‘উন্নয়ন অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে নিরলস পরিশ্রম করে যাব’
১০ অক্টোবর ২০২২ ২৩:৩৮
ঢাকা: দেশের সার্বিক উন্নয়নে কাজ অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা যাতে অব্যাহত থাকে তার জন্য আমরা নিরলস পরিশ্রম করে যাব। এটাই আমাদের অঙ্গীকার।
সোমবার (১০ অক্টোবর) দেশের প্রথম ছয় লেনের মধুমতি সেতুসহ দু’টি ও শীতলক্ষ্যা নদীর ওপর নির্মিত ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা এ কে এম নাসিম ওসমান তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। এদিন প্রধানমন্ত্রী তার কার্যালয়ের চামেলী হল প্রান্ত থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তৃতা করছিলেন।
এ সময় দুই সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, নড়াইল এবং নারায়ণগঞ্জ সেতুপ্রান্তে স্থানীয় নেতা ও প্রশাসনের কর্মকর্তাসহ উপকারভোগীরা উপস্থিত ছিলেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সবসময় নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছে। জনগণের সমর্থন নিয়ে দেশে গণতান্ত্রিক ধারাটা অব্যাহত রেখেছে। তৃতীয় দফায় সরকারে এসে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। সমগ্র বাংলাদেশ আমি সফর করেছি। বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য সব থেকে বেশি প্রয়োজন যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি। আমরা সেই অনুযায়ী সাধ্য মতো চেষ্টা করেছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশ। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আমরা এগিয়ে যাব। করোনাভাইরাস মহামারির ধাক্কা আর ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ আমাদের উন্নয়নের গতিকে অনেকটা শ্লথ করে দিয়েছে। শুধু আমরা নয়, সারাবিশ্বের মানুষ সেটা ভোগ করছে। সেজন্য আবেদন থাকবে, আমরা যুদ্ধ চাই না, শান্তি চাই, মানুষের উন্নতি চাই। এই যুদ্ধে অস্ত্র বিক্রি করতে যে অর্থ ব্যয়ের প্রতিযোগিতা হয় সেই অর্থ বিশ্বের শিশুদের জন্য ব্যয় করা হোক। তাদের চিকিৎসা, শিক্ষা ও ভালো জীবনের জন্য ব্যয় করা হোক।’
তিনি বলেন, ‘আমি আজ সত্যিই খুব আনন্দিত। আমরা এই সেতু দু’টি আজ সম্পূর্ণ করতে পেরেছি। আমাদের বন্ধু দেশ সৌদি আরব এবং জাপানকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’ এছাড়া বাংলাদেশের বিভিন্ন চলমান উন্নয়ন প্রকল্পে বন্ধুপ্রতিম দেশগুলো যে সহযোগিতা করছে সেকথাও স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের উন্নয়নে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে এই দু’টি সেতু। যা আমাদের দেশের মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়নে ব্যাপকভাবে ত্বরান্বিত হবে। আমি মনে করি- যোগাযোগ ব্যবস্থা, মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা, ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসার ঘটানো এবং আন্তর্জাতিক যোগাযোগে বিশেষ করে আমরা সাউথ এশিয়ার একটা জায়গায় আছি। যেখানে আমাদের সঙ্গে নেপাল, ভুটান, ইন্ডিয়ার একটা সংযোগ হবে। ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়বে। আমরা আমাদের পোর্টগুলোকে আঞ্চলিক সহযোগিতার জন্য বন্ধুপ্রতিম দেশগুলোর জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছি।’ সেইসঙ্গে বিমানবন্দরগুলোও তাদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘নড়াইলের আমি এমপি ছিলাম। আমি মনে করি, এখনও আমি সেখানকার এমপি।’ এই যোগাযোগের ফলে অবহেলিত অঞ্চলগুলো আরও বেশি উন্নতি লাভ করবে বলেও আশাবাদ করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের টানা মেয়াদে সারাদেশের যোগাযোগ নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার বিভিন্ন দিক তুলে ধরে বলেন, ‘এখন আমরা দাবি করতে পারি, বাংলাদেশের প্রতিটি এলাকার মাঝেই একটি সংযোগ স্থাপনে সক্ষম হয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘পদ্মা সেতু নির্মাণ আমাদের জন্য বিরাট চ্যালেঞ্জ ছিল। পদ্মা সেতু নিয়ে আমাদের ওপর বদনাম দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল। দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়েছিল। আমি পদ্মা সেতুকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিলাম এবং তখনই প্রতিজ্ঞা করেছিলাম নিজেদের অর্থায়নে এই সেতু নির্মাণ করব। আল্লাহর রহমতে আমরা তা করতে সক্ষম হয়েছি। আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে শুকরিয়া- এই শক্তিটা তিনি আমাকে দিয়েছেন। আর বাংলার মানুষ দিয়েছে সাহস।’
মধুমতি সেতু চালু হওয়ার ফলে ট্রান্স এশিয়ান সড়ক নেটওয়ার্কে যুক্ত হওয়ার প্রসঙ্গ তুলে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এখন বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক মহাসড়কের সঙ্গে সংযুক্ত করার একটি সুযোগ সৃষ্টি হলো।’
এদিন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় প্রান্তে অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন- সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং জাপানের রাষ্ট্রদূতসহ প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
সারাবাংলা/এনআর/পিটিএম