহেই সাত দলীয় মঞ্চের আত্মপ্রকাশ ঘটতে পারে। এই সাত দলীয় মঞ্চের লক্ষ্য, পরবর্তী সময়ে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা। এর জন্য তারা বিএনপিসহ অন্যান্য দলের সঙ্গেও আন্দোলনে যেতে পারে। জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত এবং নির্বাচনকালীন তদারকি সরকারের দাবিতেই হবে তাদের এই আন্দোলন।

সূত্রটি বলেছে, সাত দলীয় মঞ্চের নেতারা এরই মধ্যে তাদের মঞ্চ গঠনের বিষয় নিয়ে আলোচনা পর্ব শেষ করেছে। মঞ্চের আত্মপ্রকাশ নিয়ে আগামীকাল সোমবার (২৩ মে) চূড়ান্ত বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। তবে ‘অনিবার্য কারণে’ সেই বৈঠকটি কয়েকদিনের জন্য পিছিয়ে গেছে। এদিকে, মঙ্গলবার (২৪ মে) রয়েছে বাম গণতান্ত্রিক জোটের বৈঠক। ওই বৈঠকে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ও গণসংহতি আন্দোলনের শীর্ষ নেতারাও যোগ দেবেন। ওই দিনই সাত দলীয় মঞ্চে যুক্ত হওয়ার কথা আনুষ্ঠানিকভাবে জানাবে জোট শরিকদের। জোটের বাকি দলগুলোকেও নতুন মঞ্চে যোগ দিতে আহ্বান জানাবেন।

আরও পড়ুন- ভাঙনের ঝুঁকিতে বাম গণতান্ত্রিক জোট

সাত দলীয় মঞ্চে যোগদান বিষয়ে অবশ্য এর আগেও আলোচনা হয়েছে বাম গণতান্ত্রিক জোটের বৈঠকে। সবশেষ সেই বৈঠকে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ও গণসংহতি আন্দোলন ‘ফ্যাসিবাদী সরকারবিরোধী আন্দোলনে’ রাজপথে শক্তি সঞ্চায়ে জোটের পরিধি বাড়ানো জন্য ৭ দলীয় মঞ্চে যুক্ত হওয়া এবং ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে নির্বাচনকালীন তদারকি সরকার গঠনের দাবিতে বিএনপির সঙ্গে যুগপথ আন্দোলনের প্রস্তাব করে। তবে বাম গণতান্ত্রিক জোটের প্রধান দুই শরিক দল সিপিবি ও বাসদ তাদের প্রস্তাবে রাজি হয়নি।

জোট সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, ‘রাজনৈতিক ও জনগণের দাবি’ আদায়ের লড়াই-সংগ্রামে বাম গণতান্ত্রিক জোটের শরিক দলগুলোর সঙ্গে জোট ছাড়তে যাওয়া এই দুই দলের মতপার্থক্য বেশ আগের। বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ও গণসংহতির নেতাদের বক্তব্য, তারা যে আন্দোলন-সংগ্রামের পথ খুঁজছেন, তা জনগণের আন্দোলন। এই আন্দোলন সব রাজনৈতিক দলের আন্দোলন। কিন্তু তাদের আন্দোলনের চিন্তাধারা ও প্রস্তাবের সঙ্গে জোট শরিকরা একমত হতে পারেনি বলেই জানিয়েছেন দুই দলের নেতারা।

বিজ্ঞাপন

বাম গণতান্ত্রিক জোটের বাকি শরিক দলগুলোর নেতারা অবশ্য বলছেন, সরকারের পদত্যাগ, নির্বাচনীকালীন সরকারের অধীনে সুষ্ঠু অবাধ-নিরপেক্ষ নির্বাচনসহ জনজীবনের সংকট নিরসনে সমমনা দলগুলো নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বাইরে বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি গড়ার লক্ষ্য নিয়েই বাম গণতান্ত্রিক জোটের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। তারা মনে করেন, দেশের রাজনীতিতে শূন্যতা তৈরি হয়েছে। এজন্য সমমনা দলগুলোকে নিয়ে বড় একটি রাজনৈতিক ঐক্য গড়ে তুলতে সক্ষম এই জোট।

কিন্তু বাস্তবতা বলছে, নানা মতানৈক্যের কারণে জোটের মধ্যেই রয়েছে ফাটল। ফলে বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি গড়ে তোলার বাস্তব প্রেক্ষাপট তো তৈরি হয়ইনি, উল্টো বাম জোটের মধ্যেই ফাটল দিন দিন দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে।

জোটের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, যুগপৎ আন্দোলন গড়ে তোলা নিয়েও বাম গণতান্ত্রিক জোটের শরিক দলগুলোর মধ্যে রয়েছে দ্বিমত। ফলে গত ৯ মে বাম জোটের সভা ডাকা হয়। ওই সভায় অভ্যন্তরীণ সব বিষয় নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করা হয়। বৈঠকে বাম জোটের শরিক দলের নেতারা বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ও গণসংহতি আন্দোলনের নেতাদের কাছে তাদের পরিষ্কার অবস্থান জানতে চান। জবাবে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক ও গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি তাদের জানান, সাত দলীয় রাজনৈতিক ঐকমত্যের উদ্যোগটি বিকল্প কোনো জোট নয়। ভোটাধিকার নিশ্চিত, অবাধ নির্বাচনের জন্য তদারকি সরকার ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য বৃহত্তর ঐক্যের অংশ হিসেবে সাত দলীয় মঞ্চের উদ্যোগের সঙ্গে রয়েছেন তারা।

৯ মে’র ওই বৈঠকে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত না আসার কারণেই ২৪ মে জোটের পরবর্তী বৈঠক হতে যাচ্ছে। ওই বৈঠকে বাম গণতান্ত্রিক জোটের সবগুলো শরিক দলের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। জোটের সূত্রগুলো বলছে, এই বৈঠক থেকেই বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ও গণসংহতি আন্দোলন বাম গণতান্ত্রিক জোট থেকে বিদায় নিতে পারে। এমনকি আরও দুয়েকটি দলও তাদের সঙ্গী হতে পারে!

এসব বিষয় নিয়ে জানতে চাইলে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক সারাবাংলাকে  বলেন, আমরা এখনো বাম গণতান্ত্রিক জোটে আছি। ২৪ মে’র বৈঠকে অংশ নেব আমরা। ওই দিন জোটের বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলব। আমরা চাই, জোটও থাকুক আর বন্ধুরা মঞ্চে যুক্ত হোক। ভবিষ্যতে এই মঞ্চ যদি জোট হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে, তখন বিবেচনা করব একসঙ্গে দুইটি জোটে থাকা সম্ভব কি না।

বাম গণতান্ত্রিক জোট ছেড়ে যাচ্ছেন কেন— এমন প্রশ্নের জবাবে সাইফুল হক বলেন, ফ্যাসিবাদী এই সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই-সংগ্রামে বাম গণতান্ত্রিক জোটের সঙ্গে আমাদের মতের পার্থক্য রয়েছে। নানা কারণে লড়াই-সংগ্রামের কর্মসূচি পালন করতে পারছি না। আমরা যে উদ্দেশ্য-লক্ষ্য নিয়ে লড়াই-সংগ্রাম করতে চাচ্ছি, তা জনগণের দাবির লড়াই। অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোও একই দাবিতে লড়াই-সংগ্রাম করছে। তাহলে তাদের সঙ্গে কেন আমরা এক হব না?

জানতে চাইলে বাম গণতান্ত্রিক জোটের সাবেক সমন্বায়ক বজলুর রশিদ সারাবাংলাকে বলেন, এতদিন তারা বাম জোটের সঙ্গে ‘জেন্টেলম্যান এগ্রিমেন্টে’র ভিত্তিতে ছিল। এখন তারা অন্যদিকে যাবে, যাক। ভবিষ্যতে রাজপথে দেখা হবে। কারণ তারা যা ভাবছে, বাম গণতান্ত্রিক জোটের শরিক অন্য দলগুলো তা ভাবছে না। তারা মনে করছে, তাদের সঙ্গে মিলে বৃহত্তর ঐক্য করা দরকার। এখন তারা যা ভাবছে, তা করুক। ভবিষ্যতে তাদের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলন হলেও হতে পারে।

বজলুর রশিদ আরও বলেন, মূলত তারা একটি নতুন জোটে যেতে চাচ্ছে। দু’টি প্ল্যাটফর্ম একসঙ্গে চলতে পারে না। বাম গণতান্ত্রিক জোট থেকে তারা চলে গেলে কিছুটা ক্ষতি হবে। ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া যাবে। এভাবে তারা মঞ্চে গিয়ে কী করতে পারে, দেখি আগে। রাজপথেতো তাদের সঙ্গে দেখা হবে।

ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রামের ক্ষেত্রে জোটের শরিক দলগুলোর সঙ্গে জোট ছাড়তে যাওয়া দুই দলের কী ধরনের মতপার্থক্য রয়েছে— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ভোটাধিকার ও অবাধ-নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে তদারকি সরকার গঠনের দাবির সঙ্গে আমরা একমত। তবে কিছু দাবি নিয়ে দ্বিমত আছে। সেগুলোর মধ্যে শ্রমিকদের দাবি, কৃষকদের দাবি এবং কালো আইন ইত্যাদি বিষয় অন্তর্ভুক্তগুলো রয়েছে।

সাত দলীয় মঞ্চ বিএনপির সঙ্গে গিয়ে জোট করলে সেখানে আপনারা যুক্ত হবেন কি না— জানতে চাইলে বজলুর রশিদ বলেন, বাম গণতান্ত্রিক জোট কখনোই বিএনপির সঙ্গে ঐক্য করবে না। ভোটাধিকার নিশ্চিত  করতে ও নির্বাচনকালীন সরকারের দাবিতে যুগপৎ আন্দোলন হতে পারে। কিন্তু রাজনৈতিক ঐক্য হবে না।

সারাবাংলা/এএইচএইচ/টিআর

গণসংহতি আন্দোলন বাম গণতান্ত্রিক জোট বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি সাত দলীয় মঞ্চ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর