এই বাজেট সাধারণ মানুষের জীবনকে আরও বিপর্যস্ত করবে: সিপিবি
২ জুন ২০২৩ ১১:০৪
ঢাকা: প্রস্তাবিত বাজেট প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবি জানিয়েছে, আগামী অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেট সাধারণ মানুষের জীবনকে আরও বিপর্যস্ত করে তুলবে।
বৃহস্পতিবার (১ জুন) রাতে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে সংগঠনের সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম ও সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স এসব কথা বলেন।
বিবৃতিতে তারা বলেছেন, ‘নিম্ন প্রবৃদ্ধি, সর্বোচ্চ মুদ্রাস্ফীতি, সর্বনিম্ন বৈদেশিক মুদ্রার কর্তৃত্বপরায়ণতা, বৈদেশিক চাপের মুখে প্রদত্ত বাজেটে সাধারণ মানুষের আকাঙ্ক্ষা পূরণ হয়নি। বাজেটে দুর্নীতি ও বৈষম্য মুক্তির নির্দেশনা নেই, বরং জনগণের কাঁধে নানাভাবে করের বোঝা চাপবে-যা সাধারণ মানুষের জীবনকে আরও বিপর্যস্ত করে তুলবে।’
এই বাজেটকে প্রত্যাখান করে তারা বলেন, ‘নয়া উদারনীতিবাদী অর্থনৈতিক দর্শনের ভিত্তিতে প্রণীত বাজেট বড় লোকের স্বার্থই রক্ষা করবে। বাজেটে পাচারের টাকা ফেরত আনা ও খেলাপিঋণ উদ্ধারে বিশেষ নির্দেশনা না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলা হয়, সাধারণ মানুষের উপার্জিত অর্থই লুট হয়ে যাচ্ছে, অথচ এটি উদ্ধারে কোনও ভূমিকা নেই। এই বাজেটে ঘাটতি আরও বৃদ্ধি পাবে ও আরও নির্ভরতার ঝুঁকি থেকে যাবে।’
সিপিবির এই দুই শীর্ষনেতা বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও ধারায় এ বাজেট প্রণীত হয়নি। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সংবিধানের নির্দেশনা মানা হয়নি। মুক্তবাজারের নামে লুটপাটের ধারা আমাদের সংবিধান অনুমোদন দেয় না, অথচ ওই ধারায় বাজেট প্রণীত হয়েছে। এ বাজেট আমলা ও লুটেরানির্ভর। এটা প্রণয়নে জনগণের মতামত গ্রহণ করা হয়নি। বাজেটের ঘাটতি পূরণের জন্য সাধারণ মানুষ, মধ্যবিত্তের ওপর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ করের বোঝা চাপানো হবে। এই বাজেট আয়বৈষম্য, সম্পদবৈষম্য, খাদ্য-শিক্ষা-স্বাস্থ্যবৈষম্য, আঞ্চলিক বৈষম্য দূর করতে কোনো ভূমিকা নেবে না,বরং বৈষম্য আরও বাড়াবে।’
তারা বলেন, ‘বাজেটে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে খাদ্যপণ্য মজুত, রেশন ব্যবস্থা ও ন্যায্যমূল্যের দোকান চালু, জাতীয় ন্যূনতম মজুরি ও হতদরিদ্র-কর্মহীনদের নগদ সহায়তার নির্দেশনা নেই, যা বর্তমান সংকটকালে মানুষকে বাঁচাতে ও অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে জরুরি।’
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, ‘বিশ্ব ও দেশের পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে অপ্রয়োজনীয় মেগা প্রকল্প স্থগিত, অনুৎপাদনশীল খাতে ব্যয় কমানো, প্রতিরক্ষা খাতসহ সরকারি ক্রয় খাতে বরাদ্দ কমিয়ে আনা, সর্বত্র স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা, বিদেশভ্রমণসহ অপ্রয়োজনীয় বিলাসী কার্যক্রম বন্ধ জরুরি। কিন্তু এর কোনও আলামত আমরা দেখতে পেলাম না।’
সিপিবি মনে করে, সাধারণভাবে বাজেটের অর্থ সংস্থানের জন্য সম্পদশালীদের ওপর বিশেষ করারোপ, রাজস্ব ব্যয় কমিয়ে বাজেটের উন্নয়ন-বিনিয়োগের অগ্রাধিকার চিহ্নিত করা প্রয়োজন ছিল।
সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী খাতে বরাদ্দের অতীত অভিজ্ঞতার মূল্যায়ন করে তা সরাসরি ভুক্তভোগীদের কাছে দুর্নীতিমুক্তভাবে পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনা ও বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি জানায় সিপিবি।
বিবৃতিতে বলা হয়, জনগণের ভোটাধিকার, দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে না পারলে, আমলা নির্ভর এ বাজেটের ধারা অব্যাহত থাকবে। বাজার অর্থনীতির মৌল দর্শন থেকে এ বাজেট বিন্দুমাত্র সরেনি। প্রস্তাবিত বাজেট অব্যাহত থাকলে ধন বৈষম্য, শ্রেণি বৈষম্য, সামাজিক অস্থিরতা ও নৈরাজ্য বৃদ্ধি পাবে। দেশের অর্থনৈতিক রাজনৈতিক সামাজিক অস্থিরতা দূর হবে না।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, আগে জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি বাজেটের ওপর নির্ভর করতো। এখন আগে পরে দাম বাড়িয়ে মানুষের চোখকে ফাঁকি দেওয়া হয়।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ প্রস্তাবিত বাজেট পরিবর্তন করে মুক্তিযুদ্ধের অর্থনৈতিক ধারায় বাজেট প্রণয়নের দাবি জানান।
সারাবাংলা/ এ এইচ এইচ/এনইউ