Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সরকারের চরম অব্যবস্থাপনায় ডেঙ্গু পরিস্থিতির অবনতি: ড্যাব

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৩ জুলাই ২০২৩ ১৭:১৪

ঢাকা: সরকারের চরম অব্যবস্থাপনার কারণে সারাদেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপিপন্থী চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব)।

বৃহস্পতিবার (১৩ জুলাই) দুপুরে ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন সংগঠনটির নেতারা।

প্রেস কনফারেন্সে লিখিত বক্তব্য দেন ড্যাবের মহাসচিব ডা. মো. আবদুস সালাম, বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন ড্যাবের সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশিদ।

তিনি বলেন, ‘ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার দায় নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী, ঢাকার দুই মেয়রের পদত্যাগ করা উচিত। তারা যেভাবে জরিমানা করছে সেটি উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা।

লিখিত বক্তব্যে ডা. আবদুস সালাম বলেন, ‘চলতি বছরের শুরু থেকেই ভয়াবহ রূপ নিয়েছে ডেঙ্গু। বিগত কয়েক বছর ধরেই ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত এবং মৃত্যুর সংখ্যা ধারাবাহিকভাবে বাড়তে থাকলেও এই বছর এ সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। বিশেষজ্ঞদের পূর্বাভাস সত্যেও সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের উদাসীনতায় ডেঙ্গু পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করার সম্ভবনা রয়েছে। বিশেষত আগামী অগাস্ট এবং সেপ্টেম্বর মাসে পরিস্থিতি অবনতির আভাস ইতোমধ্যেই পাওয়া যাচ্ছে। সরকারিভাবেই বলা হচ্ছে, দেশের ৫৮ জেলায় ডেঙ্গু রোগ ছড়িয়ে পরেছে, যা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে ১৯৬৪ সালে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব ঘটে। তখন এটিকে ঢাকা ফিভার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। তবে সর্বপ্রথম ডেঙ্গু ভয়াবহ রূপ নেয় ২০০০ সালে। বাংলাদেশে ডেঙ্গু সবচেয়ে বড় আঘাত হানে ২০১৯ সালে। ওই বছর এক লাখ এক হাজার ৩৫৪ জন মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন এবং ৬৩টি জেলায় ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল প্রায় ৫০০ জন।

বিজ্ঞাপন

সরকারি হিসাব মতে, ২০২২ সালে ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা যথাক্রমে ৬২ হাজার ৩২১ ও ২৮১। তবে দেশে কোনো বছরের প্রথম ছয় মাসে ডেঙ্গুর এমন ভয়াবহ রূপ আর কখনও দেখা যায়নি। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালে প্রথম ছয় মাসে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন দুই হাজার ২০৮ জন। মারা গিয়েছিলেন আট জন।

ডা. সালাম বলেন, ‘এই বছর এখন পর্যন্ত পাওয়া সরকারি তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ইতোমধ্যে দেশে ডেঙ্গুতে ৬৫ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং ১০,২৯২ জন আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে বিভিন্ন হাসপাতালে প্রায় আড়াই হাজার মানুষ এখনও চিকিৎসাধীন রয়েছে এবং ৯ হাজারের বেশি আক্রান্ত ব্যাক্তি চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছে।’

তিনি বলেন, ‘গণমাধ্যমের তথ্যমতে, দেশে ডেঙ্গুতে মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা সরকারি হিসাব থেকে অনেক বেশি। অন্যান্য সকল বিষয়ের মতো ডেঙ্গু মহামারির সময়ও সরকার তথ্য নিয়ে মিথ্যাচার বা লুকোচুরি করে যাচ্ছে। বিগত কয়েকদিন যাবত গড়ে প্রতিদিন ৬০০ এর কাছাকাছি মানুষ ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। যদিও এ হিসাব ঢাকার ৫৩টি হাসপাতাল ও বিভিন্ন জেলার সিভিল সার্জন অফিস থেকে প্রাপ্ত তথ্য। এই হাসপাতালগুলো ছাড়াও ছোট বড় অনেক বেসরকারি ক্লিনিক ও বাসায় থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন আরও অনেক রোগী। যেসব ক্লিনিক বা হাসপাতাল স্বাস্থ্য অধিদফতরে তথ্য পাঠায় না, সেই রোগীদের হিসাব ডেঙ্গু পরিসংখ্যানে যুক্ত হয় না।’

আবদুস সালাম বলেন, ‘ডেঙ্গুতে আক্রান্ত প্রতি চারজন রোগীর একজন শিশু। ঢাকার বাইরেও ডেঙ্গু পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটেছে। হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টারের তথ্য মতে, বাংলাদেশে মোট ভর্তি রোগীর প্রায় ২৯ শতাংশ ঢাকার বাইরের। ডেঙ্গুতে প্রাণহানি কমানো এবং পরিস্থিতি মোকাবিলায় রোগী দ্রুত শনাক্ত জরুরি। এমন পরিস্থিতিতে বিশেষজ্ঞরা সরকারি হাসপাতালগুলোতে বিনামূল্যে ডেঙ্গু পরীক্ষার কথা বললেও নেওয়া হচ্ছে না তেমন কোনো কার্যকর উদ্যোগ।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘২০২০ সালে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়লে সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে পরীক্ষার উদ্যোগ নিয়েছিল সরকার। তবে এবার এ ধরনের কোনো উদ্যোগ নেই। এ ছাড়া ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে (ডিএসসিসি) বিনামূল্যে ডেঙ্গু পরীক্ষার অস্থায়ী ১২ কেন্দ্রের সবগুলো কিট সংকটে বন্ধ রয়েছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে (ডিএনসিসি) ৩২টিতে সেবা মিললেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।

পরিস্থিতির আরও অবনতির আশংকা প্রকাশ করে ড্যাবের মহাসচিব বলেন, ‘স্বাস্থ্য অধিদফতরে কর্তৃক পরিচালিত প্রাক্-বর্ষা জরিপ অনুযায়ী ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের সব এলাকাতেই ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশার উপস্থিতি বেশি। এবার ডেঙ্গুর মৌসুম গত বছরের মতো দীর্ঘ হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। সিটি করপোরেশনগুলো কার্যক্রম জোরালো উদ্যোগ না নিলে পরিস্থিতি ভয়ানক রূপ ধারণ করতে পারে।’

ডেঙ্গু নিয়ে চিকিৎসা সংকটের কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে উষ্ণ আর্দ্র আবহাওয়ার কারণে বাংলাদেশ মশা ও মশাবাহিত রোগ বিস্তারের জন্য উত্তম জায়গা। ডেঙ্গু নতুন কোনো রোগ নয়। এটা প্রতিকারের জন্য সিটি করপোরেশন ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের যে উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন ছিল, তাতে তারা সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সারা বছর ধরে যে ধরনের সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দিক থেকে তেমন উদ্যোগ দেখা যায় না বলেই ডেঙ্গু পরিস্থিতির এমন অবনতি ঘটছে।’

আবদুস সালাম বলেন, ‘এডিস মশা যে শুধু মানুষের ঘরের ফুলের টবে কিংবা ছাদে জমে থাকা পরিষ্কার পানিতেই হয়, তা নয়। পরিত্যক্ত টায়ার, ইটের গর্ত ইত্যাদিতে জমে থাকা পানিতে জন্মাতে পারে। এ কারণেই ২০১৯ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জ্যেষ্ঠ কীটতত্ত্ববিদ বি এন নাগপাল ঢাকায় এসে বলে গিয়েছিলেন, নির্মাণাধীন প্রকল্পগুলো এডিস মশার অন্যতম বড় উৎস, এখানকার মশা উৎপাদনক্ষেত্র বিনাশ করা সম্ভব হলে ডেঙ্গুর প্রকোপ ৪০ শতাংশ কমিয়ে আনা সম্ভব। সুতরাং এ কথা নিশ্চিতভাবেই বলা যায় যে, ডেঙ্গু প্রতিরোধে দীর্ঘমেয়াদি কোনো পরিকল্পনা ও সমন্বিত প্রচেষ্টা কর্তৃপক্ষের ছিল না। যেটুকু উদ্যোগ দেখা গেছে, তা পরিস্থিতি বিবেচনায় অপ্রতুল।’

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ড্যাবের কোষাধ্যক্ষ ডা. জহিরুল ইসলাম শাকিল, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ডা. মেহেদী হাসান, যুগ্ম মহাসচিব ডা. শাহ মুহাম্মদ আমান উল্লাহ, যুগ্ম মহাসচিব ও হেমাটোলজিস্ট ডা. আদনান হাসান মাসুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. রেজওয়ানুর রহমান সোহেল, প্রকাশনা সম্পাদক ডা. মো. জাফর ইকবাল, ঢাকা দক্ষিণ ড্যাবের সভাপতি ডা. দিদারুল আলম, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. মো. সায়েম বাবু, ডা. ইব্রাহিম রহমান, নার্সেস এসোসিয়েশনের সভাপতি বিলকিস জাহান চৌধুরী, এ্যামট্যাবের সভাপতি বিপ্লবুজ্জামান বিপ্লব, ফিজিওথেরাপিস্ট মাহাতাব উদ্দিন প্রমুখ।

সারাবাংলা/এজেড/ইআ

ড্যাব

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর