Wednesday 15 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

শিক্ষা-কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি রোধে আছে নির্দেশনা, নেই প্রয়োগ


৯ মে ২০১৮ ০৮:৪৬ | আপডেট: ৯ মে ২০১৮ ০৯:০৩

।। মাকসুদা আজীজ, অ্যাসিস্ট্যান্ট এডিটর।। 

ঢাকা: জীবনে কোথাও যৌন হয়রানির শিকার হয়নি এমন নারী পাওয়া বিরল। তবে এখনও যৌন হয়রানির শিকার অনেক নারী জানেন না যৌন হয়রানির সংজ্ঞা কী? যৌন হয়রানি হলে তাদের সহায়তায় আছে কি কোনো আইন?

১৯৯০ এর দিকে যৌন হয়রানির বিষয়ে সোচ্চার হয় সাধারণ মানুষেরা। দীর্ঘ সে আন্দোলনের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি যৌন হয়রানি বিষয়ে সুপ্রিমকোর্টে হাইকোর্ট বিভাগে একটি রিট আবেদন করে। সেই রিটের জবাবে ২০০৯ সালের ১৪ মে হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি কামরুল ইসলাম সিদ্দিকী কর্মক্ষেত্রে ও শিক্ষাক্ষেত্রে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে একটি নির্দেশনামূলক রায় প্রদান করেন। সেই রায়ে হাইকোর্ট বিভাগের পক্ষ থেকে একটি পূর্ণাঙ্গ আইন প্রণয়ণেরও নির্দেশনা দেওয়া হয়।

২০০৯ থেকে ২০১৮, নয় বছর পেরিয়ে গেলেও সে নির্দেশনামূলক রায় থেকে হয়নি কোনো আইন। সম্প্রতি একশন এইড বাংলাদেশ ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ: সুপ্রিমকোর্টের ২০০৯ সালের নির্দেশনার প্রয়োগ ও কার্যকরিতা’ নামে একটি গবেষণা চালায়। এর মূল গবেষক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তাসলিমা ইয়াসমিন জানান, অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রে হাইকোকোর্টের সেই নির্দেশনা পালন করা হচ্ছে না। অধিকাংশক্ষেত্রে অনেকে জানেনই না এই বিষয়ে কোনো নির্দেশনা আছে কি না! যারা এই নীতিমালার কথা জানেন, তারা আবার জানেন না এই নীতিমালা কীভাবে কাজে লাগাতে হয়।

কী ছিল সে নীতিমালায়?

২০০৯ সালের যৌন হয়রানি প্রতিরোধে হাইকোর্ট বিভাগের নির্দেশনামূলক রায়ে যৌন হয়রানি কাকে বলে তার একটি বিশদ বর্ণনা দেয়া হয়েছিল। সেখানে শরীর স্পর্শ করা, যৌন হয়রানিমূলক উক্তি করা, চিঠি, টেলিফোনে যৌন অবমাননামূলক কথা লেখা থেকে শুরু করে প্রতিষ্ঠানের কোনো দেওয়াল বা নোটিশ বোর্ডে কাউকে ইংগিত করে কিছু লেখা পর্যন্ত বিষয়কে অন্তর্ভূক্ত করা হয়।

বিজ্ঞাপন

এই আইনের মূল উদ্দেশ্য ছিল, যৌন নির্যাতন সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তোলা, যৌন নির্যাতনের কুফল সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করা এবং যৌন নির্যাতন শাস্তিযোগ্য অপরাধ—এ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। এ লক্ষ্যে রায়ে কিছু পুস্তিকা প্রকাশনার কথাও বলা হয়েছে যেন সবাই এই আইন সম্পর্কে জানতে পারেন। পাশাপাশি কেউ যৌন হয়রানির স্বীকার হলে যেন তা কর্তৃপক্ষকে জানাতে পারে তাই সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ও কর্মস্থলে একটি কমিটি গঠনের কথা বলা হয় যেখানে যৌন হয়রানির শিকার নারী অভিযোগ জানাতে পারবেন।

গবেষণার মূল ফলাফল

একশন এইডের করা গবেষণাটিতে আলাদাভাবে কর্মক্ষেত্রের ও শিক্ষাক্ষেত্রের নারীদের মধ্যে জরিপ চালানো হয়।

শিক্ষাক্ষেত্রে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩০ জন নারী শিক্ষার্থীর মধ্যে ২৫ জন নারীই জানেন না তাদের প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে আদৌ কোনো কমিটি কাজ করছে কি না। ২৬ জনই জানেন না সুপ্রিমকোর্ট যৌন হয়রানি বন্ধে এমন কোনো নির্দেশনা দিয়েছেন। মাত্র ৩ থেকে ৪ জন নামেমাত্র সুপ্রিমকোর্টের রায়টির কথা জানেন। তাদের জানা নেই এই রায়ের ফলে তারা কী সুফল পেতে যাচ্ছেন।

সাক্ষাৎকারের সময় তিনটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে একটি জানায় তাদের একটি সক্রিয় কমিটি আছে। গবেষক তাসলিমা ইয়াসমিন জানান, শিক্ষার্থীর তুলনায় হয়রানি বিষয়ক অভিযোগের পরিমান খুবই সামান্য।

কর্মক্ষেত্রেও এই রায় রাখতে পারেনি কোনো প্রভাব। রায়ের নয় বছর পরেও বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, উন্নয়ন সংস্থা, পোশাক শিল্প প্রতিষ্ঠান, সংবাদ মাধ্যমের ২০ জন ব্যক্তির উপর গবেষণা করে জানা যায়, তাদের মধ্যে ১২-১৩ জনই জানেন না সুপ্রিমকোর্টের এই নির্দেশনা সম্পর্কে। দুই বা তিন জন এই নির্দেশনা সম্পর্কে জানলেও এ বিষয়ে তারা পরিষ্কার কিছু জানেন না।

বিজ্ঞাপন

কী হতে পারে এর সমাধান?

যৌন হয়রানি বিষয়ক নীতিমালা ব্যবহার না হলেও যৌন হয়রানি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কর্মস্থলে যৌন হয়রানি থেমে নেই। আইনের অভাবে বা অজ্ঞতা ও সচেতনতার কারণে হয়রানির ঘটনার অধিকাংশই সামনে আসছে না, জানান গবেষণাসংশ্লিষ্ট ব্যাক্তিরা।

এরকম পরিস্থিতে তারা এই রায়কে বাস্তবায়নের জন্য কিছু সুপারিশ রাখা হয়েছে গবেষণায়। এতে বলা হয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিজ উদ্যোগে যৌন হয়রানি বন্ধে সুপ্রিমকোর্টের নির্দেশনাটি শিক্ষার্থীদের জানাবেন এবং কমিটি গঠন করবেন। শিক্ষা মন্ত্রনালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন সেটা তদারকির কাজ করতে পারেন।কর্মক্ষেত্রে একইভাবে সচেতনতা বাড়াতে হবে। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয় ও নিয়ন্ত্রন কর্তৃপক্ষ তদারকির কৌশল গ্রহণ করতে পারেন।

সাধারণভাবে একটি সমন্বিত উদ্যোগের উপর জোর দেন গবেষকরা, যে উদ্যোগে প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত সব পক্ষকে অংশগ্রহণ করতে হবে।

এছাড়া হাইকোর্টের নির্দেশনা বাস্তবায়নে সব প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলায় একটি সমন্বিত ‘অ্যাডভোকেসি নেটওয়ার্ক’ গড়ে তোলারও সুপারিশ করা হয়।

একশন এইডের পক্ষ থেকে সংস্থাটির কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবীর বলেন, এইসবই যথেষ্ট নয়, গণপরিসরে ও ব্যাক্তিগত পর্যায়ে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে একটি পৃথক ও পূর্ণাঙ্গ আইনও প্রনয়ন করতে হবে। এ সব উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলেই যৌন হয়রানি ও নারীর প্রতি বৈষম্য প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।

সারাবাংলা/এমএ/এসএস

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর