প্রতিটি এলইডি লাইট স্থাপনে খরচ ৭৫ হাজার টাকা
৪ সেপ্টেম্বর ২০২২ ২১:১০
ঢাকা: লাইট-এমিটিং ডায়োড (এলইডি) স্থাপন করা হচ্ছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন এলাকায়। এ জন্য প্রকল্প সংশোধন করে বাড়ানো হচ্ছে ব্যয়। ১ হাজার ৯১৩টি এলইডি লাইট স্থাপনে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৪ কোটি ৩৫ লাখ ৭২ হাজার টাকা। এক্ষেত্রে প্রতিটি লাইট স্থাপনে খরচ হবে ৭৫ হাজার টাকার বেশি।
এই দাম বিষয়ে সারাবাংলাকে ব্যাখ্যা দিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম।
রোববার (৪ সেপ্টেম্বর) সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘শুধু একটি লাইট নয়, এর সঙ্গে যুক্ত আছে খাম্বা, গোড়ায় ঢালাই, বৈদ্যুতিক কেবল এবং টেকনিক্যাল অনেক বিষয়। আরও থাকবে ১০ বছরের গ্যারান্টিসহ অন্যান্য সুযোগ। এ ছাড়া চীন কিংবা ভারত থেকে নয়, আমরা লাইন কিনব ইউরোপের। যেন এ সব লাইট টেকসই হয়।’
সূত্র জানায়, লাইট স্থাপনের জন্য ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় ‘এলইডি সড়ক বাতি সরবরাহ ও স্থাপন’ শীর্ষক প্রকল্পটির দ্বিতীয় সংশোধনী প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। এ প্রস্তাবটি নিয়ে গত ২৩ আগস্ট অনুষ্ঠিত হয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা। এতে সভাপতিত্ব করেন পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) সত্যজিৎ কর্মকার। গত ২৯ আগস্ট জারি করা ওই সভার কার্য বিবরণী সূত্রে এ সব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, ডিএনসিসি কিছু কিছু এলাকায় সড়ক অবকাঠামো উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়ন করায় এবং প্রকল্পভুক্ত মিরপুর ১২ হতে ফার্মগেট হয়ে সার্ক ফোয়ারা পর্যন্ত এমআরটি লাইন-প্রকল্পে কার্যক্রম বাস্তবায়নাধীন থাকায় প্রকল্পের আওতায় এর আগে এলইডি সড়ক বাতি স্থাপন করা যায়নি। এ ছাড়া ডিএনসিসিসিতে হস্তান্তর কার্যক্রম নিশ্চিত না হওয়াসহ বিভিন্ন রাস্তার উন্নয়ন কার্যক্রম চলমান থাকার কারণে রাস্তাগুলো সড়ক বাতি স্থাপনের উপযোগী না হওয়ায় মিরপুর অঞ্চল-২ এর অধিক্ষেত্র ওয়ার্ড নং ৬, ইষ্টার্ন হাউজিং, ব্লক-এল, ওয়ার্ড নং-৭ এর আওতাধীন রুপনগর খালপাড় রোড, অঞ্চল-৩ (গুলশান) এর অধিক্ষেত্রভুক্ত মগবাজার-মালিবাগ ফ্লাইওভার, বনানী স্টাফ রোড কাবাব ঘর (সার্ভিস রোড), অঞ্চল-৪ (মিরপুর) অধিক্ষেত্রভুক্ত গাবতলী বেড়িবাধ (দিয়াবাড়ি মোড় হতে গাবতলী হয়ে সুইচ গেট পর্য়ন্ত) এবং অঞ্চল-৫ (কারওয়ান বাজার) বসিলা গার্ডেন সিটি, আরাম ও দয়াল হাউজিংয়ের মেইন রোডগুলো প্রকল্পের আওতায় এর আগে এলইডি সড়ক বাতি স্থাপন করা যায়নি।
এরমধ্যে উল্লেখিত এলাকা, রাস্তা সড়কবাতি স্থাপনের উপযোগী হয়েছে। ফলে এসব এলাকায় এলইডি বাতি স্থাপনের জন্য নতুনভাবে একটি পূর্ত প্যাকেজ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ প্যাকেজের আওতায় মোট ১ হাজার ৯১৩টি এলইডি সড়ক বাতি সংযোজনের জন্য ১৪ কোটি ৩৫ লাখ ৭২ হাজার টাকা ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে। এক্ষেত্রে নতুন প্যাকেজের আওতায় প্রকল্প এলাকা নির্ধারণের যৌক্তিকতা এবং প্রকল্প এলাকার ম্যাপিং বিষয়ে পিইসি সভায় আলোচনা করা হয়।
পিইসি সভায় আইএমইডির প্রতিনিধি বলেন, ‘প্রস্তাবিত প্রকল্পের লগফ্রেম যথাযথভাবে প্রণয়ন করা হয়নি। একটি প্রকল্পের বাস্তবায়ন পর্যায়ে এবং সমাপ্তির পর মূল্যায়ন করার ক্ষেত্রে লগফ্রেম একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসাবে বিবেচনা করা হয়। লগফ্রেমের বস্তুনিষ্ঠ যাচাই নির্দেশক হিসাবে বিদ্যুৎ খরচ ৫০ শতাংশ হ্রাস করা, প্রকল্পের সমাপ্তিতে কার্বন নির্গমন হ্রাস করা, রাত্রীকালীন নাগরিকের হাঁটাচলা ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি করা প্রভৃতি উল্লেখ করা হয়েছে, যা পরিমাপ করা বাস্তবসম্মত নয়। এ ছাড়া প্রকল্পের আওতায় ৪৮ হাজার ৮১২টি এলইডি লাইট স্থাপনের পর তার সঠিকতা নিশ্চিত করে তা যাচাই মাধ্যম লগফ্রেমে উল্লেখ করা হয়েছে কিনা সেটিও সুস্পষ্ট নয়। সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) প্রতিনিধিও সভায় একই অভিমত ব্যক্ত করেন।
আইএমইডির প্রতিনিধি আরও বলেন, ‘চলতি বছরের জুনে প্রণীত সরকারি খাতে উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়ন, প্রক্রিয়াকরণ, অনুমোদন ও সংশোধন নির্দেশিকা অনুসরণে সংশোধিত প্রকল্প প্রস্তাব প্রণয়ন করা হয়নি। এছাড়া প্রকল্পের লগফ্রেম লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য লগফ্রেমের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।’
পিইসি সভায় অংশ নিয়ে কার্যক্রম বিভাগের প্রতিনিধি বলেন, ‘প্রথম সংশোধিত প্রকল্পে পেট্রোল, ওয়েল ও লুব্রিকেন্ট খাতে ৫৪ লাখ ৫৫ হাজার টাকা বরাদ্দ ছিল, যা দ্বিতীয় সংশোধিত প্রস্তাবে বর্ধিত করে এক কোটি ৯ লাখ ৪৪ হাজার টাকা করা হয়েছে। অর্থাৎ এ অঙ্গে ৫৪ লাখ ৮৯ হাজার টাকা বাড়ানো হয়েছে। অপরদিকে যানবাহনের সংখ্যা (ডাবল কেবিন পিকআপ) ১০ থেকে কমিয়ে ৫ করা হয়েছে। এ ছাড়া বর্তমানে জ্বালানি খাতসহ বিভিন্ন রাজস্ব খাতের ব্যয় হ্রাসের জন্য অর্থ বিভাগ থেকে নিদেশনা জারি করা হয়েছে। কাজেই এ খাতে ব্যয় হ্রাস করা দরকার।’
সভায় বলা হয়, দ্বিতীয় সংশোধিত প্রকল্প প্রস্তাবে স্থানীয় প্রশিক্ষণ খাতে ৩০ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক প্রশিক্ষণ খাতে ৫০ লাখ টাকা প্রাক্কলন করা হয়েছে। এ ছাড়া সম্মানী খাতে ৪ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। অর্থ বিভাগ হতে গত ৩ জুলাই জারি করা পরিপত্রে উন্নয়ন প্রকল্পের বিভিন্ন কমিটির সম্মানী বাবদ ব্যয় স্থগিত করার বিষয়ে উল্লেখ রয়েছে। সব ধরনের স্থানীয় প্রশিক্ষণ, বৈদেশিক প্রশিক্ষণ এবং সম্মানী খাতে এরইমধ্যে ব্যয় করা অর্থ রেখে অবশিষ্ট অর্থ পুনর্গঠিত ডিপিপি থেকে বাদ দেওয়ার বিষয়ে সভায় একমত হন কর্মকর্তারা।
সভায় আর ও বলা হয়, প্রথম সংশোধিত প্রকল্প প্রস্তাবে প্যাকেজ সংখ্যা ছিল ১৮টি। দ্বিতীয় সংশোধিত প্রস্তাবে প্যাকেজ সংখ্যা একটি বাড়িয়ে ১৯টি করা হয়েছে যেখানে ১৯ নং প্যাকেজের আওতায় ১ হাজার ৯১৩টি এলইডি সড়ক বাতি স্থাপনের জন্য ১৪ কোটি ৩৫ লাখ ৭২ হাজার টাকা ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে। নতুন প্যাকেজ না করে পিপিএ ও পিপিআর অনুসরণে ভেরিয়েশনের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় এলইডি লাইট স্থাপন সম্ভব ছিল কিনা, এ বিষয়ে সভায় জানতে চাওয়া হয়। এছাড়া নতুন প্যাকেজের ক্রয় পদ্ধতি হিসাবে ডিপিএম কেন নির্বাচন করা হয়েছে তা নিয়েও সভায় আলোচনা হয়।
এ পরিপ্রেক্ষিতে সভায় প্রকল্প পরিচালক বলেন, ‘সর্বশেষ অনুমোদন অনুযায়ী প্রকল্পটির মেয়াদ চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্ধারিত হয়। নতুন প্যাকেজ (প্যাকেজ নং ১৯) অন্তর্ভুক্ত করে দ্বিতীয় সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য চলতি বছরের মার্চ মাসে স্থানীয় সরকার বিভাগে পাাঠানো হয়। দ্বিতীয় সংশোধনী প্রস্তাব মোতাবেক প্রকল্পের মেয়াদ চলতি বছরের ডিসেম্বরেই নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে দ্বিতীয় সংশোধনী প্রস্তাব দাখিলের পর এরমধ্যে ৫ মাসের অধিক সময় অতিবাহিত হয়েছে। তাই দ্বিতীয় সংশোধনী অনুমোদনের পর প্রস্তাবিত ১৯ নং প্যাকেজের কার্যক্রম শুরু করে চলতি বছরে কোনোভাবেই সম্ভব হবে না। তাই প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত বর্ধিত করার বিষয়ে প্রস্তাব করেন।’
সভায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা বলেন, ‘প্রকল্পটি মোট ৩৬৯ কোটি ১৪ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয় এবং ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ডিসেম্বরে বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকার মোট আয়তন ৮২ দশমিক ৬৩৮ বর্গ কিলোমিটার, যা ৫টি প্রশাসনিক জোনে বিভক্ত। ডিএনসিসির আওতাধীন বিভিন্ন সড়কে বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের সড়ক বাতি এবং টিউবলাইট রয়েছে, যা মূলত লাইনম্যান, সুইচম্যান দ্বারা ম্যানুয়ালি পরিচালনা করা হয়ে থাকে । পুরাতন বাতিগুলো অধিক বিদ্যুতের প্রয়োজন হয় ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য অধিক অর্থ ব্যয় হয়। তাই এ লাইটং থেকে অতিমাত্রায় কার্বন-ডাই অক্সইড নিঃসরণের কারণে পরিবেশের ক্ষতি হয়। এ জন্য ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ট্রাফিক ও পথচারীদের সহজ ও নিরাপদ যাতায়াতের জন্য বিভিন্ন ওয়াটের বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ও আধুনিক এলইডি স্ট্রিট লাইট স্থাপনের জন্য প্রকল্পটি নেওয়া হয়। যা ২০১৭ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি একনেকে মোট ৪৪২ কোটি ১৪ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ২০১৭ সালের জানুয়ারি হতে ২০১৮ সালে ডিসেম্বরে বাস্তবায়নের জন্য একনেকে অনুমোদিত হয়।’
পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ পুলিশ ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় সিসিটিভি স্থাপন করে একটি প্রকল্প নেয়। বাস্তব প্রয়োজনীয়তার জন্য এলইডি লাইট সংখ্যার হ্রাস বৃদ্ধির কারণে এ প্রকল্প সিসিটিভি অঙ্গ বাদ দিয়ে ও লাইটের সংখ্যা নিরুপণ করে ২০১৯ সালের ২৭ আগস্ট প্রকল্পটির প্রথম সংশোধন অনুমোদিত হয়।
মোট ৩৬৯ কোটি ১৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে বাস্তবায়নের জন্য প্রকল্পটির অনুমোদন দেওয়া হয়। পরে স্থানীয় সরকার বিভাগ প্রথমবার ৬ মাস অর্থাৎ ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত মেয়াদ বৃদ্ধি করে। বর্তমানে লাইটের নতুন প্যাকেজ স্থাপন করায় প্রকল্পটির দ্বিতীয় সংশোধনী প্রস্তাব করা হয়েছে।
সারাবাংলা/জেজে/একে
এলইডি বাল্ব ডিএনসিসি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন পরিকল্পনা কমিশন বাল্ব স্থাপন প্রকল্প