ঘন কুয়াশা আর তীব্র শীতে দক্ষিণাঞ্চলের জনজীবনও বিপর্যস্ত
৬ জানুয়ারি ২০২৩ ০৯:০১
বরিশাল: উত্তরের পাশাপাশি বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলেও জেঁকে বসেছে শীতের তীব্রতা। টানা ৪ দিন প্রচণ্ড শীতে জনজীবন জবুথুবু হয়ে পড়েছে। ভোর থেকে ঘন কুয়াশায় ঢাকা থাকছে চারপাশ। কুয়াশার কারণে অল্প দূরের দৃশ্যও দেখা দুরূহ হয়ে পড়েছে। দুর্ঘটনা এড়াতে মহাসড়কে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছে যানবাহন। শীত জেঁকে বসায় শঙ্কিত হয়ে পড়ছেন প্রান্তিক ও নিম্ন আয়ের মানুষ।
প্রচণ্ড শীতের কারণে বরিশালের মানুষের জনজীবন থমকে পড়েছে। শীত আর হিমেল হাওয়ার কারণে সবচেয়ে বেশি সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন বৃদ্ধ ও শিশুরা। তবে তীব্র শীতের কারণে জমে উঠেছে গরম কাপড়ের ব্যবসা, মিলছে ক্রেতাদের ব্যাপক সাড়া।
নগরীর রূপাতলী এলাকার বাসিন্দা ব্যাংকার আসাদুজ্জামান মিয়া বলেন, ‘হাড়কাঁপানো শীত কিছুক্ষণের জন্য সূর্য উঁকি দিলেও তাতে তেজ নেই। দিনভর বাতাসে শীতের দাপট। বেলা গড়াতেই বাড়তে থাকে ঠাণ্ডা। ঘর থেকে বের হলেই শরীরে কাঁপন ধরে।’
নগরীর নবগ্রাম সড়কের বাসিন্দা মো. আব্দুল হামিদ বলেন, ‘সকালে ঘুম থেকে উঠে অফিসে যেতে হয়। প্রায় ৯টা পর্যন্ত কুয়াশায় চারপাশ ঢাকা থাকে। তারপরও কাজে যেতে হয়। বাধ্য হয়ে কর্মস্থলে যেতে হচ্ছে। তবে এ অবস্থায় সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাচ্ছে বাচ্চারা। শীতের মধ্যেই স্কুলে যাচ্ছে তারা।’
সদর উপজেলার চরবাড়িয়া এলাকার কৃষি শ্রমিক শংকর দাস বলেন, ‘তীব্র শীতে হাত-পা জমে যাওয়ার মতো অবস্থা। এই পরিস্থিতিতে মাঠে থাকাটাও কষ্টকর। ঘরের বেড়ার ফাঁক দিয়ে ক্রমাগত ঠাণ্ডা বাতাস প্রবেশ করায় ২-৩টা কাঁথা-কম্বল দিয়েও শীত মানানো যাচ্ছে না।’
নগরী ঘুরে দেখা গেছে, শীতের তীব্রতায় মানুষ রীতিমতো জবুথবু। গায়ে গরম কাপড় ও টুপি পরে তারা শীতের দাপট থেকে রক্ষা পাওয়ার চেষ্টা করছেন। লঞ্চ টার্মিনাল, বাসস্ট্যান্ড ও বস্তিগুলোর সামনে ছিন্নমূল মানুষ কাগজ-খড়কুটো পুড়িয়ে একটু উষ্ণতা পাওয়ার চেষ্টা করছেন। খেটে খাওয়া মানুষ পাচ্ছেন না ঠিকমতো কাজ।
হতদরিদ্র রাহিমা বেগম বলেন, ‘গরিবের জন্য এ দুনিয়ায় কেউ নেই। প্রতিবার কম্বল পাই, এবার তাও কেউ দেয়নি। আল্লাহ কপালে রাখলে বাঁচবো, আর না হলে শীতের মধ্যেই মরে যাবো।’
নগরীর সাগরদি এলাকার রিকশাচালক রহিম বলেন, ‘জীবিকার তাগিদে ঠাণ্ডা উপেক্ষা করে সকালে রিকশা নিয়ে নামতে হয়। একদিন বসে থাকলে ঘরে রান্না চলবে না। শীতের কারণে ৩-৪ দিন ধরে রিকশা চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। বিরূপ আবহাওয়ায় লোকজন কম বের হওয়ার তেমন যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না। তাই দৈনিক আয়ও কমে গেছে।’
বরিশালের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকে খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, প্রচণ্ড শীতের কারণে হাসপাতালে ঠাণ্ডাজনিত রোগের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। প্রতিদিন হাসপাতালে আসছে শিশু থেকে বিভিন্ন বয়সের লোকজন। প্রতিদিন তাদের সংখ্যাও বাড়ছে। তীব্র শীত আরও কয়েকদিন একই অবস্থায় থাকলে শীতজনিত রোগের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। চিকিৎসকরা শীতকালীন রোগবালাই থেকে রক্ষা পেতে গরম পানি পান করাসহ সবসময় গরম কাপড় ব্যবহারের জন্য পরামর্শ দিচ্ছেন।
বরিশাল আবহাওয়া অধিদফতরের উচ্চ পর্যবেক্ষক মাসুদ রানা রুবেল বলেন, ‘মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। এর প্রভাব বরিশালসহ সারাদেশের আকাশ আংশিক মেঘলা রয়েছে। তবে মেঘ কেটে গেলে শীত আরও বাড়তে পারে। আবহাওয়ার এমন পরিস্থিতি আগামী দুই থেকে তিন দিন বিরাজমান থাকবে। বিভিন্ন এলাকায় মাঝারি ও তীব্র ঘন কুয়াশা পড়বে। এর প্রভাবে নদী পথ ও তার আশপাশের এলাকাগুলোতে দুপুর পর্যন্ত কুয়াশা বিরাজ করার সম্ভাবনা রয়েছে।’ জানুয়ারি মাসের মধ্যভাগে বা শেষভাগে বরিশালে মৃদু শৈত্যপ্রবাহের সম্ভাবনার কথা জানান তিনি।
সারাবাংলা/এমও