দুদকের জিজ্ঞাসাবাদে সাড়া দিলেন না বাচ্চু
১৭ ডিসেম্বর ২০১৭ ১৬:০৮
স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
বেসিক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আবদুল হাই বাচ্চু দুদকের তৃতীয় দফা জিজ্ঞাসাবাদে সাড়া দেননি। আজ রোববার সকালে দুদকের প্রধান কার্য্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য উপস্থিত হওয়ার কথা থাকলে শেষ পর্যন্ত তিনি আসেননি। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) বিশেষ টিমের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে তিনি এক মাসের সময় চেয়েছেন। তবে দুদক তাকে কতদিন সময় দিবে কিংবা দিবে কিনা তা এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। দুদক সূত্র সারাবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এ ব্যাপারে দুদকের উপপরিচালক প্রনব কুমার ভট্টাচার্য সারাবাংলাকে বলেন, আজ রোববার বেসিক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আবদুল হাই বাচ্চুকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুদকে আসার কথা থাকলেও তিনি আসেননি। বরং তিনি রাজধানীর এ্যাপোলো হাপাতালে ভর্তি আছেন জানিয়ে এক মাসের সময় চেয়েছেন।
দুদক সূত্র জানায়, শেখ আবদুল হাই বাচ্চু স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, তার হার্টে সমস্যা থাকায় তিনি রাজধানীর অ্যাপোলো হাসপাতালে ভর্তি আছেন। ফলে আগামী এক মাস তার পক্ষে দুদকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য উপস্থিত হওয়া সম্ভব নয়।
উল্লেখ্য গত ৪ ও ৬ ডিসেম্বর দুই দফায় দুদকে বেসিক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারমান শেখ আবদুল হাই বাচ্চুকে দুদকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। দুদকের পরিচালক জায়েদ হোসেন খান ও সৈয়দ ইকবাল হোসেনের নেতৃত্বে ১২ সদস্যের একটি বিশেষ টিম শেখ আবদুল হাই বাচ্চুকে ৪ ও ৬ ডিসেম্বর দুই দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করেন। দ্বিতীয় দফা জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে বাচ্চু অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে দুদক কার্যালয়ের চিকিৎসক ডা. জ্যোতির্ময় চৌধুরী তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে জানান, তিনি সুস্থ আছেন।
দুদক সূত্র জানায়, গত ৪ ডিসেম্বর প্রথমবারের মতো বেসিক ব্যাংকের সাবেক পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান শেখ আবদুল হাই বাচ্চুকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক। ওইদিন জিজ্ঞাসাবাদে তিনি ব্যাংকের সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা ঋণ অনিয়ম ও জালিয়াতির ঘটনা জানেন বলে স্বীকার করেন বাচ্চু। তবে এর জন্য তিনি ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) কাজী ফখরুল ইসলাম, তিন ডিএমডি ও তিন শাখা ব্যবস্থাপকের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা তিনটি সিন্ডিকেটকে দায়ী করেন। তখন বাচ্চু আরো বলেন, ‘আমাকে পুনরায় বেসিক ব্যাংকের দায়িত্ব দেয়া হলে আমি ব্যাংক থেকে বের হয়ে যাওয়া টাকা পুনরুদ্ধার করে দেব।’ তার এমন দাবিকে এক ধরনের ‘মশকারা’ হিসেবে অভিহিত করেছেন তদন্তকারী এক কর্মকর্তা।
দুদক কর্মকর্তারা বলেন, ঋণ অনুমোদনে অনিয়মের ঘটনায় বেসিক ব্যাংকের পরিচালনা বোর্ডের জড়িয়ে পড়ার বিষয়ে তিনি (বাচ্চু) প্রথম ও দ্বিতীয় দফায় কোন সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেননি, তাই তাকে তৃতীয় দফায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হয়েছিল।
সূত্র জানায়, ২০০৯ সাল থেকে ২০১২ সালের মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংকের গুলশান, দিলকুশা ও শান্তিনগর শাখা থেকে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ জালিয়াতির ঘটনা ঘটে। ওই সময়ে অর্থ্যাৎ ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৪ সালের ৪ জুলাই পর্যন্ত ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদেও চেয়ারম্যান ছিলেন শেখ আবদুল হাই বাচ্চু। অভিযোগ রয়েছে, তৎকালীন পরিচালনা পর্ষদের প্রভাবে বেসিক ব্যাংকের কর্মকর্তারা ঋণপত্র যাচাই না করে, জামানত ছাড়া, জাল দলিলে ভুয়া ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ব্যাংকটির তিনটি শাখা থেকে, বিধি বহির্ভূতভাবে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা ঋণ অনুমোদন করে। বাস্তবে ওইসব ঋণগ্রহিতাদের কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। আবদুল হাই বাচ্চুর নেতৃত্বাধীন পর্ষদ ২০১২ সালের এপ্রিল থেকে ২০১৩ সালের মার্চ পর্যন্ত মাত্র ১১ মাসে নজিরবিহীন অনিয়মের মাধ্যমে ৩ হাজার ৪৯৩ কোটি ৪৩ লাখ টাকা ঋণের নামে বিভিন্নজনকে দিয়ে দেয়।
সূত্র জানায়, ব্যাপক সমালোচনা মুখে ২০০৯ সাল থেকে ২০১২ সালের মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংকের গুলশান, দিলকুশা ও শান্তিনগর শাখা থেকে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ অনিয়মের অভিযোগ আমলে নিয়ে দুদক অনুসন্ধান শুরু করে। দীর্ঘ ৪ বছর অনুসন্ধান শেষে ২০১৫ সালের ২১, ২২ ও ২৩ সেপ্টেম্বর রাজধানীর গুলশান, পল্টন ও মতিঝিল থানায় ৫৬টি মামলা দায়ের করে দুদক। মামলাগুলোতে সুদসহ ২ হাজার ৫৯০ কোটি ৪৯ লাখ ৯১ হাজার ৪৫৩ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়। তবে ৫৬ মামলার কোনটিতেই বেসিক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ও তৎকালীন পরিচালনা পর্ষদের কাউকে আসামী করা হয়নি। পরে উচ্চ আদালত থেকে প্রশ্ন তোলা হয়, বোর্ড সদস্যরা কেন আসামির তালিকায় নেই। তাদের বিষয়ে তদন্তের নির্দেশ আসার পর দুদক থেকে বেসিক ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ সদস্যদেরও জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন।
সারাবাংলা/জিএস/এমএ/জিআ