৬ মাসে কোটিপতি বেড়েছে সাড়ে ৬ হাজার
৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১৫:১১
ঢাকা: করোনা মহামারি পরবর্তী সময়ে দেশের অর্থনীতি চাঙ্গা হওয়ায় পাশাপাশি বেড়েছে কোটিপতি ব্যাংক হিসাবধারীর সংখ্যা। চলতি ২০২২ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিক (জুন) শেষে দেশে কোটিপতি ব্যাংক হিসাবধারীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৮ হাজার ৪৫৭ জন। এর আগে, ২০২১ সালের ডিসেম্বরের শেষে দেশে কোটিপতি হিসাবধারীর সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১ হাজার ৯৭৬টি। সে হিসাবে সর্বশেষ ছয় মাসে দেশে কোটিপতি হিসাবধারীর (ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান) সংখ্যা বেড়েছে ৬ হাজার ৪৮১টি। প্রতি মাসে কোটিপতি হিসাবধারী বাড়ছে এক হাজার ৮৯ জন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।
এ ব্যাপারে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রতিবছর দেশ থেকে কোটি কোটি টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে। এটা বন্ধ করা গেলে কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা আরও বাড়তো। তারপরেও বলব, এই অর্থগুলো পাচার না হয়ে ব্যাংকে জমা হচ্ছে। এটা খুবই আশাব্যাঞ্জক খবর।’
তিনি বলেন, ‘দেশে একদিকে দারিদ্র জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বাড়ছে অন্যদিকে বাড়ছে কোটিপতির সংখ্যা। দেশে কোটিপতি বাড়ার মাধ্যমে জনগণের মাঝে আয়ের বৈষম্য সৃষ্টি হচ্ছে। এটা অশুভ লক্ষণ বলেই মনে হচ্ছে।’ মির্জ্জা আজিজ বলেন, ‘কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা বাড়াটা যেমন ইতিবাচক তেমনি আয়ের বৈষম্য বেড়ে যাওয়াটাও নেতিবাচক।’
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, সর্বশেষ গত ৩০ জুন ব্যাংকগুলোতে (জুন প্রান্তিক শেষে) মোট ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা ১২ কোটি ৯৫ লাখ ১৪ হাজার ৫১৩টি। এ সব হিসাবে মোট জমার পরিমাণ ১৫ লাখ ৭৩ হাজার ৮২৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে কোটি টাকার হিসাবে জমা রয়েছে ৬ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ মোট আমানতের ৪৩ শতাংশ কোটিপতির দখলে।
কোটিপতি ব্যাংক হিসাবে জমার পরিমাণ
জানা গেছে, কোটিপতি আমানতকারীর মধ্যে ১ কোটি ১ টাকা থেকে ৫ কোটি টাকার আমানত রয়েছে, এমন আমানতকারীর সংখ্যা ৮৫ হাজার ৮৪১টি। এসব হিসাবে মোট জমার পরিমাণ ১ লাখ ৭৬ হাজার ৯০৮ কোটি টাকা। অন্যদিকে ৫ কোটি ১ টাকা থেকে ১০ কোটির মধ্যে রয়েছে ১১ হাজার ৮৬৫টি ব্যাংক হিসাব। এসব হিসাবে মোট ৮৪ হাজার ৬৬ কোটি টাকা রয়েছে।
অন্যদিকে, ১০ কোটি ১ টাকা থেকে ১৫ কোটি টাকার ব্যাংক হিসাব রয়েছে ৩ হাজার ৭৬৩টি। ১৫ কোটি ১ টাকা থেকে ২০ কোটির মধ্যে ১ হাজার ৭১৯টি, ২০ কোটি ১ টাকা থেকে ২৫ কোটির মধ্যে ১ হাজার ১৫১টি, ২৫ কোটি ১ টাকা থেকে ৩০ কোটির মধ্যে হিসাব রয়েছে ৮৮৩টি। ৩০ কোটি ১ টাকা থেকে ৩৫ কোটি টাকার মধ্যে ৫০২টি এবং ৩৫ কোটি ১ টাকা থেকে ৪০ কোটির মধ্যে রয়েছে ৩০৭টি হিসাব। আর ৪০ কোটি ১ টাকা থেকে ৫০ কোটি টাকার অ্যাকাউন্ট সংখ্যা ৬২১টি।
জানা গেছে, ২০২০ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকে কোটিপতি হিসাবধারীর সংখ্যা ছিল ৯৩ হাজার ৮৯০ জন। ২০২১ সালের জুনে তা বেড়ে হয়েছে ৯৯ হাজার ৯১৮ জন। একই বছরের ডিসেম্বর শেষে দেশে কোটিপতির সংখ্যা হয় ১ লাখ ১ হাজার ৯৭৬ জন। সর্বশেষ চলতি বছরের ৩০ শে জুন শেষে দেশে কোটিপতি হিসাব ধারীর সংখ্যা বেড়ে দাড়িয়েছে ১ লাখ ৮ হাজার ৪৫৭ জন।
উল্লেখ্য, ১৯৭২ সালে দেশে কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা ছিল পাঁচজন। ১৯৭৫ সালে এ সংখ্যা বেড়ে হয় ৪৭ জনে। দেশে ১৯৮০ সালে কোটিপতি ছিলেন ৯৮ জন, ১৯৯০ সালে ৯৪৩ জন, ১৯৯৬ সালে দুই হাজার ৫৯৪ জন, ২০০১ সালে পাঁচ হাজার ১৬২ জন, ২০০৬ সালে আট হাজার ৮৮৭ জন এবং ২০০৮ সালে ১৯ হাজার ১৬৩ জন কোটিপতি গ্রাহক ছিলেন। ২০১৮ সালের ৩১ শে ডিসেম্ভর পর্যন্ত দেশে কোটিপতির সংখ্যা ছিলো ৭৫ হাজার ৫৬৩ জন। ২০২০ সালের ৩১ শে ডিসেম্ভর পর্যন্ত সময়ে দেশে কোটিপতি আমানতকারী বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৩ হাজার ৮৯০ জন। ২০২১ সালের ডিসেম্বর শেষে দেশে কোটিপতির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১ হাজার ৯৭৬ জন। সর্বশেষ চলতি বছরের ৩১ শে মার্চ শেষে দেশে কোটিপতির সংখ্যা হয়েছে ১ লাখ ৩ হাজার ৫৯৭ জন।
সারাবাংলা/জিএস/পিটিএম