রাষ্ট্রপতি পদ লাভজনক নয়: হাইকোর্ট
২৫ এপ্রিল ২০২৩ ১০:৩৩
ঢাকা: রাষ্ট্রপতি পদ লাভজনক নয় উল্লেখ করে হাইকোর্টের দেওয়া পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়েছে। সোমবার (২৪ এপ্রিল) সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে ৩৯ পৃষ্ঠার ওই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হয়েছে।
গত ১৫ মার্চ রাষ্ট্রপতি পদে মো. সাহাবুদ্দিনকে নির্বাচিত করে জারি করা গেজেট চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা দু’টি রিট খারিজ করে বিচারপতি মো. খসরুজ্জামান ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন রিটকারী আইনজীবী এম এ আজিজ খান ও আবদুল মোমেন চৌধুরী। আর রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মেহেদি হাসান চৌধুরী।
রায়ে হাইকোর্ট কয়েকটি পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন। সেগুলো হলো-
(ক) আমরা মনে করি, রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ‘লাভজনক পদ’ ধারণ করেন, কিন্তু ‘প্রজাতন্ত্রের সেবায় এটি লাভজনক পদ নয়’ এবং রাষ্ট্রপতির পদ গ্রহণের পদ্ধতি প্রজাতন্ত্রের সেবায় নিয়োজিতদের (চাকরিজীবী) মতো নয়।
(খ) আমরা মনে করি, ‘নির্বাচন’ এবং ‘নিয়োগ’ সংবিধান অনুযায়ী একই অর্থ বহন করে না। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হলেন নির্বাচিত প্রতিনিধি এবং বাংলাদেশের ‘ঐক্যের প্রতীক’, এবং সংবিধানের নবম ভাগ অনুযায়ী প্রজাতন্ত্রে কর্মরত ব্যক্তিরা প্রজাতন্ত্রের চাকরিতে নিযুক্ত কর্মচারী।
(গ) আমরা মনে করি, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন আইন, ১৯৯১ এর বিধি-৭ এর অধীনে নির্বাচন ভবন, আগারগাঁও, ঢাকায় প্রধান নির্বাচন কমিশনারের প্রতিনিধিত্বকারী নির্বাচন কমিশন কর্তৃক প্রদত্ত ঘোষণাটি বেআইনি নয় এবং সংবিধান বিরোধী নয়। ঘোষণাটি সংবিধানের ৪৮(১) অনুচ্ছেদের বিধানকে অকার্যকর ও নিস্ক্রিয় করেনি এবং সংসদ সদস্যদের ক্ষমতাকে সংক্ষিপ্ত করে।
(ঘ) আমরা মনে করি, দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর বিধি-৯ অনুযায়ী দুদকের সাবেক কমিশনার; জনাব মো. শাহাবুদ্দিনকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হতে কোন বাধা সৃষ্টি করে না।
(ঙ) আমরা মনে করি, যদিও দুদকের সাবেক কমিশনার হিসাবে, নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি, জনাব মো. শাহাবুদ্দিন, প্রজাতন্ত্রের সেবায় লাভের একটি পদেও অধিষ্ঠিত ছিলেন। তবে এটি কোনোভাবেই তাকে নির্বাচিত হতে বা রাষ্ট্রপতি পদে বহাল থাকার অযোগ্য করে না। রাষ্ট্রপতির কার্যালয়, যা প্রজাতন্ত্রের সেবায় নিয়োজিত, লাভের কার্যালয় নয়।
আদেশে হাইকোর্ট বলেছেন, সারবত্তা না থাকায় রিট দু’টি সরাসরি খারিজ করা হলো।
এর আগে, মো. সাহাবুদ্দিনকে রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচন প্রক্রিয়া এবং পরবর্তীতে গেজেট প্রকাশের বিষয়টি চ্যালেঞ্জ করে গত ৭ মার্চ হাইকোর্টে রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এম এ আজিজ খান।
এরপর, ১২ মার্চ এই রিটটি বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের হাইকোর্ট বেঞ্চে শুনানির জন্য এলে বিচারপতি আহমেদ সোহেল বিষয়টি শুনতে বিব্রতবোধ করেন। তখন বিচারপতি আহমেদ সোহেল বলেন, ‘প্রায় পাঁচ বছর তিনি দুদকের আইনজীবী ছিলেন। তাই বিষয়টি শুনতে বিব্রতবোধ করছেন। এরপর বিচারপতি ফারাহ মাহবুবের হাইকোর্ট বেঞ্চ রিটটি শুনানি না করে প্রধান বিচারপতি বরাবর পাঠিয়ে দেন।’
পরবর্তীতে রিটটি বিচারপতি মো. খসরুজ্জামান ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে শুনানির জন্য নির্ধারণ করে দেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।
অন্যদিকে, রাষ্ট্রপতি পদে মো. সাহাবুদ্দিনকে নির্বাচিত ঘোষণা করে জারি করা প্রজ্ঞাপন চ্যালেঞ্জ করে আবদুল মোমেন চৌধুরী, কে এম জাবিরসহ সুপ্রিম কোর্টের ছয় আইনজীবী আরেকটি রিট দায়ের করেন। দু’টি রিটেই নির্বাচন কমিশনকে বিবাদী করা হয়। পরে রিট দুটি একই বেঞ্চে একসঙ্গে শুনানি হয়।
অবসরপ্রাপ্ত বিচারক ও দুর্নীতি দমন কমিশনের সাবেক কমিশনার মো. সাহাবুদ্দিনকে দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। রাষ্ট্রপতি নির্বাচন আইন, ১৯৯১-এর ৭ ধারা অনুসারে তাকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচিত ঘোষণা করে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
২৩ এপ্রিল বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের মেয়াদ শেষ হয়। মো. সাহাবুদ্দিন তার স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন। শপথ গ্রহণের পর থেকে পরবর্তী পাঁচ বছরের জন্য এ পদে তিনি দায়িত্ব পালন করবেন।
উল্লেখ্য, সোমবার (২৪ এপ্রিল) সকাল ১১টায় দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন মো. সাহাবুদ্দিন। বঙ্গভবনের ঐতিহাসিক দরবার হলে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী তাকে শপথ বাক্য পাঠ করান।
এরপর বিদায়ী রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ সোমবার বঙ্গভবন ছেড়েছেন।
সারাবাংলা/কেআইএফ/ইআ