শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা: আত্মগোপনে ছিলেন ফাঁসির আসামি জাকারিয়া
২৬ জুন ২০২২ ১৫:০৩
ঢাকা: বহুল আলোচিত পাবনার ঈশ্বরদী রেল স্টেশনে ১৯৯৪ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বহনকারী ট্রেনে হামলা ও গুলিবর্ষণের মাধ্যমে হত্যাচেষ্টা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত এবং অস্ত্র মামলাসহ একাধিক মামলায় সাজাপ্রাপ্ত ও ওয়ারেন্টভুক্ত পলাতক আসামি জাকারিয়া পিন্টুকে কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে গ্রেফতার করেছে র্যাব।
রোববার (২৬ জুন) দুপুরে কারওয়ান বাজার মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন সাংবাদিকদের এ সব তথ্য জানান।
তিনি জানান, শনিবার (২৫ জুন) দিবাগত রাতে র্যাব-২ এর একটি আভিযানিক দল কক্সবাজার জেলার টেকনাফ এলাকায় অভিযান চালিয়ে পিন্টুকে গ্রেফতার করে। পিন্টু ১৯৯৪ সালে পাবনা-ঈশ্বরদী রেল স্টেশনে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ট্রেনবহরে হামলা ও গুলিবর্ষণ করে হত্যাচেষ্টা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ফাঁসির আসামি।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার উদ্দেশ্যে ঈশ্বরদীতে ট্রেনে গুলিবর্ষণ ও বোমা হামলার কথা স্বীকার করেছেন জাকারিয়া পিন্টু। এতদিন তিনি পলাতক ছিলেন তাও স্বীকার করেছেন।
১৯৯৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর শুক্রবার ট্রেনযোগে খুলনা থেকে সৈয়দপুর যাওয়ার পথে ঈশ্বরদী রেল স্টেশনে পৌঁছালে সন্ধ্যা আনুমানিক ৬ টা ২০ মিনিটে প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বগিকে লক্ষ করে গুলি বর্ষণ ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।
ওই ঘটনায় পাবনার ঈশ্বরদীর জিআরপি থানায় বিষ্ফোরক দ্রব্যাদি আইনে ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি মামলা হয়।
আদালতের নির্দেশে মামলা তদন্তের দায়িত্ব সিআইডিকে দেওয়া হলে সিআইডির তদন্ত কর্মকর্তা ১৯৯৭ সালের ৩ এপ্রিল সর্বমোট ৫২ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। এর মধ্যে ৫ জন আসামি মৃত্যুবরণ করায় তাদেরকে ওই মামলা হতে অব্যাহতি প্রদান করে বাকি ৪৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়।
পরবর্তী সময়ে দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে ২০১৯ সালের ৩ জুলাই গ্রেফতারকৃত জাকারিয়া পিন্টুসহ ৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড, ২৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ১৩ জনকে ১০ বছর মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
জাকারিয়ার নেতৃত্বে ঈশ্বরদীতে আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি, মারামারিসহ বিভিন্ন অরাজকতা চলত। প্রথমে ১৯৮৮ সালে ও পরবর্তীতে বিভিন্ন অপরাধে সম্পৃক্ততায় তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়। ওই সব মামলায় গ্রেফতার এড়াতে তিনি এলাকা ত্যাগ করেন। ২০০৪ সাল থেকে ঢাকার মিরপুরে বসবাস শুরু করেন। তার পরিবার ঢাকায় থাকলেও নিয়মিত ঈশ্বরদীতে যাতায়াত ছিল তার। ২০১৫ সালে ঈশ্বরদীতে উপজেলা নির্বাচনে স্বতন্ত্রভাবে অংশগ্রহণ করেন এবং পরাজিত হন।
গ্রেফতার পিন্টু জানায় যে, ১৯৯৪ সালে ঈশ্বরদীতে চম্পা হত্যা মামলার অভিযুক্ত আসামি এবং ২০০৯ সালে ঈশ্বরদীতে আজম হত্যা মামলায় অভিযুক্ত হয়ে কারাবরণ করেন। পরবর্তী সময়ে ২০১১ সালে অস্ত্রসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক গ্রেফতার হন এবং তার বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে কুষ্টিয়া ভেড়ামারা থানায় একটি মামলা দায়ের হয়।
এই মামলায় সে তিন মাস কারাভোগ করলেও জামিনে মুক্তি পেয়ে ফেরারি হন। ওই মামলায় আদালত তাকে ১৭ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করেন। এছাড়াও, ২০১২, ২০১৪ এবং ২০১৫ সালে আধিপত্য বিস্তার, বিভিন্ন সন্ত্রাসী ও ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের জন্য তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ১০টি মামলা দায়ের হয়। এ পর্যন্ত তার নামে একটি মৃত্যুদণ্ড ও একটি ১৭ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের সাজা পরোয়ানা ছাড়াও বিভিন্ন অপরাধে ৬টি গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় সর্বমোট ১৯টি মামলা রয়েছে।
গ্রেফতার পিন্টু আরও জানায় যে, ২০১৯ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে হত্যাচেষ্টা মামলার রায় ঘোষণার পর থেকেই সে আত্মগোপনে ছিলেন। রায় ঘোষণার পরের দিনই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নজর এড়াতে সে দেশ ত্যাগ করে পার্শ্ববর্তী দেশে আত্মগোপন করেন। সেখানে কিছুদিন অবস্থানের পর পুনরায় দেশে ফিরে আসেন। পরবর্তী সময়ে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় সীমান্ত যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সে দেশের মধ্যে ঢাকা, রাজশাহী ও কক্সবাজারসহ বিভিন্ন জায়গায় আত্মগোপনে থাকেন। সর্বশেষ কক্সবাজার এর টেকনাফে তার বন্ধুর বাসায় আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় র্যাব-২ কর্তৃক গ্রেফতার হয়। গ্রেফতার ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
সারাবাংলা/ইউজে/একে
জাকারিয়া মণ্ডল টপ নিউজ র্যাব শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা মামলা