দইয়ে বিএসটিআই’র নকল সিল, কাজে আসছে না অভিযান
১৬ জুন ২০২২ ১৫:১৫
কক্সবাজার: জেলা শহরে ‘মিষ্টি দই’ নামে কাপ দই বিক্রি করে মীম ট্রেডিংয়ের মালিক মোহাম্মদ আবু বক্কর। এজন্য পণ্যটির বিএসটিআই’র লাইসেন্সও রয়েছে। তবে সম্প্রতি নিজের কাপ দইয়ের নামে হুবহু দই বাজারে দেখতে পান তিনি। এমনকি বিএসটিআই’র সিলও নকল করা হয়েছে। শুধু ‘মিষ্টি দই’ নয়, এমন আরও অনেক প্রতিষ্ঠানের পণ্য নকল করে বাজারে বিক্রি করেছেন কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। এসব নকল কারখানায় স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাঝে-মধ্যে অভিযান চালালেও তা বন্ধ হচ্ছে না। এজন্য প্রশাসনের দুর্বলতাকেই দায়ী করছেন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মীম ট্রেডিংয়ের ‘মিষ্টি দই’ সম্পূর্ণভাবে নকল করেছেন মোহাম্মদ হোসেন নামে এক ব্যক্তি। আর এ কাজে তাকে সহযোগিতা করেন মো. রুবেল। তারা দু’জনেই রামু উপজেলার ধেছুয়া পালংয়ের (৫ নং ওয়ার্ড) কাদিরকাটার বাসিন্দা। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে এ অবৈধ কাজ করছেন তারা।
এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্থ মীম ট্রেডিংয়ের মালিক মোহাম্মদ আবু বক্কর গত ২০ মে উখিয়া থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। সেখানে নকল ও নিম্নমানের মিষ্টি দই সরবরাহ করে প্রতিষ্ঠানের সুনাম ক্ষুন্ন করার অভিযোগ করেছেন তিনি।
এ বিষয়ে মোবাইলে কথা হলে নিজের দোষ স্বীকার করেন অভিযুক্ত মোহাম্মদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘ভুলে’ এই কাজ করেছেন। এখন আর করছেন না। তবে অনুমোদনের জন্য বিএসটিআই কাছে আবেদন করেছেন।
তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঠিকই অবৈধ ব্যবসা চালাচ্ছেন মোহাম্মদ হোসেন। তবে এবার মীম ট্রেডিংয়ের নামে নয়। করছে স্টার্শিপের নাম ব্যবহার করে।
মীম ট্রেডিংয়ের মালিক মোহাম্মদ আবু বক্কর জানান, দীর্ঘ ১৪ বছরের সাধনার ফল এই মিষ্টি দই। যার বিএসটিআই নম্বর- ০০৯৯২। এই প্রতারক চক্রের কারণে অনেক বড় ক্ষতি হয়েছেন তিনি। এতে দইয়ের ওজন ও কোয়ালিটি নষ্ট হয়েছে। ক্ষুন্ন হয়েছে বাজারের সুনাম। এজন্য স্থানীয় প্রসাশনের অহহেলা ও দুবর্লতাকে দায়ী করেন তিনি।
এ অবস্থায় প্রশাসনের কাছে প্রশ্ন করে মোহাম্মদ আবু বক্কর বলেন, ‘এমনটা হলে এতো কষ্ট করে অনুমোদন নেওয়ার কি দরকার ছিল? মীম ট্রেডিংয়ের নাম ব্যবহার করে নিম্নমানের দই খেয়ে কেউ অসুস্থ হলে তার দায়ভার কে নেবেন?’
শুধু মোহাম্মদ হোসেন নয় ঈদগাহ ইসলামাবাদের পশ্চিম টেকপাড়ার (১ নং ওয়ার্ড) আবু তাহেরের ছেলে আবু ছালেক নামে আরেক ব্যক্তির খোঁজ পাওয়া গেছে। যিনি ফারমেন্টটেড মিল্ক (মিষ্টি দই) নামে অনুমোদনহীন কাপ দই বিক্রি করেন। তার কাছে বিএসটিআই’র অনুমোদন নেই। এমনকি ট্রেড লাইসেন্সসহ বৈধ কোনো কাগজপত্র নেই। শহরের বিজিবি ক্যাম্প এলাকার দক্ষিণ সাহিত্যিকা পল্লীকে নিজের দই তৈরির প্রতিষ্ঠান দেখিয়েছেন তিনি।
আবু ছালেকও নিজের দোষ স্বীকার করে বলেন, ‘আগে বিক্রি করতাম এখন করি না। এখন অনুমোদনের জন্য আবেদন করেছি। যদি অনুমোদন পাই তাহলে করব, না হলে করব না।’
একই অভিযোগ পাওয়া গেছে উখিয়া উপজেলার মরিচ্যা এলাকার জামাল উদ্দিনের বিরুদ্ধেও। তিনি ‘পিওর দধি’ নামে কাপ দই বিক্রি করেন। তার দইয়ের উৎপাদন ও বাজারজাত করার কোনো অনুমোদন নাই।
তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করে জামাল উদ্দিন জানান, ‘তার দইয়ের অনুমোদন রয়েছে। তার বিরুদ্ধে মিথ্যা ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।’
বাজারে পাওয়া এসবে নকল দইয়ের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দায়ী করছেন স্থানীয় সচেতন মহল। তারা বলছেন, অনুমোদনহীন খাবারের ওজনে নয়-ছয় রয়েছে। পাশাপাশি স্বাস্থ্য ঝুঁকির আশঙ্কা রয়েছে। তাই স্বাস্থ্য সুরক্ষায় প্রশাসনকে কঠোর হওয়ার জন্য দাবি জানিয়েছেন তারা।
এ বিষয়ে বিএসটিআই’র জেলা পরিদর্শক পলাশ খাঁন জানান, মোহাম্মদ হোসেন নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে বিএসটিআই’র অনুমোদন ছাড়া কাপ দই বিক্রির অভিযোগ রয়েছে। ওই কারখানায় অভিযানও চালানো হয়েছিল। তাকে সর্তক করা হয়েছে। এর বাহিরেও অন্য কেউ যদি এই ধরনের অপকর্ম করে তার বিরুদ্ধেও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
কক্সবাজার স্যানিটারি ইন্সপেক্টর ও নিরাপদ খাদ্য পরিদর্শক (সিভিল সার্জন কার্যালয়) মোহাম্মদ নুরুল আলম বলেন, এটি সম্পূর্ণ আইনগত অপরাধ। এসবের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে সচেতনতা বাড়াতে হবে। একইসঙ্গে আইনের সঠিক প্রয়োগ করতে হবে।
সারাবাংলা/এনএস