Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বেসরকারি হাসপাতালে সিজারে সন্তান প্রসবের হার বেড়েছে দ্বিগুণ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
৩ জানুয়ারি ২০২৩ ২২:৩৩

ঢাকা: দেশে সরকারি হাসপাতালের তুলনায় বেসরকারি হাসপাতালে সিজারের মাধ্যমে সন্তান প্রসবের হার দ্বিগুণ বেড়েছে। দেশের সিটি করপোরেশনের মধ্যে বস্তি, বস্তির বাইরে ও জেলা পৌরসভায় সরকারি হাসপাতালে যেখানে সিজারে সন্তান প্রসবের হার ৪৪ শতাংশ, সেখানে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে তা ৮৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ। এছাড়া ৪১ শতাংশের সিজারে সন্তান প্রসব করানো হয়ে থাকে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার (এনজিও) আওতাধীন প্রতিষ্ঠানে।

বিজ্ঞাপন

জাতীয় জনসংখ্যা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের (নিপোর্ট) এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। মঙ্গলবার (৩ জানুয়ারি) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে সারাদেশে তৃতীয় বাংলাদেশ আরবান হেলথ সার্ভে (বিইউএইচএস) ২০২১-এর ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে এসব তথ্য তুলে ধরে সংস্থাটি।

প্রতিষ্ঠানটি জানায়, দেশের ৩৫ হাজার ৮৬০ জনের ওপর এই গবেষণা চালানো হয়। সিটি করপোরেশনের বস্তি ও বস্তির বাইরের জনসংখ্যার মাঝে এই গবেষণা পরিচালনা করা হয়। এছাড়াও জেলা পৌরসভার অবশিষ্ট শহুরে জনসংখ্যা এবং বড় শহর যেখানে ৪৫ হাজারের বেশি জনসংখ্যার বাস সেসব এলাকাও এই গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এই গবেষণায় ১২ থেকে ৪৯ বছর বয়সী নারী, ১৫ থেকে ৫৪ বছর বয়সী বিবাহিত পুরুষ, পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু এবং সমাজের নেতারা অংশ নেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বাস্থ্যসেবা প্রদানে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। কিন্তু ব্যবসায়িক মানসিকতা ও অতি মুনাফা লাভের আশায় স্বাভাবিক প্রসবের চেয়ে অস্ত্রোপচারে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। এটি দেশের জন্য মহাবিপদের বার্তা। এ জন্য সরকারি প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়মের মধ্যে আনা জরুরি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

জরিপে দেখা যায়, সিটি করপোরেশনের বস্তি এলাকায় সরকারিতে অস্ত্রোপচারে সন্তান প্রসবের হার ৪৪ শতাংশ হলেও বেসরকারিতে তা ৭৫ শতাংশ। একইভাবে সিটি করপোরেশনের বস্তির বাইরের এলাকায় সরকারি হাসপাতালে সিজারে সন্তান প্রসবের হার ৫১ শতাংশ হলেও বেসরকারিতে এই হার সেখানে ৮৭ শতাংশ। এছাড়াও পৌরসভার বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের সন্তান জন্মদানের হার ৩৭ শতাংশ হলেও বেসরকারিতে তা ৮৮ শতাংশ।

বিজ্ঞাপন

এর বাইরে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার (এনজিও) আওতাধীন তিন শ্রেণির (সিটি করপোরেশনের বস্তি, বস্তির বাইরে ও পৌরসভা) প্রতিষ্ঠানে এই হার যথাক্রমে ২৫ শতাংশ, ৫১ শতাংশ ও ৪৭ শতাংশ।

গবেষণার ফলাফলকে গুরুত্ব দিয়ে এ বিষয়ে বিশেষ নজর দেওয়া দরকার বলে মনে করেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এ কে এম নুরুন্নবী। তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্য ব্যবস্থার গত ১৫ বছরের তুলনামূলক চিত্র এখানে উঠে এসেছে। যেখানে দেখা যাচ্ছে, শহরে কেন জানি একটু কম গুরুত্ব পাচ্ছে। প্রাতিষ্ঠানিক ডেলিভারি (প্রসব) বাড়লেও সিজারের হার আশঙ্কাজনক। এটি ভাববার বিষয়। এ জন্য সরকারের নীতিনির্ধারকদের বিশেষ নজর দেওয়া দরকার।’

স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব ড. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার বলেন, ‘আমরা দেখছি গর্ভবতী নারীদের প্রথম সেবা নেওয়ার হার কিছুটা আশা দেখালেও চতুর্থ ধাপে খুবই হতাশাজনক। করোনা মহামারিতে কম বয়সে গর্ভধারণ বেড়েছে- এটা ঠিক, কিন্তু স্বাভাবিক সময়ে যে খুব একেবারে ভালো তা নয়। উপজেলা ও জেলা শহরে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার বড় একটি গ্যাপ রয়েছে। এটির উন্নতি জরুরি। এটাকে আলাদা অপারেশন প্ল্যানে নেওয়া হচ্ছে। এসব সেবায় আরও গুরুত্ব বাড়াতে এটি করতে হচ্ছে।’

অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘ফার্টিলিটি রেটে বস্তি এলাকায় জনসংখ্যার হার কমছে। বস্তি ও দরিদ্র মানুষের মাঝেও বাল্যবিবাহ নিয়ে সচেতনতা বাড়ছে। সবক্ষেত্রেই ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। বস্তি এলাকায় গর্ভাবস্থায় স্বাস্থ্যসেবা নেওয়ার হার বেড়েছে। কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক ডেলিভারির হার বাড়লেও সিজার বাড়ছে। এটি কমাতে হবে। এ জন্য প্রান্তিক পর্যায় থেকেই পরিবর্তন আনতে হবে। সেখানে ২৪ ঘণ্টা সেবা দেওয়া গেলে এটি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।’

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের মহাপরিচালক শাহান আরা বানু, স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা অধিদফতরের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. টিটো মিঞা প্রমুখ।

সারাবাংলা/এসবি/পিটিএম

বেসরকারি হাসপাতাল সন্তান প্রসব সিজার

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর