ইবিতে শ্রেণিকক্ষের দাবিতে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে মানববন্ধন
২১ জানুয়ারি ২০২৩ ২২:৩০
ইবি: নির্দিষ্ট শ্রেণিকক্ষ বরাদ্দের দাবিতে অফিস কক্ষে তালা ঝুলিয়ে ও ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে মানববন্ধন করেছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ল’ অ্যান্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
শনিবার (২১ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে প্রশাসন ভবনের সামনে কয়েকশ’ শিক্ষার্থী মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন। একইসঙ্গে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ক্লাস-পরীক্ষা ও বিভিন্ন কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছেন তারা। পরে এই দাবিতে বেলা ১২টার দিকে তিন শতাধিক শিক্ষার্থীর স্বাক্ষর সংবলিত উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। স্মারকলিপিতে কক্ষ বরাদ্দ ছাড়াও বিভিন্নভাবে হুমকির অভিযোগ তুলে তদন্ত সাপেক্ষে সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
ক্যাম্পাস সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের ৩ অক্টোবর বিভাগটির যাত্রা শুরু হলেও বিভাগীয় দফতর ও শ্রেণিকক্ষ ছিল না। পরে বিভিন্ন অনুষদীয় বিভাগে তাদের ক্লাস-পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতো। পরবর্তীতে মীর মশাররফ হোসেন একাডেমিক ভবনের দ্বিতীয় তলায় বিভাগের ও শিক্ষকদের অফিসে এবং নিচতলায় মৌখিকভাবে ‘ধার করা’ একটি শ্রেণিকক্ষে পাঠদান চলে। তবে ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ থেকে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের মোট চারটি ব্যাচের ক্লাস-পরীক্ষা এক কক্ষে সম্পন্ন করতে হিমশিম খান শিক্ষকরা। এদিকে মীর মশাররফ হোসেন একাডেমিক ভবনের চতুর্থ তলার নির্মানকাজ সম্পন্ন হলে তাদের বরাদ্দ দেওয়া হবে বলে জানা যায়।
মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা জানান, একাডেমিক ভবনটির নির্মানকাজ সম্পন্ন হওয়ার পর চতুর্থ তলার একটি অংশে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের অফিস করা হবে বলে জানতে পারেন শিক্ষার্থীরা। অফিস করার জন্য ‘প্রভাব খাটিয়ে’ নকশাতেও পরিবর্তন আনা হয়েছে। এ বিষয়টি জানার পর মঙ্গলবার চতুর্থ তলার দুই পাশে (উত্তর ও পূর্ব) আসবাবপত্র স্থানান্তর করেন। পরবর্তীতে বুধবার থেকে তারা বিভাগীয় কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়ে সেখানে অবস্থান করেন। চতুর্থ তলায় অবস্থানকালে শিক্ষার্থীরা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বিভিন্ন হুমকি-ধামকির শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ তুলেন। এছাড়াও তারা ‘প্রাণনাশের হুমকি’র অভিযোগ তুলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রশাসনের কাছে সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন।
শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘অন্তত ১০ দিন আগে চতুর্থ তলার অন্য দুই পাশে সদ্য চালু হওয়া একটি বিভাগ আসবাবপত্র ঢুকিয়েছে। পরে আমাদের বিভাগীয় শিক্ষকদের জানালে তারা সদুত্তর দিতে পারেননি। ওই বিভাগের ফার্নিচার ঢুকে গেল অথচ পাঁচ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত একটি বিভাগ কোথাও ঠাঁই পেল না। তাই আমরা বিভাগীয় শিক্ষকদের নির্দেশ অমান্য করে এক প্রকার বাধ্য হয়েই আসবাবপত্র সহ চতুর্থ তলায় উঠে যাই।’
প্রাণনাশের হুমকির অভিযোগ তুলে শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘চতুর্থ তলায় উঠার পর থেকেই বিভিন্ন মহল থেকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বিভিন্ন হুমকি-ধমকির শিকার হচ্ছি। এমনকি সেখান থেকে নেমে না গেলে রক্তের বন্যা বয়ে যাবে বলেও হুমকি দেওয়া হয়। এমন অবস্থায় আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। তাই আমরা প্রশাসনের কাছে নিরাপত্তা ও তদন্ত সাপেক্ষে সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।
পরে একই দাবিতে বেলা ১২টার দিকে উপাচার্য বরাবর তিন শতাধিক শিক্ষার্থীর স্বাক্ষর সম্বলিত স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। উপাচার্যের অনুপস্থিতে স্মারকলিপি গ্রহণ করেন দায়িত্বপ্রাপ্ত উপাচার্য (উপ-উপাচার্য) অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান। এ সময় শিক্ষার্থীরা তাদের দাবি তুলে ধরলে উপ-উপাচার্য তা মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেন। পরে শিক্ষার্থীরা আজকের মত আন্দোলন স্থগিত করলেও অন্যান্য কর্মসূচি অব্যাহত রাখেন।
বিভাগটির সভাপতি সাহিদা আখতার বলেন, ‘প্রতিষ্ঠার পাঁচ বছর পেরিয়ে গেলেও একটি পূর্ণাঙ্গ বিভাগে যা যা লাগে তার কিছুই আমাদের নেই। একটি কক্ষও আমাদের জন্য বরাদ্দ ছিল না। শিক্ষর্থীরা দীর্ঘদিন ধরে কষ্ট করে ক্লাস-পরীক্ষা দিয়ে আসছে। এখন তারা আমাদের কোনো কথাই আর শুনছে না। আমরা তাদের বুঝিয়ে ক্লাস-পরীক্ষায় ফেরানোর চেষ্টা করছি। প্রশাসনকে আমরা বিষয়টি জানিয়েছি।’
দায়িত্বপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘ভবনটির চতুর্থ তলার কাজ এখনো শেষ হয়নি। কাজ শেষ হলে ঠিকাদাররা আমাদের ভবন বুঝিয়ে দেবেন। তারপর আমরা বরাদ্দের বিষয়ে এগুব। সেখানে কারোরই কোনো বরাদ্দ নেই।’
হুমকির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা নিরাপত্তাহীনতায় থাকবে এটি হতে পারে না। যদি কেউ এরকম হুমকি দিয়ে থাকে তাহলে গুরুতর অপরাধ করেছে। ভিসি স্যার ক্যাম্পাসের বাইরে আছেন তিনি ফিরলে আমরা বিষয়টি নিয়ে বসব।’
সারাবাংলা/একে