টানা বর্ষণে বাড়ছে পাহাড় ধসের শঙ্কা, জরুরি বিজ্ঞপ্তি জারি
১৮ জুন ২০২২ ১৮:৪৯
বান্দরবান: বান্দরবানে টানা তিন দিনের ভারি বর্ষণের কারণে পাহাড় ধসের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এভাবে ভারি বর্ষণ অব্যাহত থাকলে এসব এলাকায় পাহাড় ধসে প্রাণহানির ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। এ অবস্থায় ঝুঁকিপূর্ণভাবে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসরতদের সরাতে স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি জরুরি বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে।
বান্দরবানে প্রতিবছরই বর্ষা মৌসুমে পাহাড় ধসে প্রাণহানির ঘটনা ঘটে থাকে। প্রশাসন থেকে উদ্যোগ নেওয়া হলেও পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের সরিয়ে নেওয়া অনেক সময় কঠিন হয়ে পড়ে। বান্দরবান শহরের ইসলামপুর, লাঙ্গিপাড়া, হাফেজ ঘোনা, কালাঘাটা, বনরুপাপাড়া, ক্যাচিংঘাটাসহ বিভিন্ন এলাকায় কয়েক শতাধিক পরিবার পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছে।
পাহাড় কেটে ঘরবাড়ি নির্মাণ করায় বর্ষা মৌসুমে এসব এলাকায় পাহাড় ধস ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটে থাকে। এছাড়া বান্দরবানের দক্ষিণাঞ্চল লামা, আজিজনগর, ফাসিয়াখালী, ফাইতং, গজালিয়া, নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম এবং রোয়াংছড়ি উপজেলায় পাহাড়ের পাদদেশে নতুন নতুন বসতি বেড়ে যাওয়ায় পাহাড় ধসের ঝুঁকি বেড়ে গেছে।
মাথাগোঁজার ঠাঁই হিসেবে ৭ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পাহাড়ের পাদদেশে অপরিকল্পিত ভাবে বসতবাড়ি গড়ে তুলেছে হাজার হাজার পরিবার। বসবাসের প্রয়োজনে অপরিকল্পিতভাবে পাহাড় কাটা এবং বৃক্ষ নিধনের কারণে ঘটেছে একের পর এক পাহাড় ধসের ঘটনা।
পরিবেশ নিয়ে কাজ করে এমন কয়েকটি বেসরকারি সংস্থার জরিপ থেকে জানা গেছে, ৭টি উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পাহাড়ের পাদদেশে অপরিকল্পিতভাবে বসতি গড়ে তুলেছে প্রায় ৩০ হাজারেরও বেশি পরিবার। এবছরও পাহাড়ের পাদদেশে নতুন নতুন বসতি গড়ে উঠায় গত বছরের তুলনায় ঝুঁকিপূর্ণ পরিবারের সংখ্যা আরও অনেক বেড়ে গেছে।
বান্দরবানের মৃত্তিকা ও পানি সংরক্ষণ কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. মাহাবুবুল ইসলাম জানান, ভূমিক্ষয়ের মাধ্যমে পাহাড়ে ফাটল তৈরি হয় এবং ধস নামে। পাহাড় ধসের প্রধান কারণ হচ্ছে– নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন, অপরিকল্পিতভাবে পাহাড় কাটা, প্রাকৃতিকভাবে ভূমিকম্প এবং অতিবৃষ্টি মাটির গঠনকে দুর্বল করে দেয়।
বান্দরবানের পৌর মেয়র মো. ইসলাম বেবী জানান, সম্প্রতি অতি বর্ষণের ফলে পাহাড় ধসের সম্ভাবনা ও যানমালের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের ঝুঁকি না নিয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে অথবা স্কুল ভবনে আশ্রয় নেওয়ার জন্য শহরে মাইকিং করা হচ্ছে এবং একটি জরুরি বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে।
বান্দরবানের জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভিন তিবরিজী জানান, অতি ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলো থেকে লোকজনকে প্রাথমিকভাবে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিতে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের বলা হয়েছে। উপজেলা পর্যায়েও অতি ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলো থেকে প্রাথামিক ভাবে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার জন্য ইউএনও’দের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
সরকারি সূত্রে মতে, ২০০৬ সালে জেলা সদরে ৩ জন, ২০০৯ সালে লামা উপজেলায় শিশুসহ ১০ জন, ২০১০ সালে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় ৫জন, ২০১১ সালে রোয়াংছড়ি উপজেলায় ২জন, ২০১২ সালে লামা উপজেলায় ২৮ জন ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় ১০ জন, ২০১৫ সালে লামায় ৪ জন, সিদ্দিকনগরে ১জন ও সদরের বনরূপা পাড়ায় ২জন, ২০১৭ সালে সদরের কালাঘাটায় ৭ জন ও রুমা সড়কে ৫ জন ২০১৮ সালের কালাঘাটায় ১জন ও লামায় ৩ জন। ২০১৯ সালে লামাতে ১জন। ২০২০ সালে আলীকদমে ১জন এবং সর্বশেষ ২০২১ সালে সাইঙ্গ্যা ঝিড়িতে একই পরিবারের তিন জন পাহাড় ধসে নিহত হন।
সারাবাংলা/এমও