১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা রেকর্ড খেলাপি ঋণ
১১ আগস্ট ২০২২ ২২:১৭
ঢাকা: দেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ সর্বকালের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। করোনা ও করোনা পরবর্তী আড়াই বছর ধরে নানা ধরনের সুযোগ সুবিধা দেয়ার পরেও ব্যবসায়ীদের ঋণ পরিশোধ করছেন না। এতে করে দেশে রেকর্ড পরিমাণ খেলাপি ঋণ সৃষ্টি হয়েছে। চলতি বছরের চলতি বছরের গত ৩০ শে জুন শেষে দেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাড়িয়েছে এক লাখ ২৫ হাজার ২৫৮ কোটি টাকা। এটি মোট বিতরণ করা ঋণের ৮ দশমিক ৯৬ শতাংশ। এটি এ যাবতকালে সর্বোচ্চ খেলাপি ঋণের অঙ্ক।
বৃহস্পতিবার (১১ আগস্ট) বাংলাদেশ ব্যাংকের খেলাপি ঋণ সংক্রান্ত সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি ২০২২ সালের জুন মাস শেষে ব্যাংকিং খাতের মোট বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৩ লাখ ৯৮ হাজার ৫৯২ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপিতে পরিণত হয়েছে এক লাখ ২৫ হাজার ২৫৮ কোটি টাকা। এটি মোট বিতরণ করা ঋণের ৮ দশমিক ৯৬ শতাংশ। যা এ যাবতকালের সর্বোচ্চ খেলাপি ঋণ।
এ ব্যাপারে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘ঋণ গ্রহীতাদের একের পর এক সুবিধা দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে সুদ কমিয়ে পরিশোধেরে মেয়াদ বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে করে প্রকৃত ঋণ পরিশোধকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। আর যারা ঋণ পরিশোধ করেনি তারা লাভবান হয়েছে। এ সব কারণে অনেক ব্যবসায়ী আগে নিয়মিত ঋণ পরিশোধ করলেও পরে ঋণ পরিশোধ করেনি। ফলে তারাও খেলাপি হয়েছেন। ফলে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েছে।’
তিনি বলেন, ‘করোনার কারণে গত এক দুই বছর ঋণ গ্রহীতারা ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করেনি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকও কিছু বলেনি। ক্ষেত্রবিশেষে সুযোগ-সুবিধা দিয়েছে। পরিণামে যা হওয়ার তাই হয়েছে। এ সব কারণে ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়েছে। তবে সঠিক হিসাব করা হলে দেশের খেলাপি ঋণের প্রকৃত চিত্র আরও ভয়াবহ হতে পারে ‘
জানা গেছে, চলতি বছরের ৩১ শে মার্চ শেষে দেশে তিন মাস আগেও মার্চ প্রান্তিকে খেলাপি ঋণ ছিল ১ লাখ ১৩ হাজার ৪৪০ কোটি টাকা। সর্বশেষে তিন মাসে ( মার্চ থেকে জুন) ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১১ হাজার ৮১৮ কোটি টাকা। আর বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চে) বেড়েছিল ১০ হাজার ১৬৭ কোটি টাকা। এছাড়া গত এক বছরে অর্থাৎ ২০২১ সালের জুন থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত দেশে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২৬ হাজার ৬৩ কোটি টাকা।
২০২১ সালের জুনে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৯৯ হাজার ২০৫ কোটি টাকা। অন্যদিকে ২০২১ সালের ডিসেম্বর শেষে দেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৩ হাজার ২৭৩ কোটি টাকা। ফলে সর্বশেষ ছয় মাসে দেশে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে অনুযাযী, চলতি ২০২২ সালের জুন শেষে রাষ্ট্রীয় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো মোট ঋণ বিতরণের পরিমাণ ২ লাখ ৫২ হাজার ৭২৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে ২১ দশমিক ৯৩ শতাংশ বা ৫৫ হাজার ৪২৯ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ। অন্যদিকে বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে একই সময়ে ঋণ বিতরণ হয়েছে ১০ লাখ ৪২ হাজার ৮৬৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণ ৬২ হাজার ৬৭৮ কোটি টাকা বা ৬ দশমিক ০১ শতাংশ। বিদেশি ব্যাংকগুলো ৬৭ হাজার ২৬৮ কোটি টাকা বিতরণ করা ঋণের মধ্যে ২ হাজার ৯৫৭ কোটি টাকা, যা মোট প্রদান করা ঋণের ৪ দশমিক ৪০ শতাংশ। এছাড়াও বিশেষায়িত তিনটি ব্যাংকের একই সময়ে বিতরণ করেছে মোট ৩৫ হাজার ৭২৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণ ৪ হাজার ১৯৪ কোটি টাকা। যা বিতরণকৃত ঋণের ১১ দশমিক ৭৪ শতাংশ।
আরও পড়ুন
খেলাপি ঋণ কম, বাড়িয়ে দেখানোর চেষ্টা চলছে: গভর্নর
খেলাপি ঋণ আদায়ে কঠোর অবস্থানে বাংলাদেশ ব্যাংক
‘খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ’
‘খেলাপি ঋণের চিত্র উদঘাটন হলে ব্যাংকগুলো কঙ্কালে পরিণত হবে’
বছরজুড়ে আলোচনায় খেলাপি ঋণ, পুঁজিবাজারে দরপতন, পেঁয়াজের দাম
সারাবাংলা/জিএস/একে
কেন্দ্রীয় ব্যাংক খেলাপি ঋণ খেলাপি ঋণে রেকর্ড বাংলাদেশ ব্যাংক