Tuesday 26 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘মানুষের চেতনাকে শাণিত করেছে শিল্পীর তুলির আঁচড়’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
৮ ডিসেম্বর ২০২২ ১৯:২৭

ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যেকোনো অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে যখন দেশের মানুষ সংগ্রাম করেছে সেই প্রতিবাদের ভাষা সংস্কৃতিসেবীরা আরও সমৃদ্ধ করেছেন। মানুষের চেতনাকে শাণিত করেছে শিল্পীর তুলির আঁচড়। তাই আমরা প্রত্যন্ত অঞ্চলে সংস্কৃতিমনা মানুষদের মেধা, মনন, জ্ঞান ও ক্ষমতা বিকশিত করার পদক্ষেপ নিয়েছি।

বৃহস্পতিবার (৮ ডিসেম্বর) মাসব্যাপী ‘১৯তম দ্বি-বার্ষিক এশীয় চারুকলা প্রদর্শনী বাংলাদেশ-২০২২’ উদ্বোধনকালে তিনি একথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন।

বিজ্ঞাপন

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আমাদের এই সংস্কৃতি সেবা একেবারে তৃণমূল পর্যায়ের মানুষের কাছে নিয়ে যেতে চাই। একদিকে তাদের যেমন আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য আমরা কাজ করছি, পাশাপাশি তাদের শিল্প মনের বিকাশও যাতে হয় সেই পদক্ষেপও আমরা নিচ্ছি।’

শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর থেকে তার সরকার শিল্পকলা একাডেমি যাতে সুন্দরভাবে গড়ে ওঠে তার মাস্টার প্ল্যান তৈরি করে। সেখানে জাতীয় নাট্যশালা, এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার, স্টুডিও থিয়েটার, সঙ্গীত ও নৃত্যকলা মিলনায়তন, চারুকলা মিলনায়তন ও উন্মুক্ত মঞ্চ নির্মাণ করা হয়। আরও তিনটি মিলনায়তন নির্মাণের কাজও চলছে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা ৬৪ জেলায় শিল্পকলা একাডেমির নতুন ভবন তৈরি করে দিয়েছি। ৪৯৩টি উপজেলায় শিল্পকলা একাডেমি স্থাপন করা হয়েছে। অর্থাৎ আমরা এই সংস্কৃতি সেবা একদম তৃণমূল পর্যায়ের মানুষের কাছে নিয়ে যেতে চাই।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘এ সব জায়গায় আমাদের দেশি-বিদেশি চিত্রকর্ম সংরক্ষণ ও প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। চারুকলা, সঙ্গীত, নৃত্য, নাটক চলচ্চিত্র, ঐতিহ্যবাহী লোকসঙ্গীত বা লোক সংস্কৃতি এসব উৎসবেরও আয়োজন করা হচ্ছে। কারণ, আমাদের নিজস্ব যে সংস্কৃতি আছে সেটাও যাতে বিকশিত হয়, সেই প্রচেষ্টা চালাচ্ছি।’

বিজ্ঞাপন

সংস্কতি চর্চা যেন গ্রাম পর্যায়ে পৌঁছানো যায় সেজন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেওয়া নানা পরিকল্পনা ও পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার পর দেশীয় শিল্প-সংস্কৃতি চর্চা এবং বিকাশের লক্ষ্যে ১৯৭৪ সালে জাতির পিতা বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি প্রতিষ্ঠা করেন। আমরা প্রায় সারাদেশে শিল্পকলা একাডেমি প্রতিষ্ঠায় কাজ করছি। এর মধ্য দিয়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলে যে সকল সংস্কৃতিমনা মানুষ আছেন, তাদের সেই শিল্প মনন, জ্ঞান ও সক্ষমতা যাতে বিকশিত করতে পারি সেই পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শিল্প-সংস্কৃতি যেকোনো জাতির আত্মপরিচয় বহন করে। শিল্পীর তুলির আঁচড়েই উঠে আসে একটি দেশ ও জাতির রাজনৈতিক অবস্থান এবং তাদের সাংস্কৃতিক অবস্থান বা প্রাকৃতিক পরিবেশ। আমাদের মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার আদায়ের সংগ্রামও প্রাণ পেয়েছিল শিল্পীর আঁচড়ে। বাংলাদেশের প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছেন আমাদের শিল্পীরা।’

ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধিকার আন্দোলন সবকিছুতেই শিল্পীরা বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের শিল্পীদের তুলির আঁচড়েই উঠে এসেছে বাংলাদেশের সংস্কৃতি, জীবনযাত্রা, প্রাকৃতিক পরিবেশ, ঋতু বৈচিত্র্য।’

সবসময় শান্তির স্বপক্ষে তার অবস্থানের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পৃথিবীর মানুষ যেন শান্তিতে বাস করতে পারে এবং মানুষের জীবনমান যাতে উন্নত হয় সেটাই আমরা চাই। আমরা সব সময় শান্তি চাই। আমরা শান্তিতে বিশ্বাস করি। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো- একদিকে করোনা মহামারি, আরেকদিকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। যে যুদ্ধ আসলে সারা বিশ্বের মানুষকে কষ্ট দিচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি জানি কবি, শিল্পী, সাহিত্যিকদের মাধ্যমে এই ধরনের কষ্ট, মানুষের দুঃখ, যন্ত্রণা ও যুদ্ধের যে ভয়াবহতা সেটাও উঠে আসবে; যাতে এই ধরনের যুদ্ধ যেন আর না হয়।’

বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশের আসা শিল্পীদের ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা কষ্ট করে আমাদের এই সুজলা, সুফলা ও সুন্দর বাংলাদেশে এসেছেন। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আপনারা এখানে আসার ফলে বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতি বা চিত্রকর্ম অথবা তাদের মানসিক বিকাশের যে সুযোগ সেখান থেকে অনেকেই জ্ঞান আহরণ করতে পারবে। একে অপরকে জানতে পারবে। একে অপরের শিল্পী মনকে জানতে পারবে।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি মনে করি এটা আমাদের শিল্পীদের জ্ঞানকে আরও সমৃদ্ধশালী করবে। আরও নতুন নতুন চিন্তা-চেতনার ধারা নিয়ে আসবে।’

সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে অনুষ্ঠিত এই প্রদর্শনীতে ছয় শিল্পীকে সম্মানসূচক পুরস্কার এবং অন্য তিনজনকে গ্র্যান্ড অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত করা হয়েছে। অনুষ্ঠানের জুরি বোর্ডের সভাপতি শিল্পী রফিকুন নবী পুরস্কার প্রাপ্তদের নাম ঘোষণা করেন। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ পুরস্কার প্রাপ্তদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।

কে এম খালিদের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সংস্কৃতি সচিব মো. আবুল মনসুর, জুরি বোর্ডের সদস্য এবং বিশিষ্ট পোলিশ শিল্প সমালোচক জারোস্লা সুচান, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক এবং ‘১৯তম দ্বিবার্ষিক এশীয় চারুকলা প্রদর্শনী বাংলাদেশ-২০২২’র প্রধান সমন্বয়কারী লিয়াকত আলী লাকী বক্তৃতা করেন।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় আর্ট গ্যালারিতে ৮ ডিসেম্বর থেকে ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত অনুষ্ঠেয় প্রদর্শনীতে বাংলাদেশসহ ১১৪টি দেশের প্রায় ৪৯৩ জন শিল্পীর মোট ৬৪৯টি শিল্পকর্ম প্রদর্শিত হবে।

সারাবাংলা/এনআর/পিটিএম

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর