অক্টোবরে কারা হেফাজতে মৃত্যু বেড়েছে: এমএসএফের প্রতিবেদন
১ নভেম্বর ২০২৩ ১৮:৫১
ঢাকা: গত অক্টোবর মাসে কারা হেফাজতে মোট ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে আটজন হাজতি আর বাকিরা কয়েদি। সেপ্টেম্বরে এ সংখ্যা ছিল ১০ জন। এছাড়াও অক্টোবরে পুলিশি হেফাজতে দুইজন এবং পুলিশের ধাওয়া খেয়ে আরও একজনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।
মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের (এমএসএফ) অক্টোবর মাসের মানবাধিকার পরিস্থিতি মনিটরিং প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। বুধবার (১ নভ্ম্বের) গণমাধ্যমে ওই প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে অক্টোবর মাসের মানবাধিকার পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়েছে। ১৮টি জাতীয় দৈনিক ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও এমএসএফ সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে বলে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
এমএসএফের প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, কারা হেফাজতে মারা যাওয়া ১৬ জনের মধ্যে কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে সাতজন, কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে চারজন, ময়মনসিংহ কেন্দ্রীয় কারাগারে একজন, রাজবাড়ি কারগারে দুইজন, কুমিল্লা কারাগারে একজন ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া কারাগারে একজনের মৃত্যু হয়। সব কারাবন্দিকে বাইরের হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।
এ ছাড়াও নোয়াখালী জেলা কারাগারে সাজাপ্রাপ্তকে অপর এক কয়েদি কলম দিয়ে দুই চোখে আঘাত করে। কক্সবাজারের সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা এক নারী হাজতি পালিয়ে যান। অপর একটি ঘটনায় বগুড়া জেলা কারাগারের একটি কালভার্টের নিচের ড্রেন থেকে এক কারারক্ষীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে অপহরণ/নিখোঁজ:
অক্টোবর মাসে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়ার নয়টি ঘটনায় নয় জন অপহরণের শিকার হয়েছেন যা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে মৃত্যু:
অক্টোবর মাসে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে দুইজনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।
পুলিশের ধাওয়া খেয়ে মৃত্যু:
অক্টোবরে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নির্যাতন ও গ্রেফতার এড়াতে ধাওয়া খেয়ে পানিতে ঝাঁপ দিয়ে একজনের মৃত্যু এবং পুলিশ ও শ্রমিক সংঘর্ষে একজন শ্রমিক নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
সাংবাদিকতা ও মতপ্রকাশের অধিকারের লংঘন:
অক্টোবর মাসে সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে মানবাধিকার লংঘনের চিত্র অত্যন্ত উদ্বেগজনক ছিল বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। অক্টোবর মাসে ১৬ জন সাংবাদিক পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এদের মধ্যে আহত হয়েছেন ছয়জন, চারজন হয়রানি, হুমকির সম্মুখীন একজন, আইনি হয়রানি চারজন এবং একজন সাংবাদিক নিখোঁজ হওয়ার পর উদ্ধার হয়েছেন।
এছাড়াও ২৮ অক্টোবর রাজধানীর সেগুনবাগিচায় সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে আহত সাংবাদিক রফিক ভূঁইয়া ২৯ অক্টোবর মারা গেছেন। একই দিনে বিরোধী দলের মহাসমাবেশে সংবাদ সংগ্রহের সময় ৩০ জন সাংবাদিক সংঘর্ষকালীন সময়ে আহত ও হামলার শিকার হন। আহতদের মধ্যে দুইজন সাংবাদিকের অবস্থা গুরুতর।
সাইবার নিরাপত্তা আইন ব্যবহার/অপব্যবহার:
অক্টোবর মাসে সাইবার নিরাপত্তা আইনে পাঁচটি মামলা হয়েছে এবং একজন যুবক গ্রেফতার হয়েছেন। অভিযুক্তদের মধ্যে একজন সাংবাদিক রয়েছেন।
দুটি মামলা হয়েছে ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীকে কটূক্তির অভিযোগে এবং তিনটি মামলা হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মানহানির জন্য। মামলার বাদীদের একজন আওয়ামী লীগ কর্মী, একজন জাতীয় পার্টির কর্মী, একজন যুবক, একজন তরুণী এবং একজন চেয়ারম্যান রয়েছেন। মামলাগুলোর মধ্যে বরিশালে করা হয়েছে দুটি, রংপুরে একটি, নীলফামারিতে একটি এবং কক্সবাজারে একটি ।
অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার:
অক্টোবর মাসে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে নয়জন নারী ও ৩০ জন পুরুষসহ মোট ৩৯ জনের অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার হয়েছে। গত সেপ্টেম্বর মাসে এর সংখ্যা ছিল ৪১ জন।
গণপিটুনি:
অক্টোবর মাসে ১৬টি গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে, যেখানে ১১ জনের মৃত্যু ও সাতজন আহত হয়েছেন। চুরি বা ডাকাতি, ছিনতাই সন্দেহে গণপিটুনির ঘটনাগুলো সংঘটিত হয়েছে। আহতদের মধ্যে দুইজনের গণপিটুনির পর চোখ উৎপাটনের চেষ্টা করা হয়েছে।
মানবাধিকার জরিপ বিষয়ে মন্তব্যে এমএসএফ বলছে, অক্টোবর মাসে রাজনৈতিক সহিংসতা, নেতাকর্মীদের গ্রেফতার, মামলা ও সভা মিছিলে পুলিশি বলপ্রয়োগের ঘটনা নিদারুণভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে মৃত্যু, নির্যাতন, তাদের পরিচয়ে অপহরণের মতো ঘটনা বন্ধ হয় নাই বরং বৃদ্ধি পেয়েছে। সংখ্যালঘুদের প্রতি সহিংসতা অব্যাহত রয়েছে যা উদ্বেগজনক, সীমান্তে হতাহতের মতো ঘটনা বন্ধ হয়নি।
আরও পড়ুন: অক্টোবরে রাজনৈতিক সহিংসতায় নিহত ৮, আহত ২৪৩: প্রতিবেদন
বর্তমান সাইবার নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহার, সাংবাদিকসহ অন্যদেরও পেশাগত দায়িত্ব পালনে হুমকি, শারীরিক নির্যাতন ও হামলা তথা সাংবাদিকতা এবং মত প্রকাশের সংবিধান প্রদত্ত অধিকার প্রয়োগের পথ রুদ্ধ করার মত ঘটনা ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েছে। অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধারের ঘটনার ধারাবাহিকতা রয়েই গেছে। অপরদিকে গণপিটুনির মত আইন হাতে তুলে নেয়ার ঘটনা ক্রমাগতভাবে বেড়ে চলেছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, মানবাধিকার লংঘনের এই ঘটনাগুলো ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়ায় এমএসএফ গভীর ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ করছে। এসব ঘটনা রোধে সরকারের নিষ্ক্রিয়তার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে এবং একই সঙ্গে প্রত্যেকটি ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্তসহ ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছে।
সারাবাংলা/আরএফ/এনইউ