বিজ্ঞাপন

খেলাপি ঋণ কম, বাড়িয়ে দেখানোর চেষ্টা চলছে: গভর্নর

March 4, 2020 | 5:24 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: দেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ অনেক কম বলে উল্লেখ করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, বিভিন্ন গবেষণা সংস্থা দেশের মোট ক্ষতিগ্রস্ত ঋণের পরিমাণ বাড়িয়ে দেখানোর চেষ্টা করছে। এর মধ্যে তারা অন্তর্ভুক্ত করছে অবলোপন ও রিশিডিউলের টাকা। কিন্তু রিশিডিউল একটি চলমান প্রক্রিয়া। প্রকৃতপক্ষে দেশের খেলাপি ঋণের পরিমাণ অনেক কম।

বুধবার (৪ মার্চ) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের বার্ষিক সম্মেলন-২০২০ অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছি‌লেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আতাউর রহমান প্রধানের সভাপতিত্বে সম্মেলনে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আসাদুল ইসলাম ও সোনালী ব্যাং‌কের চেয়ারম্যান জিয়াউল হাসান সিদ্দিকীসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।

বিজ্ঞাপন

সম্মেলনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গর্ভনর বলেন, বর্তমানে দেশের মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৯৪ হাজার কোটি টাকা, যা মোট বিতরণ করা ঋণের ৯ দশমিক ৩২ শতাংশ। একটি দেশের অর্থনীতির জন্য এটি অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবে গত সেপ্টেম্বর শেষে এটা অনেক বেশি ছিল। খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্টে ১০ বছর মেয়াদি রিশিডিউল পদ্ধতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। পাশাপাশি বিশ্ব অর্থনীতির কথা চিন্তা করে সচেতনভাবে ঋণ বিতরণ ও খেলাপি ঋণ আদায়ের প্রক্রিয়া জোরদারের তাগিদ দেন তিনি।

ফজলে কবির ব‌লেন, হলমার্কের ঘটনার পর সোনালী ব্যাংকসহ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর কর্মকর্তাদের ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে অনেক সংকোচ ও ভীতি তৈরি হয়েছে। এটি থাকা একেবারেই উচিত নয়।

ভয় দূর করে ঋণ অনুমোদনের পরামর্শ দি‌য়ে গভর্নর ব‌লেন, আপনারা (কর্মকর্তারা) যদি সব ধরনের নিয়ম পরিপালন করে ঋণ দেন, তাহলে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়। বিতরণ করা ঋণ কখনো সন্দেহজনক, কখনো মন্দ মানের হবেই। কিন্তু তাই বলে ঋণ দেওয়ার বন্ধ করবেন নাকি? দেশের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে ঋণ দিতে নিয়ম মেনে ঋণ দিলে আপনারা যেন কোনো সমস্যায় না পড়েন, সে বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক সবসময় আপনাদের পাশে থাকবে।

বিজ্ঞাপন

খেলাপি হলে শুরুতেই মামলায় না যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে গভর্নর বলেন, প্রতিষ্ঠান কোনো সমস্যায় পড়লে তাকে যতটুকু সম্ভব সহায়তা করে কর্মযজ্ঞে ফিরে যাওয়ার জন্য সহযোগিতা করতে হবে। কারণ মামলা করলে প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়, কর্মসংস্থানে বাধা তৈরি হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, মুজিববর্ষে আর্থিকভাবে যেন আমরা পিছিয়ে না যাই, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। এখন বিশ্বব্যাপী একটি ভিন্ন রূপে দেখা যাচ্ছে। তা সত্ত্বেও ২০৪১ সালের মধ্যে আমরা উন্নত দেশের কাতারে যেতে চাই। তাই সচেতনতার সঙ্গে আপনাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে।

সোনালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান জিয়াউল হাসান সিদ্দিকী বলেন, আমরা এখন বড় চ্যালেঞ্জের মুখে আছি। আগামী এপ্রিল থেকে সব ব্যাংক ৯ শতাংশ সুদে ঋণ বিতরণ করবে। এখন আমরা যদি অন্যান্য ব্যাংকের চেয়ে বেশি সেবা দিতে না পারি, তাহলে আমরা পিছিয়ে পড়ব।

বিজ্ঞাপন

চেয়ারম্যান জানান, আগামী ১৭ মার্চ প্রথম রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক হিসেবে মোবাইল অ্যাপ চালু কর‌বে। এছাড়া এ বছরের মধ্যেই মোবাইল এজেন্ট ব্যাংকিং, মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস ও রেমিট্যান্স আনার বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছে সোনালী ব্যাংক।

সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আতাউর রহমান প্রধান বলেন, সোনালী ব্যাংকের এ বছরের স্লোগান ‘দীপ্ত শপথ মুজিববর্ষে, আমরা যাব সবার শীর্ষে’। এই স্লোগানকে সামনে রেখে ব্যাংকিং খাতে আমরা শীর্ষে যেতে চাই।

তিনি বলেন, ২০১৯ সালে সরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মুনাফা করেছে সোনালী ব্যাংক। কিন্তু ৫২টি সেবার মধ্যে ৩৭টি সেবা বিনামূল্যে দেওয়ার কারণে প্রায় ৫০০ থেকে ৭০০ কোটি টাকা মুনাফা কম হয় বলেও তিনি জানান।

সারাবাংলা/জিএস/টিআর

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন