সিইপিজেডের ইটিপিকে আড়াই কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ
১০ জুলাই ২০২৩ ২১:২৯
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম রফতানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চলে (সিইপিজেড) বেসরকারি একটি কেন্দ্রীয় তরল বর্জ্য পরিশোধনাগার (ইটিপি) প্রতিষ্ঠানকে আড়াই কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে পরিবেশ অধিদফতর। তরল বর্জ্য পরিশোধন না করে নির্গমনের মাধ্যমে পরিবেশ দূষণের অপরাধে তাদের ক্ষতিপূরণ আরোপ করা হয়।
সোমবার (১০ জুলাই) পরিবেশ দূষণের অভিযোগ সংক্রান্ত শুনানি শেষে চট্টগ্রাম মহানগর পরিবেশ অধিদফতরের পরিচালক হিল্লোল বিশ্বাস এ আদেশ দেন।
সিইপিজেডের সাত নম্বর সেক্টরে ‘চিটাগং ওয়াস্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টস লিমিটেড (সিডব্লিউটিপিএল) নামে প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশি ব্যক্তি মালিকানাধীন। সিইপিজেডের যেসব কারখানায় নিজস্ব তরল বর্জ্য পরিশোধনাগার (ইটিপি) নেই তারা এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত। সেসব কারখানার বর্জ্য এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পরিশোধন করে নির্গমন করা হয়।
চট্টগ্রাম মহানগর পরিবেশ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মিয়া মাহমুদুল হক সারাবাংলাকে জানান, অধিদফতরের একটি টিম সম্প্রতি সিডব্লিউটিপিএল’র আউটলেট থেকে তরল বর্জ্যের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করে। নমুনা বিশ্লেষণী ফলাফলে দেখা যায়, নির্গত তরলের মধ্যে ভূ-পৃষ্ঠের পানিতে থাকা দ্রবীভূত কঠিন বস্তুর পরিমাণ (টিডিএস), পানিতে উপস্থিত জৈব এবং অজৈব অপদ্রব্যকে জারিত করার অক্সিজেনের পরিমাণ (সিওডি) এবং জৈবিক অক্সিজেনের চাহিদা (বিওডিএ) এর পরিমাণ গ্রহণযোগ্য মানমাত্রা অনুযায়ী নেই।
‘মূলত তরল বর্জ্য পরিশোধন ছাড়াই নির্গমন করে আসছিল প্রতিষ্ঠানটি। নমুনায় টিডিএস, সিওডি এবং বিওডি-র মানমাত্রা অনুযায়ী অনুপস্থিতির মাধ্যমে এটি প্রমাণ হয়েছে। এতে এলাকার পরিবেশ ও প্রতিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছিল। এজন্য তরল বর্জ্য পরিশোধন প্রতিষ্ঠানটিকে শুনানিতে হাজিরের জন্য নোটিশ দিই।’
মাহমুদুল জানান, নোটিশ অনুযায়ী রোববার প্রতিষ্ঠানটির দুই সহকারী মহাব্যবস্থাপক আবরার আহমেদ চৌধুরী ও আসিফ মোজতবা ইতি এবং রসায়নবিদ স্বরূপ চক্রবর্তী শুনানিতে হাজির হন। শুনানিতে প্রতিষ্ঠানটির প্রতিনিধিরা সর্বশেষ ল্যাব রিপোর্ট দাখিল করে দূষণের বিষয়টি অস্বীকার করেন।
কিন্তু ঘটনাস্থল থেকে পরিবেশ অধিদফতরের জ্যেষ্ঠ রসায়নবিদ জান্নাতুল ফেরদৌস ভিডিও ধারণ করে শুনানিতে উপস্থিত পরিচালকের কাছে পাঠান। সেখানে দেখা যায়, রোববার পর্যন্ত তরল বর্জ্য পরিশোধন ছাড়াই সরাসরি নির্গমন হচ্ছে। তখন প্রতিষ্ঠানটির প্রতিনিধিদের সামনে সেই ভিডিও দেখানো হলে তারা সত্যতা স্বীকার করেন। এরপর পরিচালক তাদের ২ কোটি ৫৯ লাখ ২০ হাজার টাকা পরিবেশ ক্ষতিপূরণ আরোপের নির্দেশ দেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিডব্লিউটিপিএল’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. হাসিবুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘জরিমানা করা হয়েছে বলে জানতে পেরেছি। তবে কী কারণে, কেন জরিমানা করা হলো সেটা অফিসিয়ালি আমরা এখনও যাচাই করে দেখিনি। অনেক সময় ভুল বোঝাবুঝি থেকেও শাস্তি আরোপ করা হয়। সার্বিক বিষয় খতিয়ে দেখে আমরা সিদ্ধান্ত নেব। প্রতিষ্ঠানের কোনো ভুলভ্রান্তি থাকলে সেটাও দেখা হবে।’
জানতে চাইলে সিইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক আব্দুস সোবহান সারাবাংলাকে বলেন, ‘এটা সিইপিজেডের নিজস্ব কোনো প্রতিষ্ঠান নয়। সার্ভিস অরিয়েন্টেড একটি প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান। তবে সিইপিজেডের অভ্যন্তরীণ প্রতিষ্ঠান হিসেবে আমরা নজরদারি করি। পরিবেশ অধিদফতরও নজরদারি করে। তাদের কী ব্যত্যয় আছে সেটা খতিয়ে দেখা হবে।’
জানা গেছে, ২০২২ সালের ১০ নভেম্বর একই অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটিকে দুই লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ আরোপ করেছিল পরিবেশ অধিদফতর। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি তাদের ইটিপি’র ত্রুটি সংশোধন করেনি। এরপর গত ২ ফেব্রুয়ারি পরিবেশ অধিদফতরের সদর দফতর থেকে ছয় মাসের মধ্যে কার্যকর ইটিপি স্থাপন ও নকশা পরিবেশ অধিদফতরে দাখিল, ড্রেনেজ সিস্টেম নির্মাণ এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিয়ম ও নির্দেশনা মেনে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি সেটিও বাস্তবায়ন করেনি।
সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম