ঢাকা: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য ঘোষিত তপসিল স্থগিত এবং এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা রিট খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট।
সোমবার (১১ ডিসেম্বর) বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে রিটের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী ইউনূস আলী আকন্দ। রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। নির্বাচন কমিশনের পক্ষে ছিলেন খান মোহাম্মদ শামীম আজিজ।
এর আগে, গতকাল (১০ ডিসেম্বর) রিটকারী আইনজীবীর সময় আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত রিটের আদেশের দিন পিছিয়ে আজ (১১ ডিসেম্বর) ধার্য করেন।
গত ৪ ডিসেম্বর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল স্থগিত চেয়ে রিটের শুনানি শেষ হয়। একইসঙ্গে আদেশের জন্য ১০ ডিসেম্বর দিন ধার্য করা হয়।
ওইদিন শুনানির এক পর্যায়ে রিটকারি আইনজীবী সব দলের অংশ গ্রহণে নির্বাচন হওয়া উচিত এমনটি উল্লেখ করে বলেন, ‘২০১৮ সালে আমি নির্বাচন করেছিলাম। সেই নির্বাচনে রাতে ভোট হয়েছে। রাতের ভোটের বিষয়ে রাশেদ খান মেনন বরিশালের এক জনসভায় বক্তব্যও দিয়েছেন।’
এ সময় রিটকারী আইনজীবীকে উদ্দেশে আদালত বলেন, ‘রাতে ভোট কোনো মামলা করেছেন, কোনো মামলা হয়েছে? রাতের ভোটের কোনো প্রমাণ আছে?’
তখন রিটকারী আইনজীবী ড. ইউনুছ আলী আকন্দ বলেন, ‘এটি ১৮ কোটি মানুষ সাক্ষী। নির্বাচন ট্রাইব্যুনালে মামলা করলে তা নিষ্পত্তি করতে করতে ৫ বছর কেটে যাবে, মামলা করে কী লাভ?’
তখন আদালত এ আইনজীবীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আপনি অফিসার্স অব দ্য কোর্ট। আপনি কোর্টকে সহায়তা করবেন। তথ্য প্রমাণ ছাড়া বা বাইরের রাজনৈতিক বক্তব্য দিয়ে তো আর মামলা চলবে না।’
পরে আদালত তাকে তার আরও কোনো বক্তব্য থাকলে তা লিখিত আকারে দিতে নির্দেশ দিয়ে ১০ ডিসেম্বর আদেশের জন্য দিন ধার্য করে দেন।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিলের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে গত বুধবার (২৯ নভেম্বর) হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ রিট (রিট পিটিশন নম্বর: ১৫১৫৪/২০২৩) করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. ইউনুছ আলী আকন্দ।
রিটে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি), মন্ত্রিপরিষদ সচিব, আইন সচিব, লেজিসলেটিভ সচিব, রাষ্ট্রপতির সচিব, প্রধানমন্ত্রীর সচিব এবং সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবকে বিবাদী করা হয়।
রিটে জাতীয় সংসদ বহাল থাকা অবস্থায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার কর্তৃক ঘোষিত গত ১৫ নভেম্বর তারিখের প্রজ্ঞাপন মূলে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা করা কেন অবৈধ হবে না, এই মর্মে রুল জারির আর্জি জানানো হয়। একই সঙ্গে রুল শুনানি না হওয়া পর্যন্ত তফসিল স্থগিতের আবেদন জানানো হয়।
এর আগে গত ২৮ নভেম্বর সংসদ নির্বাচনের তফসিল স্থগিত এবং আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য সংসদ নির্বাচন পেছাতে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছিলেন ইউনুছ আলী আকন্দ।
রেজিস্ট্রি ডাক ও ইমেল যোগে পাঠানো আইনি নোটিশে ২৪ ঘণ্টার সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। নোটিশপ্রাপ্তির ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছিল। অন্যথায় উচ্চ আদালতে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছিল। নোটিশের বিষয়ে কোনো সাড়া না আজ (২৯ নভেম্বর) হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন তিনি।
জনস্বার্থে এই লিগ্যাল নোটিশ পাঠানোর বিষয়টি উল্লেখ করে আইনজীবী মো. ইউনুছ আলী আকন্দ বলেন, ‘দেশের বড় রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অনুপস্থিত রয়েছে। যদি তারা নির্বাচনে আসতে চায় তাহলে সেক্ষেত্রে আমাদের নির্বাচনের তারিখ পিছিয়ে দেওয়া উচিত। এ ছাড়া অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের বিষয়ে বিদেশিদের চাপ রয়েছে।’ সব দিক বিবেচনায় নিয়ে তফসিল স্থগিত এবং নির্বাচন পেছানোর দাবিতে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়।