Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

রাজপথেই জবাব, রাজপথেই ফয়সালার হুঁশিয়ারি আওয়ামী লীগের

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
১৭ আগস্ট ২০২২ ২১:১৪

ঢাকা: সরকারবিরোধী আন্দোলনের নামে বিএনপি-জামায়াত জোট অপরাজনীতি করলে রাজপথে উপযুক্ত জবাব দেওয়া হবে বলে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। নেতারা বলেন, দেশবিরোধী অপশক্তি বিএনপি ও তার দোসররা রাজপথে আবারও কোনো অগ্নি-সন্ত্রাস, নৈরাজ্য সৃষ্টি করলে রাজপথেই তার ফয়সালা হবে এবং রাজপথেই জবাব দেওয়া হবে। এ লক্ষ্যে নেতাকর্মীদের শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ থেকে থেকে রাজপথে প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

বুধবার (১৭ আগস্ট) বিকেলে সারাদেশে একযোগে এই বিক্ষাভ কর্মসূচি পালন করে বাংলাদশ আওয়ামী লীগ। ১৭ আগস্ট বিএনপি-জামায়াত অশুভ জোট সরকারের শাসনামলে সংঘটিত দেশব্যাপী সিরিজ বোমা হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে টানা মেয়াদে ক্ষমতাসীন দলটি।

রাজধানীর রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনের সামনে মঞ্চ করে সমাবেশ পূর্ব সভা করে। অপপ্রচার-গুজবের মাধ্যমে দেশবিরোধী অপশক্তি বিএনপি ও তার দোসরদের সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য সৃষ্টির উসকানির প্রতিবাদের বিক্ষোভ কর্মসূচিকে ঘিরে শাহবাগ হয়ে মৎস্য ভবন পর্যন্ত চলাচলের রাস্তা যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভা শেষে আইইবি’র সামনে থেকে মিছিল সহকারে মৎস্য ভবন-কদম ফোয়ারা-প্রেসক্লাব ও জিরোপয়েন্ট হয়ে ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।

সমাবেশে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের নেতা, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর দক্ষিণ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। দুপুর আড়াইটা থেকে রাজধানীর বিভিন্ন থানা ওয়ার্ড থেকে সংগঠনের নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে সমাবেশে যোগ দেন।

ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তরের সভাপতি শেখ বজলুর রহমানের সভাপতিত্বে সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দলটির সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

২০০৫ সালে ১৭ আগস্ট বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে দেশব্যাপী পাঁচ শতাধিক জায়গায় সিরিজ বোমা হামলা চালানো হয়। তারপর থেকে দিনটি সিরিজ বোমা হামলার প্রতিবাদ দিবস হিসাবে পালন করে আসছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।

বিজ্ঞাপন

রাজপথে খেলা হবে জানিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘খেলা হবে, আন্দোলনে হবে, রাজপথে হবে, নির্বাচনে হবে। মোকাবিলা হবে; প্রস্তুত হোন, খেলা হবে।’

বিএনপি নেতাদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘বিএনপি বলে আওয়ামী লীগের নাকি পায়ের তলায় মাটি নেই। এই যে জনতার ঢল। বিএনপি এই জনতার ঢল কোনদিনও দেখেনি। কী নিয়ে খেলবেন, গতবারের মতো জগাখিঁচুড়ি ঐক্য করে ধরা খেয়েছেন, এবারও ধরা খাবেন। বিএনপি ধরা খাবে, আবারও ধরা খাবে। সময় ঘনিয়ে আসছে।’

গুলশানের বাড়িতে বসে মির্জা ফখরুল দ্রব্যমূল্য নিয়ে সোনাভানের পুঁথিপাঠ করেছেন জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘মির্জা ফখরুল সাহেব ২০০৬’র সঙ্গে আজকের ২০২২ সালের তুলনা করেন। ২০০৬ বাজেট ৬৯ হাজার কোটি টাকা। আর আজকে শেখ হাসিনার বাজেট হচ্ছে ৬ লাখ ৭১ হাজার কোটি টাকা। কীসের সঙ্গে কী মিলাচ্ছেন?’

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আপনারা জানেন জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের প্রধান মিশেল বাশেলে বাংলাদেশে এসেছেন। আজকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেছেন। মির্জা ফখরুল এখনও শিক্ষা হয়নি। জাতিসংঘে একবার গিয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরে প্রধান কর্মকর্তাদের কারও সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পাননি। ওই নিচের দিকে কেরানীদের সঙ্গে বৈঠক করে নালিশ করে এসেছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিএনপির নাম কী? বাংলাদেশ নালিশ পার্টি। বিএনপির অপর নাম কী নালিশ পার্টি। নালিশ পার্টির কাম কি বিদেশিদের কাছে দেশের বদনাম করা। এই নালিশ পার্টি সন্ধ্যার পরে দেখবেন বিদেশি দূতাবাসে।’

মির্জা ফখরুলের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘ক্ষমতায় বসতে চান? সেই ময়ূর সিংহাসন আর কত দূরে? ফখরুল সাহেব আপনি মিচেল বেশেলেকে বলেছেন, আপনাদের নেতাকর্মী গুম হয়েছে হত্যার শিকার হয়েছে, এ ঘটনার নিন্দা করতে। আপনি বোধহয় জানেন না, আপনি যে নালিশ করেছেন, এই নালিশের বিচার করার এখতিয়ার মিচেল বেশেলের নেই। জাতিসঘের নিয়মকানুন কী জানেন? কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে জাতিসংঘের তদন্ত করার কোনো অধিকার নেই, কোনো এখতিয়ার নেই।’

মির্জা ফখরুল ধান ভানতে শিবের গীত গেয়েছেন দাবি করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমি শুধু আওয়ামী লীগ নেতাদের বলব, কর্মীদের বলব, আপনারা শুধু ঐক্যবদ্ধ থাকবেন।’

সমাবেশ মঞ্চে নির্ধারিত নেতার বাইরে উপস্থিতি দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘আমি জিজ্ঞেস করতে চাই আওয়ামী লীগের মঞ্চে এত নেতা কোথা থেকে এলো? এত নেতা? কর্মী আর থাকবে না, সবাই নেতা হয়ে গেছে। মঞ্চে দুই হাজার লোক হবে বোধহয়। এই নগরীতে আওয়ামী লীগের এত ইউনিট কমিটি, সেই আওয়ামী লীগ কেন মঞ্চমুখী হবে? কর্মীদের সঙ্গে বসবে। এত নেতা কেন? নেতার ভিড়ে কর্মী চেনা কষ্ট, এটি যেন না হয়।’

আওয়ামী লীগ মাটি ও মানুষের দল জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আওয়ামী লীগ বন্দুকের নল থেকে জন্ম নেয়নি। আওয়ামী লীগ জন্ম নিয়েছে এদেশের মাটির গভীর শিকড় থেকে, এদেশের মানুষের মাঝ থেকে। টেইক ব্যাক বাংলাদেশ, আপনাদের বাংলাদেশে আর বাংলাদেশ ফিরে যাবে না।’

বাংলাদেশকে নিয়ে মিথ্যাচার অপপ্রচার চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ বীরের দেশ, কোনদিনও শ্রীলংকা হবে না। বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ কোনোদিনও পাকিস্তান হবে না। আমাদের রিজার্ভ এখন ৪০ থেকে ৪২ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে ওঠানামা করছে। আজকের এই সংকট উত্তরণে জেগে আছেন শেখ হাসিনা।’

আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বোমাবাজির দিন শেষ। এদের রুখতে হবে, এদের মোকাবিলা করতে হবে। আগামী নির্বাচনে প্রমাণ করে দিতে এই দেশ বঙ্গবন্ধুর দেশ,এই দেশ মুক্তিযুদ্ধের এই দেশ শেখ হাসিনার বাংলাদেশ।’

সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘এই দেশ জঙ্গিবাদের নয়, এই দেশ সন্ত্রাসের নয়। এই দেশ শান্তির বাংলাদেশ, জনগণের বাংলাদেশ। শেখ হাসিনার বাংলাদেশ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নের পথে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে।’

সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন,‘ সেই বাংলা ভাইয়ের নেতা তারেক রহমান এখন লন্ডনে বসে স্বপ্ন দেখে, দণ্ডিত তারেক পলাতক তারেক রহমান লুটপাট করা অর্থ নিয়ে গিয়ে লন্ডন থেকে বাংলাদেশের মানুষের শান্তি বিঘ্নিত করতে চায়, আমাদের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করতে চায়।’

বিএনপির উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘বিএনপির কিচ্ছু করার ক্ষমতা নেই। কাদেরকে ভয় দেখান, যাদে রাজপথে জন্ম, রাজপথের দল আওয়ামী লীগকে।’

অপর সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার আর কখনও আসবে না, আসতে দেওয়া হবে না। নিরপেক্ষ সরকারের কথা বলে যারা সন্ত্রাস ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চায় তাদের মোকাবিলা করে উপযুক্ত জবাব দেওয়া হবে।’

অ্যাডভোকেট কামরুল নেতাকর্মীদের বিএনপি-জামায়াত অপশক্তির বিরুদ্ধে শপথ নেওয়ার আহ্বান জানান এবং এদেরকে রাজনীতি থেকে বিতারিত করার আহ্বান বানান। এই অপশক্তিতে, জঙ্গিবাদী অপশক্তিকে বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে বিদায় যতক্ষণ পর্যন্ত না করতে পারব ততক্ষণ পর্যন্ত রাজনীতিতে স্বস্তি শান্তি ফিরে আসবে না। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দুর্বার ঐক্য গড়ে তুলে এদেরকে রাজনৈতিকভাবে প্রতিহত করতে হবে মনে করেন।

বিএনপি আবার বাংলাদেশে সন্ত্রাসের রাজনীতি কায়েম করতে চায় অভিযোগ করে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম বলেন, ‘আজকে আমাদের শপথ নিতে হবে যেই জায়গায় সন্ত্রাস যেই জায়গায় বিএনপি জামায়াত আওয়ামী লীগকে হুমকি দিবে সেই জায়গায় প্রতিবাদ গড়ে তুলতে হবে। আগস্ট মাসের পরে সেপ্টেম্বর মাসে সারাদেশ থেকে বিএনপি-জামায়াতকে বঙ্গোপসাগরে নিক্ষেপ করা হবে।’

সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘এই সরকারের অধীনে বিএনপিকে নির্বাচন আসতে হবে। নির্বাচন পরিচালনা করবে নির্বাচন কমিশন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অনেক সক্ষম। এই পবিত্র সংবিধান রক্ষা করবে বিচার বিভাগ। আজকের এই সমাবেশ প্রমাণ করে আরেকবার বিএনপিকে আমরা ঘরে তুলব।’

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বিএনপির উদ্দেশ্যে বলেন, ‘লাখ লাখ নেতাকর্মী রাজপথে নেমে এসেছে, আমাদের লক্ষ্য একটাই আমরা যে কোনো মূল্যে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়ন অগ্রগতি অব্যহত রাখতে চাই। বিএনপি-জামায়াতের চক্রান্তকে আমরা প্রতিরোধ করেই বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাব। এটাই আমাদের শপথ। উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করতে চায় তাদের সমূলে উৎপাটন করা হবে।’

অপর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আজকে আবার বিএনপির পেট্রল বোমাবাহিনী, অগ্নিসন্ত্রাসীরা মাঠে নেমেছে আজ থেকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আমরাও মাঠে নামলাম। পেট্রল বোমাবাহিনীকে আমরা এই রাজপথ থেকে তাড়িয়ে দিবো। আমাদের নেতাকর্মীরা বেঁচে থাকতে সেটি আমরা হতে দেব না।’

ঢাকা বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বলেন, ‘আগামী দিনে বিএনপির পাতিনেতারা প্রেসক্লাব পল্টনে বসে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অশ্রাব্য ভাষায় বক্ততা দেয় তাহলে এই ঢাকা মহানগরে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তাদের জিব ছিঁড়ে ফেলবে।’

বিক্ষোভ সমাবেশের সভাপতি মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান বলেন, ‘খেলা হবে, খেলায় জিততে হবে।’

সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, এস এম কামাল হোসেনসহ মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের নেতারা।

সারাবাংলা/এনআর/একে

আওয়ামী লীগ আন্দোলন বিএনপি বিক্ষোভ সমাবেশ মির্জা ফখরুল সমাবেশ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর