প্রশ্নপত্রে নেপাল-গোপাল কাণ্ড: ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন
৮ নভেম্বর ২০২২ ২২:২১
ঢাকা: চলতি বছর ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের এইচএসসি পরীক্ষায় বাংলা প্রথম পত্রের পরীক্ষায় বিতর্কিত প্রশ্নপত্রের প্রণয়নের ঘটনায় যশোর শিক্ষা বোর্ড ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত শেষ করে কমিটি তা বোর্ডে জমা দেবে। পরে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে।
তদন্ত বোর্ডের প্রধান করা হয়েছে যশোর মাধ্যমিক ও উচ্ছ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক এম রব্বানীকে। তদন্ত কমিটিতে আরও রয়েছেন বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক মো. সিরাজুল ইসলাম ও উপ কলেজ পরিদর্শক মদন মোহন দাস। মঙ্গলবারই ওই প্রশ্নপ্রণয়নকারী ও চার মডারেটরকে চিহ্নিত করছে বোর্ড।
বোর্ড সূত্র জানায়, তারা ৫ জনই যশোর শিক্ষাবোর্ডের অধীনে বিভিন্ন কলেজের শিক্ষক। প্রশ্ন প্রণয়নকারীর নাম প্রশান্তকুমার পাল। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন যশোর শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর মাধব চন্দ্র রুদ্র। প্রশ্ন প্রনয়ণকারী ও ৪ পরিশোধনকারী (মডারেটর)সহ পাঁচ শিক্ষকই যশোর বোর্ডের।
যশোর শিক্ষাবোর্ড সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রোববার এইচএসসি বাংলা প্রথমপত্র পরীক্ষায় ঢাকা বোর্ডের প্রশ্নপত্রের একটি সৃজনশীল প্রশ্ন নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়। এ নিয়ে সরকারের শিক্ষা বিভাগসহ বিভিন্ন অংশে কথা ওঠে। ওই প্রশ্নের উদ্দীপক হিসেবে এমন বিষয়কে বেছে নেওয়া হয়েছে, যা খুবই সংবেদনশীল বিষয়। এটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও মিডিয়ায় আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠে। বলা হচ্ছে, এতে সাম্প্রদায়িক উসকানি রয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে ঢাকা বোর্ড কর্তৃপক্ষ প্রশ্নপত্রের প্রণয়নকারী ও পরিশোধনকারীদের (মডারেটর) চিহ্নিত করার উদ্যোগ নেয়। মঙ্গলবার তারা প্রশ্নপত্র প্রণয়নকারী শিক্ষক এবং পরিশোধনকারী চার শিক্ষককে চিহ্নিত করে।
চিহ্নিত শিক্ষকরা হলেন, প্রশ্নপত্র প্রণয়নকারী ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার ডা. সাইফুল ইসলাম ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক প্রশান্ত কুমার পাল এবং চার মডারেটর শিক্ষক নড়াইলের সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের সহযোগী অধ্যাপক সৈয়দ তাজউদ্দিন শাওন, সাতক্ষীরা সরকারি মহিলা কলেজের সহযোগী অধ্যাপক মো. শফিকুর রহমান, নড়াইলের মির্জাপুর ইউনাইটেড কলেজের সহকারী অধ্যাপক শ্যামল কুমার ঘোষ ও কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা আদর্শ কলেজের সহকারী অধ্যাপক মো. রেজাউল করিম।
যশোর শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ প্রফেসর মাধব চন্দ্র রুদ্র জানিয়েছেন, এটি খুবই দুঃখজনক ঘটনা। সবাই সিনিয়র শিক্ষক ও সচেতন, তারপরও এমন ঘটনা। প্রশ্ন প্রণয়নের সময় এ সব বিষয় বারবার সতর্ক করা হয়। ওই প্রশ্ন প্রণয়নকারী এবং চারজন মডারেটর সবাই যশোর শিক্ষা বোর্ডের অধীনস্ত প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক। ঢাকা বোর্ড তাদের চিহ্নিত করে যশোর বোর্ডকে জানিয়েছে।
তিনি আরও জানান, এ জাতীয় প্রশ্ন করার কোনো সুযোগ নেই। তারপরও কীভাবে এই প্রশ্নপত্র হলো সেটি তদন্তের জন্য দ্রুত একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে সর্বোচ্চ কঠোর আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। আপাতত বোর্ডের সমস্ত কাজ থেকে ওই শিক্ষককে বিরত রাখা হবে। এ ছাড়া শিক্ষা মন্ত্রণালয় বা শিক্ষা বিভাগ পরবর্তী ব্যবস্থা নেবে।
এদিকে বিষয়টি নিয়ে কথা বলার জন্য, প্রশ্নপত্র প্রনয়ণকারী মহেশপুর উপজেলার ডা. সাইফুল ইসলাম ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক প্রশান্ত কুমার পালের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।
প্রশ্নপত্রের মডারেটরদের একজন সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের সহযোগী অধ্যাপক মো. শফিকুর রহমান বলেন, ‘৪ সেট প্রশ্নপত্রের ৪৪টি সৃজনশীল অংশ থাকে। সেগুলোর উদ্দীপক দেখতে হয়। প্রতিটি প্রশ্নের জন্যে আবার ৪টি করে প্রশ্ন থাকে। সবই দেখতে হয়। আমরা বেশি সতর্ক থাকি বানান, প্রশ্ন কাঠামো, সিলেবাস সম্পর্কিত অংশসহ নির্ভুলতা নিয়ে। উদ্দীপক পড়া হয়, বড় আকার অসঙ্গতি না হলে ওভাবে ধরা পড়ে না।’
তিনি বলেন, ‘অতি সতর্ক থাকার পরও হয়ত উদ্দীপকের অত গভীরে ঢোকা হয়নি, বস্তুত এটি আমাদের মাথায় আসেনি। তবে ঘটনাটা খুবই দুঃখজনক।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ ধরনের প্রশ্ন থাকলে তা সংশোধন করে দেওয়া হয়; অথবা কেটে নতুন প্রশ্ন সংযোজন করা হয়। কিন্তু কীভাবে এই প্রশ্নটি রয়ে গেল তা বুঝতে পারছি না।’
যা আছে প্রশ্নে
প্রশ্নের উদ্দীপক অংশে বলা হয়, ‘নেপাল ও গোপাল দুই ভাই। জমি নিয়ে বিরোধ তাদের দীর্ঘদিন। অনেক সালিশ-বিচার করেও কেউ তাদের বিরোধ মেটাতে পারেনি। কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ। এখন জমির ভাগ-বণ্টন নিয়ে মামলা চলছে আদালতে। ছোট ভাই নেপাল বড় ভাইকে শায়েস্তা করতে আবদুল নামে এক মুসলমানের কাছে ভিটের জমির এক অংশ বিক্রি করে।
‘আবদুল সেখানে বাড়ি বানিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে। কোরবানির ঈদে সে নেপালের বাড়ির সামনে গরু কোরবানি দেয়। এই ঘটনায় নেপালের মন ভেঙে যায়। কিছুদিন পর কাউকে কিছু না বলে জমি-জায়গা ফেলে সপরিবারে ভারতে চলে যায় সে।’
সারাবাংলা/একে