ভরা বর্ষায় পুড়ছে প্রকৃতি, তাপমাত্রা বাড়বে আরও
৪ আগস্ট ২০২২ ২২:২৮
ঢাকা: বাংলা বর্ষপঞ্জিতে আষাঢ়-শ্রাবণ এই দুই মাস বর্ষাকাল। এই সময়ে মুষলধারে বৃষ্টি হবে, মানুষকে ভোগাবে, আবার আনন্দ দেবে। খাল-বিল পুকুরে জল উপচে পড়বে। ফসলের মাঠে কাদায় লেপ্টে কৃষক বীজ রোপনে ব্যস্ত সময় পার করবেন। আর প্রকৃতি হবে আরও সতেজ। এটাই বর্ষার চরিত্র। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে সেই চরিত্র আর দেখা যাচ্ছে না। এখন ভরা বর্ষায় তাপপ্রবাহ। কখনো কখনো একটু বৃষ্টি হলেও গ্রীষ্মের মতো প্রখরতায় পুড়ছে প্রকৃতি। এমনকি ভরা বর্ষাতেও তাপমাত্রার পারদ উঠেছে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। আর তা আরও বাড়ার পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। প্রকৃতির এই দ্বি-মুখী আচরনের জন্য জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবকেই দুষছেন আবহাওয়াবিদরা।
আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এ সময়ে দেশের রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি হতে পারে। সেইসঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ভারি বর্ষণও হতে পারে। তবে আগামী ২৪ ঘণ্টায় দিন ও রাতের তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
আবহাওয়াবিদ মো. মনোয়ার হোসেন সারাবাংলাকে জানান, মৌসুমি বায়ুর অক্ষ রাজস্থান, হরিয়ানা, মধ্যপ্রদেশ, বিহার, গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত। এর বর্ধিতাংশ উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপরে মোটামুটি সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি অবস্থায় রয়েছে। আর তাপমাত্রা বাড়তির কারণে পানি জলীয়বাষ্প হয়ে উড়ে যাচ্ছে। সে কারণে মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে না। আর এমন পরিস্থিতি আগামী দুই/তিন দিন অব্যাহত থাকতে পারে।
এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের প্রায় সকল জেলাতেই তাপমাত্রা বাড়তি ছিল। এই সময়ে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ঈশ্বরদীতে ৩৫ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়া দেশের সীতাকুণ্ড ও সৈয়দপুরে তাপমাত্রা ছিল ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকা, মাদারীপুর, রাজশাহী, বদলগাছী, ডিমলা, রাজারহাট, সিলেট এবং ফেনীতে তাপমাত্রা ছিলো ৩৫ ডিগ্রির ওপরে। আর কমপক্ষে দশ জেলার তাপমাত্রা ছিলো ৩৩ ডিগ্রির ওপরে। একই সময়ে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে যশোরে ৭২ মিলিমিটার। এরপরে পটুখালী জেলার খেপুপাড়ায় ৫৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। এছাড়া দেশের প্রায় বেশিরভাগ জেলাতেই ১০ মিলিটার বা তার থেকে কম বৃষ্টি হয়েছে।
বৃষ্টিপাতের পরিমাণ এবার পুরো বর্ষা মৌসুমেই কম। আবহাওয়া অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, জুলাই মাসে ঢাকা বিভাগে বৃষ্টিপাত হয়েছে ১১৬ মিলিমিটার, চট্টগ্রাম বিভাগে ২৩২ মিলিমিটার, ময়মনসিংহে ২০৪ মিলিমিটার, রাজশাহীতে ১৩৮ মিলিমিটার, রংপুরে ২৯৯ মিলিমিটার, খুলনায় ১২০ মিলিমিটার, বরিশালে ২২০ মিলিমিটার এবং সিলেটে সর্বোচ্চ ৫৩১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, বৈশ্বিক উষ্ণায়নে জলবায়ুর ওপরে প্রভাব পড়ছে। তাই নেতিবাচক আচরণ আমরা প্রকৃতিতে দেখতে পাচ্ছি।
এ প্রসঙ্গে আবহাওয়াবিদ আফরোজা সুলতানা সারাবাংলাকে বলেন, ‘বর্ষা মৌসুমে যে পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে তার প্রায় এক তৃতীয়াংশ বৃষ্টিপাত হয়েছে এবার। আমরা মূলত জুন-জুলাই এবং আগস্ট এই সময়টাকে বর্ষার সময় ধরে থাকি। জুন থেকে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বাড়তে থাকে, জুলাইয়ের পুরোটা সময় বৃষ্টি থাকে আর আগস্টের মাঝামাঝি থেকে কমতে শুরু করে। তারপর ধীরে ধীরে হেমন্তের অনুভূতি চলে আসে। এর পর আসে শীত। তবে প্রতি বছরই একটু একটু করে বর্ষার পরিমাণ কমতে দেখা যাচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘বর্ষা মৌসুমে সামনের দিনগুলোতে ভারী বৃষ্টিপাতের কোনো সম্ভাবনা নেই। তবে তাপমাত্রা বাড়তে পারে।’
এদিকে, আবহাওয়া অধিদফতরের ত্রৈমাসিক প্রতিবেদন বলছে, আগস্টেও বড় ধরনের বা লাগাতার বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নেই। স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের কথা বলা হলেও এ মাসে দুটি নিম্নচাপের পূর্বাভাস রয়েছে। যে কারণে উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে অস্থায়ীভাবে বন্যা দেখা দিতে পারে।
সারাবাংলা/জেআর/পিটিএম