Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

কেউ অপবাদ দিলে মেনে নেব না: প্রধানমন্ত্রী

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৮:২৯

ঢাকা: আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন,বাংলাদেশের মানুষ আত্মমর্যাদা নিয়েই চলে। আমাদের কেউ অপবাদ দিলে আমরা তা মানব না। তাই জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাস-মাদক-দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।

শনিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার সাদুল্যাপুর ইউনিয়নের ভাঙ্গারহাট তালিমপুর-তেলিহাটি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।

বিজ্ঞাপন

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এবার গোপালগঞ্জবাসীর জন্য একগুচ্ছ উন্নয়ন উপহার নিয়ে নিজ নির্বাচনী এলাকায় আসেন প্রধানমন্ত্রী। সকাল আটটার পর গণভবন থেকে সড়কপথে গোপালগঞ্জের উদ্দেশে রওয়ানা হন তিনি।

পদ্মা সেতু পাড়ি দিয়ে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় পৌঁছান তিনি। পরে গোপালগঞ্জবাসীর জন্য উন্নয়ন উপহার হিসাবে ৪৮টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। ৪৩টি নবনির্মিত উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন ও ৫টি উন্নয়ন প্রকল্পের নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।

পরে কোটালীপাড়া উপজেলার সাদুল্যাপুর ইউনিয়নের ভাঙ্গারহাট তালিমপুর-তেলিহাটি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হসিনার নিজ নির্বাচনী এলাকা এটি। দীর্ঘদিন পর কোটালীপাড়াবাসী প্রধানমন্ত্রীকে পেয়ে তার প্রতি কৃতজ্ঞ জানাতে জনসভায় মানুষের ঢল নামে।

টানা মেয়াদে সরকার গঠনের ধাারাবাহিকতা অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে এরইমধ্যে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিভাগীয় শহরসহ জেলা সদরে জনসভায় অংশ নিচ্ছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। এর আগে ২০১৮ সালে শেখ লুৎফর রহমান ডিগ্রি কলেজ মাঠে তিনি জনসভায় বক্তব্য রাখেন।

বিজ্ঞাপন

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি এই এলাকা থেকে নির্বাচন করি। আর পাঁচজন সংসদ সদস্যের মতো হয়ত সরাসরি সবসময় আসতেও পারি না যোগাযোগও করতে পারি না। কারণ আমার ৩০০ সিটেরই দায়িত্বের পাশাপাশি এই বাংলাদেশির মানুষের সার্বিক আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি। একটা ঘনবসতিপূর্ণ দেশ। নানা রকম দুর্যোগ। কখনো প্রাকৃতিক দুযোর্গ কখনো বিএনপি জামায়াতের অগ্নসন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড। এই নানা কারণে তার ওপরে এলো করোনা ভাইরাসের অতিমারি। আমাকে অতিরিক্ত ব্যস্ত থাকতে হয় বলে জানান তিনি।

প্রধানমন্ত্রী কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, ‘বাবা-মা-ভাই সব হারিয়ে আমি নিঃস্ব রিক্ত। কিন্তু আপনারা আমাকে বুকে স্থান দিয়েছেন। আমার নির্বাচন থেকে শুরু করে সব বিষয়ে আপনারা যেভাবে আমার পাশে দাঁড়িয়েছেন। আপনাদের মাঝে আমি ফিরে পাই আমার হারানো বাবা হারানো ভাই হারানো মাায়ের স্নেহ। আপনাদের মাঝ থেকেই আমি সেই স্নেহ ভালবাসা পেয়ে থাকি। এটাই আমার জীবনে সবথেকে বড় পাওয়া। এটাই আমার জীবনে সবথেকে বড় পাওয়া।’

তিনি আরও বলেন, ‘সব হারানোর এ ব্যথা-বেদনা কষ্ট সহ্য করেও এদেশের মানুষের জন্য আমার বাবা সব কষ্ট সহ্য করেছেন। সারাজীবন কাজ করেছেন, জেল জুলুম অত্যাচার সহ্য করেছেন। আমরা ছেলেমেয়ে হিসেবে বাবার স্নেহ বঞ্চিত হয়েছি। কিন্তু এদেশের মানুষকে তিনি গভীরভাবে ভালবাসতেন। আর সেই মানুষগুলোর ভাগ্য পরিবর্তনের জন্যই আমি আমার জীবনকে উৎসর্গ করেছি এবং আমি সেইভাবেই কাজ করে যাচ্ছি। এই বাংলাদেশের দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোঁটাবার জন্য আমার বাবা যে কাজ করে গেছেন তার সেই অসম্পূর্ণ কাজ যেন সম্পূর্ণ করে এই বাংলাদেশের মানুষের দুঃখ দারিদ্রতা দূর করে একটু উন্নত জীবন দিতে পারি।’

‘আমি নিশ্চিত মনে কাজ করতে পারি একটাই কারণে কারণ কোটালীপাড়া টুঙ্গিপাড়াবাসী সবসময় আমার পাশে থাকেন। আমার সময় দুঃসময় আনন্দের সময় আনাদের কাছে পাই আর এই শক্তিটাই বড় শক্তি। এই শক্তিটা আপনারা আমাকে দিয়েছেন’ বলেও জানান তিনি।

আমরা শত সমস্যার মধ্যে দেশের উন্নয়ন অব্যাহত রেখে যাচ্ছি। যদিও করোনা ভাইরাস অতিমারির কারণে অনেক সমস্যা দেখা দিয়েছে। সারাবিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিয়েছে ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধের কারণে। কিন্তু বাংলাদেশে এখনো আমাদের অর্থনীতির গতিকে অব্যাহত রাখতে পেরেছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ঢাকা থেকে আগে গোপালগঞ্জ, টুঙ্গিপাড়া-কোটালীপাড়ায় আসতে স্টিমার বা লঞ্চে ২২ থেকে ২৪ ঘণ্টা সময় লাগত। মাত্র আড়াই ঘণ্টার মধ্যে আমরা এখানে পৌঁছে গেছি। আর পদ্মা সেতু নির্মাণ নিয়ে অনেক অপবাদ দেওয়ার চেষ্টা হয়েছি। সেটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিলাম। কারণ দুর্নীতি করে নিজের ভাগ্য গড়তে আসিনি। জনগণের ভাগ্য গড়তে এসেছি। তাই কেউ যখন মিথ্যা অপবাদ দেয়, সেই অপবাদ নিতে আমি রাজি না। বিশ্বব্যাংক এই অপবাদ দিতে চেষ্টা করেছিল। কিন্তু তারা সফল হয়নি। আমরা নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছি বলেই আজকে এতো দ্রুত গোপালগঞ্জ, টুঙ্গিপাড়া-কোটালীপাড়ায় আসতে পেরেছি বা দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতে পেরেছি।’

‘বাংলাদেশের মানুষ আত্মমর্যাদা নিয়েই চলে। আমাদের কেউ অপবাদ দিলে আমরা তা মানব না। তাই জঙ্গিবাদ- সন্ত্রাস-মাদক দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে, এ ব্যাপারে সবাই সতর্ক থাকবেন।’

যার যার নিজেদের সন্তান, তারা যেন কোনো সময় মাদক-সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত না হয়। এ ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান তিনি।

কোটালীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ভবেন্দ্র নাথ বিশ্বাসের সভাপতিত্বে সাধারণ সম্পাদক আয়নাল হোসেন শেখের পরিচালনায় জনসভায় আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ অনেকে।

সারাবাংলা/এনআর/একে

গোপালগঞ্জ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর