Thursday 05 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘সারাজীবন কি লজ্জিত হয়েই থাকবো?’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২৫ নভেম্বর ২০২২ ০৯:২৯

ঢাকা: স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পরও এসে একাত্তরে যে অমানুষিক ত্যাগ স্বীকার করেছিলেন তার বদলে সম্মান বা অর্থনৈতিক সুবিধার পরিবর্তে অসম্মান আর অবমাননার শিকার হচ্ছেন বীরাঙ্গনা নারীরা। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন পাকিস্তানী বাহিনীর হাতে অমানবিক নির্যাতনের শিকার নারীদের বীরাঙ্গনা স্বীকৃতি মিললেও মেলেনি সামাজিক সম্মান। এর পাশাপাশি দারিদ্র আর ক্ষুধার করাঘাতে ধুঁকে ধুঁকে মৃত্যুবরণ করেছেন অনেকেই। যারা বেঁচে আছেন, কিন্তু স্বীকৃতি পাননি, তাদের প্রশ্ন ‘সারাজীবন কি লজ্জিত হয়েই থাকবো আমরা?’

বৃহস্পতিবার (২৪ নভেম্বর) নারীপক্ষে আয়োজিত মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন যৌন সহিংসতার শিকার বীরাঙ্গনা নারীদের প্রথম সংহতি সম্মেলন শেষে সংবাদ সম্মেলনে এমনটাই বলছিলেন রাজশাহীর চারঘাটের বীরাঙ্গনা নারী সফুরা। সংবাদ সম্মেলনে নারী পক্ষ থেকে ও বীরাঙ্গনা নারীদের নিজেদের বয়ানে উঠে আসে দুর্দশার চিত্র।

সম্মেলন শেষে উন্নয়ন সংস্থা নারীপক্ষের নাসরিন হক মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সাংবাদিক সম্মেলনে তাদের দাবি ও বর্তমান প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন সংস্থার সদস্য ও নারীনেত্রী শিরীন হক। এসময় উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সদস্য সাফিয়া আজিম ও আইনজীবী কামরুন নাহার।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ২০১৫ সালের জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ বীরাঙ্গনাদেরকে মুক্তিযোদ্ধার মর্যাদা দেওয়ার প্রস্তাব পাশ করার পর ২৩ অক্টোবর বাংলাদেশ সরকার প্রথমবারের মতো ৪৩ জন বীরাঙ্গনাকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এর ফলে তারা মুক্তিযোদ্ধাদের মতই ভাতা পান। কিন্তু এই সংখ্যা এখন পর্যন্ত হাজারও পেরোয়নি।’

ভাতার জন্য আবেদন করে বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে করতে মারাও গেছেন অনেকে। তাদেরই একজন জেলেখা। ৭০ বছর বয়সে চলতি বছরের ৩ আগস্ট স্বীকৃতিহীন অবস্থায় মারা যান তিনি। ১৯৭১ সালে তার বয়স ছিল ১৯ বছর কিন্তু আবেদনপত্রে সাহায্যকারী সরকারি কর্মকর্তা লেখেন ৮। বহুবছর ঘুরেও মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এটি সংশোধন করাতে পারেননি জেলেখা।

শিরীন হক বলেন, ‘জেলেখার প্রশ্ন ছিল, ওরা ভুল করছে এখন ওরা কেন ঠিক করতে পারছে না?’

জেলেখা মারা গেলেও সরকারি তালিকাভুক্ত হওয়ার আশায় আছেন আরও হাজারো বীরাঙ্গনা নারী। শিরীন হক বলেন, ‘বীরাঙ্গনা নারীদের মধ্য থেকে যারা দরিদ্র পরিবার থেকে এসেছেন, স্বাধীনতার পর তাদের জীবন আরও দুঃসহ হয়ে ওঠে। অনেককেই স্বামী, শ্বশুরবাড়ি বা বাবার বাড়ি থেকেও আর গ্রহণ করেনি। যারা বেঁচে ছিলেন তারা তো বটেই, তাদের সন্তানদের জীবনও কাটে অপমানজনক কথা শুনতে শুনতে। এসব নারীদের বড় অংশই রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি না পাওয়ায় দুর্বিসহ জীবন কাটিয়েছেন। অনেকেই কঠিন কায়িক শ্রমের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করতেন। বর্তমানে বয়স্ক এসব নারীরা চিকিৎসা তো দূরের কথা, ঠিকমত খেতেও পান না অনেকে। অপুষ্টি ও রোগ-বালাইয়ে ভুগছেন অনেকেই। ৬৫ যার বয়স, অপুষ্টির জন্য তাকেও দেখায় পঁচাশির মত।’

তালিকাভুক্তির ক্ষেত্রে ঘুষবাণিজ্য ও লেখাপড়া না জানার কারণে বঞ্চিত হচ্ছেন অনেকে। আবার ভাতাপ্রাপ্তদের অনেকে সন্তান বা অন্য সাহায্যকারীদের দ্বারা বঞ্চনার শিকার হন। পরিবার থেকে সঠিক চিকিৎসা, পুষ্টিকর খাবার ও বাসস্থানের ব্যবস্থা করা হয় না। এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণে জাতীয়ভাবে একটি মনিটরিং কমিটি করার আহ্বান জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।

জানা যায় গত এগারো বছরে ৮৫ জন বীরাঙ্গনা নারীর তালিকা করেছে নারীপক্ষ। এদের মধ্যে কয়েকজন সরকারি স্বীকৃতি পেয়েছেন আবার অনেকেই মারা গেছেন। বর্তমানে এই তালিকার ৪৮ জনকে তারা মাসিক পাঁচ হাজার টাকা করে দেন। এর আগে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ৪৬ জনকে দুই হাজার টাকা করে দিতেন তারা। চলতি বছরের শুরু থেকে যে ৪৮ নারী পাঁচ হাজার টাকা করে পান তা দিয়ে সন্তুষ্ট হলেও বর্তমানে দ্রব্যমূল্যের ঊর্দ্ধগতির কারণে সেটাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস আর ওষুধ কিনতে হিমশিম খেয়ে যাচ্ছেন তারা।

প্রসঙ্গত, এদিন সকালে অনলাইনে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে তিন জেলার বীরাঙ্গনা নারী এবং মিয়ানমারের সেনাবাহিনী দ্বারা যৌন সহিংসতার শিকার রোহিঙ্গা নারীরা অংশ নেন।

সারাবাংলা/আরএফ/এমও

নারী পক্ষ বীরাঙ্গনা


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর