কুসিক নির্বাচন: আটক ছাত্রলীগ নেতাকে ছিনিয়ে নিল কর্মীরা
১৫ জুন ২০২২ ২০:৪৩
কুমিল্লা থেকে: কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের (কুসিক) নির্বাচনে ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের একটি কেন্দ্রে ভোটারদের প্রভাবিত করছিল ছাত্রলীগ নেতা ইলিয়াস হোসেন সবুজ— এমন অভিযোগে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) ছাত্রলীগ শাখার এই নেতাকে আটক করে গাড়িতে তুলে পুলিশ। তবে তাকে কুবি পুলিশের গাড়ি থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। পরবর্তী সময়ে এ ঘটনায় ক্যাম্পাসের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করে তারা। তবে বিষয়টি তদন্ত করার আশ্বাস দিয়েছে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান। বুধবার (১৫ জুন) শালবন বিহার প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নির্বাচনে ভোট দিতে আসা ভোটারদের প্রভাবিত করছে- এমন অভিযোগে ছাত্রলীগ সভাপতি ইলিয়াসকে আটক করে বিজিবি দলের সঙ্গে টহলে থাকা ম্যাজিস্ট্রেট। এর পরে তাকে গাড়িতে তোলা হলে সেখান থেকে ছিনিয়ে নেয় কর্মীরা।
ছাত্রলীগ সভাপতি ইলিয়াসকে ছিনিয়ে নিয়ে কুবির মূল ফটকের সামনে আন্দোলন শুরু করে কর্মীরা। এ সময় সদর দক্ষিণের থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দেবাশীষ চৌধুরী উপস্থিত হয়ে বিষয়টি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। তবে আন্দোলন আরও তীব্র হলে জেলা প্রশাসকের কাছে নিয়ে যাওয়া হয় শাখা ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের।
কুবি ছাত্রলীগের সভাপতি ইলিয়াস হোসেন সবুজ বলেন, ‘নির্বাচন হচ্ছে দেখে কি পকেটে টাকা নিয়ে খাওয়া-দাওয়া করা যাবে না? আমার সঙ্গে থাকা কর্মীদের কি খাওয়াতেও পারব না? আমি মূলত আমার কর্মীদেরকে খাওয়ানোর জন্য টাকা নিয়ে বেরিয়েছিলাম। ক্যাম্পাস গেটে গিয়ে কোটবাড়ির সৌদিয়া রেস্টুরেন্ট থেকে খাবার আনার জন্য লোক খুঁজছিলাম। তখন আমার কাছে কিছু টাকা ছিল। কিন্তু সে অবস্থাতে আমাকে আটক করা হয়।’
তিনি বলেন, ‘ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবে আমার কাছে সবসময় ২০-৩০ হাজার টাকা রাখা কি অপরাধ? আমি তো কোনো ভোটারকে টাকা দিইনি এবং ভোটকেন্দ্রের আশেপাশেও যাইনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করা হয়েছে। আমি ডিসি মহোদয়কে বিষয়টি অবগত করেছি। আগামীকাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের মাধ্যমে আমরা লিখিত অভিযোগ দেব। এবং যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আহ্বান জানাব।’
কেন্দ্রে দায়িত্বরত কুমিল্লা জেলার সহকারী কমিশনার মো. জিয়াউর রহমান বলেন, ‘ভোটারদের টাকা দেওয়ার অভিযোগে ইলিয়াসকে ডেকে কথা বলতে চাই আমরা। এর মাঝেই ছাত্রলীগের ছেলেরা এসে তাকে নিয়ে যায়। তার পকেটে প্রায় ৭০ হাজার টাকা পেয়েছিলাম আমরা।’
কুবি প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকী বলেন, ‘যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এর সাথে জড়িত তাই আমরা অবশ্যই চাইব বিচার হোক। জেলা প্রশাসকের বলেছেন যদি ওরা (ছাত্রলীগ) লিখিত অভিযোগ দেয় সেক্ষেত্রে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব।’
বিষয়টি জানালে জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান বলেন, ‘নির্বাচন একটি বিশাল কর্মজজ্ঞ। এটি ভালো মতো শেষ করতে অনেক ধরনের তথ্যগত সমস্যা সৃষ্টি হয়। আমরা এই বিষয় নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের কোনো অভিযোগ থাকলে তা নিয়ে আমাদের লিখিত অভিযোগ করলে দ্রুত তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এদিকে, কুসিক নির্বাচন পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার অভিযোগে বুধবার ১০ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।
জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান জানান, ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে দিদার হোসেনকে সাত দিনের, সদর দক্ষিণ উপজেলার একজনকে তিন দিনের, ৩ নম্বর ওয়ার্ডে দুজনকে তিন দিনের, ১০ নম্বর ওয়ার্ডে তিনজনকে তিন দিনের, বড়পুকুর এলাকায় দুজনকে সাত দিনের এবং হোচ্ছামিয়া বালিকা বিদ্যালয়ে আরেকজনকে সাত দিনের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, নির্বাচনের সময় বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টায় জড়িত থাকায় তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
এ দিন সকাল ৮টা থেকে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনে নির্বাচনে ভোট গ্রহণ শুরু হয়। নির্বাচন শেষে কুমিল্লা জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ ও ফলাফল পরিবেশন কেন্দ্র থেকে একীভূত ফলাফল ঘোষণা করা হচ্ছে।
সারাবাংলা/এসবি/পিটিএম