নির্বাচনি প্রচারে অমরের পাশে কেউ নেই
২১ ডিসেম্বর ২০২৩ ০২:০৯
রাঙ্গামাটি: দুঃসময়ে দলের নিবেদিতপ্রাণ আওয়ামী লীগ নেতা অমর কুমার দে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৯৯ নম্বর রাঙ্গামাটি আসনে চেয়েছিলেন দলের মনোনয়ন। তবে দলের মনোনয়ন পাননি রাঙ্গামাটির আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ‘ত্যাগী নেতা’ হিসেবে পরিচিত অমর। শেষ পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনে (ইসি) নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের প্রার্থী হয়েছেন নির্বাচনে।
এদিকে গত সোমবার (১৮ ডিসেম্বর) রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে প্রতীক বরাদ্দের পরপরই প্রচারে নেমে গেছেন সব প্রার্থী। তবে অমর তার নির্বাচনি প্রচার শুরু করেছেন বুধবার (২০ ডিসেম্বর)। নির্বাচনি প্রতীক ছড়ি (লাঠি) নিয়ে এদিন সকালে রাঙ্গামাটি শহর এলাকায় প্রচারে নামেন।
অন্যসব প্রার্থীর চেয়ে যেমন ভোটের প্রচার পিছিয়ে শুরু করেছেন অমর, তেমনি অন্য প্রার্থীদের সঙ্গে তার ভোট চাওয়ার চিত্রও ভিন্ন। অন্যসব প্রার্থীর সঙ্গে কর্মী-সমর্থকদের বিশাল বহর থাকলেও জাতীয় নির্বাচনের প্রচারেও অমরকে দেখা গেছে একা। তার সঙ্গে দেখা যায়নি কোনো কর্মী-সমর্থক। একাই ভোটারদের মধ্যে লিফলেট বিতরণ করছিলেন, ভোট চাইছিলেন। ভোটারদের সঙ্গে কথাও বলছিলেন আন্তরিকতার সঙ্গে।
আরও পড়ুন- আ.লীগের মনোনয়ন চেয়ে ব্যর্থ অমর গেলেন ‘মুক্তিজোটে’
অমর কুমার দের বুধবারের নির্বাচনি প্রচারে ভোটারদের অনেকের পক্ষ থেকেই ছিল সাধারণ প্রশ্ন— ‘নেমে যাবেন না তো?’ অর্থাৎ শেষ পর্যন্ত ভোট থেকে সরে দাঁড়াবেন কি না অমর। উত্তরে তিনি বলেছেন, ‘নেমে গেলে তো আগেই প্রত্যাহার করে নিতাম।’ একা এভাবে ভোট করার জন্য অনেককেই দেখা গেল অমরকে ‘স্যালুট’ করতেও।
বুধবার সকাল থেকে রাঙ্গামাটি জেলা শহরের বনরূপা, হ্যাপির মোড়, নিউ মার্কেটসহ বিভিন্ন এলাকায় নির্বাচনি গণসংযোগ করেন অমর কুমার দে। ছড়ি প্রতীকের এই প্রার্থী বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি করছি। নির্যাতনের শিকার হয়েছি, হামলার শিকার হয়েছি। কখনো অন্যায়ের সঙ্গে আপস করিনি। দল আমাকে অবহেলা ছাড়া কিছুই দেয়নি। শেষ পর্যন্ত দলের মনোনয়ন চেয়েও পাইনি। তাই স্বতন্ত্র না হয়ে মুক্তিজোটের প্রার্থী হয়েছি। এটি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের দল। রাঙ্গামাটিতে আমি ছাড়াও দুজন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আছেন। আমি মনে করি তিনজনের মধ্যে থেকে ভোটাররা যোগ্য, সৎ ও নিষ্ঠাবান প্রার্থীকে বেছে নেবেন।’
৭ নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি
এদিকে নির্বাচনি প্রতিশ্রুতিতে অমর কুমার দে সাতটি বিষয়কে তুলে ধরেছেন। এর মধ্যে প্রথমেই তিনি উল্লেখ করেছেন ১০ উপজেলা ও ১২টি থানা নিয়ে গঠিত রাঙ্গামাটি সংসদীয় আসনের দুর্গম অঞ্চলের যাতায়াত ব্যবস্থার কথা। বলেছেন, এই জেলার ১৮টি ভোটকেন্দ্রে হেলিকপ্টার দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। তাই জেলার যাতায়াতব্যবস্থা সুগম করা জরুরি।
অমরের প্রতিশ্রুতির মধ্যে আরও রয়েছে— রাঙ্গামাটিকে পূর্ণাঙ্গ পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তোলা এবং রেল যোগাযোগ স্থাপন করা; এবং রাঙ্গামাটি শহর থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরবর্তী রাউজান থেকে গ্যাস সঞ্চালন লাইন চালু।
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বিষয়েও অমর গুরুত্ব দিয়েছেন। প্রতিশ্রুতিতে রয়েছে— পার্বত্য শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীসহ সব সম্প্রদায়ের সমান অধিকার নিশ্চিত করা; পার্বত্য শান্তি চুক্তিতে স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের কোনো অধিকারের কথা লেখা নেই, সুতরাং জেলা পরিষদে দুজন হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করে পূর্ণ ক্ষমতা প্রদান; রাঙ্গামাটিতে বিমানবন্দর স্থাপন; এবং ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি করে পাহাড়ি-বাঙালি সম্প্রীতি রক্ষা করা।
আরও পড়ুন- সেই অমর এবার নিলেন আ.লীগের মনোনয়নপত্র
পোড় খাওয়া রাজনীতিবিদ অমর
অমর কুমার দে রাঙ্গামাটি জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক উপপ্রচার সম্পাদক। রাঙ্গামাটি পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও প্রচার সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। অমর বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির সাবেক সভাপতি ও জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। বর্তমানে কেন্দ্রীয় হিন্দু ফেডারেশনের সহসভাপতি ও জেলা কমিটির আহ্বায়কের দায়িত্বে রয়েছেন। তবে আওয়ামী লীগের দলীয় কোনো পদ নেই তার, যদিও রাঙ্গামাটিতে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে একনামে পরিচিত তিনি।
স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বলছেন, দুঃসময়ে দলের জন্য নিবেদিতপ্রাণ ছিলেন অমর। আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে থাকা অবস্থায় রাজনৈতিক অস্থিরতা হলেই হামলার লক্ষ্য ছিল অমর কুমার দের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। তবে সুসময়ে দলের শীর্ষ নেতাদের কাছে মূল্যায়নের বদলে বরং অবহেলা পেয়েছেন অমর। ধীরে ধীরে রাজনীতির মাঠে প্রভাব হারিয়েছেন তিনি।
আরও পড়ুন- পাহাড়ে পুরনো মাঝিদের হাতেই নৌকার বৈঠা
এর আগে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলেন অমর কুমার। পরে তিনি প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেন। সবশেষ রাঙ্গামাটি পৌরসভা নির্বাচনেও নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর বিপক্ষে ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন।
দীপংকরের পথ পরিষ্কার
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৯৯ নম্বর রাঙ্গামাটি আসনে পাঁচজন প্রার্থী মনোনয়ন ফরম জমা দিয়ে বৈধ প্রার্থী হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছিলেন। তারা হলেন— বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দীপংকর তালুকদার, স্বতন্ত্র প্রার্থী ও সাবেক সংসদ সদস্য ঊষাতন তালুকদার, জাতীয় পার্টির প্রার্থী হারুনুর রশিদ, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের প্রার্থী অমর কুমার দে এবং তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী মো. মিজানুর রহমান।
শেষ পর্যন্ত জাতীয় পার্টির প্রার্থী হারুনুর রশিদ ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ঊষাতন তালুকদার ‘ব্যক্তিগত’ কারণ দেখিয়ে মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। ফলে পার্বত্য এই আসনটিতে এখন প্রতিদ্বন্দ্বী তিনজন। তাদের মধ্যে দীপংকর ও অমর কুমারের বেশ পরিচিতি থাকলেও মো. মিজানুর রহমান আলোচনায় আসেন ভোটে দাঁড়িয়ে। দলীয় শক্তি সামর্থ্য, সমর্থন ও ‘শক্তিশালী’ কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় আওয়ামী লীগের দীপংকর তালুকদার এই নির্বাচনেও জয়ের দ্বারপ্রান্তে রয়েছেন বলে মনে করছেন ভোটাররা।
সারাবাংলা/টিআর
অমর কুমার দে ঊষাতন তালুকদার জাতীয়-নির্বাচন দীপংকর তালুকদার দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন পার্বত্য রাঙ্গামাটি মুক্তিজোট রাঙ্গামাটি রাঙ্গামাটি সংসদীয় আসন সংসদ নির্বাচন