ঢাকা: ডিজিটাল থেকে স্মার্ট বাংলাদেশে উত্তরণ করার অঙ্গীকারে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ উন্নয়ন দৃশ্যমান বাড়বে এবার কর্মসংস্থান’ স্লোগান নিয়ে ইশতেহার ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে অতীতের ধারাবাহিকতায় এবারও ইশতেহার ঘোষণা করে দলটি। দলের সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, সন্ত্রাস করে নির্বাচন বানচাল করার স্বপ্ন-সাধ কোনোদিনই জনগণ পূরণ হতে দেবে না।
বুধবার( ২৭ ডিসেম্বর) সকালে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ইশতেহার-২০২৪ ঘোষণার সময় এসব প্রতিশ্রুতির কথা তুলে ধরেন তিনি।
রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলের গ্র্যান্ড বলরুমে নির্বাচনি ইশতেহার ঘোষণা হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব এবং নির্বাচনি ইশতেহার উপস্থাপন করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
আরেকটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘আন্তরিকতা ও নিষ্ঠা থাকা সত্ত্বেও সরকার পরিচালনা করতে গিয়ে সবসময়ই যে আমরা শতভাগ সফল হয়েছি, এমন দাবি করব না। তবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কথামালার রাজনীতিতে বিশ্বাসী নয়। আমরা যা বলি, তা বাস্তবায়ন করি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০০৮, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনি ইশতেহার বাস্তবায়ন তার প্রমাণ। তবে মাঝে-মধ্যে মনুষ্য-সৃষ্ট, প্রাকৃতিক এবং বৈশ্বিক বাধাবিপত্তি আমাদের চলার গতিপথকে মন্থর করেছে। ২০১৩-১৬ সময়ে বিএনপি-জামাতের অগ্নি-সন্ত্রাস এবং জঙ্গিবাদ বিস্তারের চেষ্টা মোকাবিলা করে আমাদের এগিয়ে যেতে হয়েছে। ২০০৯ সালের পর থেকে বেশ কয়েকটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করতে হয়েছে। সবচেয়ে বড় আঘাত এসেছে ২০২০ সালে যখন বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস মহামারি ছড়িয়ে পড়ে। এই মহামারি গোটা বিশ্বের অর্থনীতি এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে তছনছ করে দিয়েছিল।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের সরকার একবিংশ শতাব্দীর এই ভয়াবহ মহামারি সফলভাবে মোকাবিলা করার পাশাপাশি অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে সক্ষম হয়েছি। তবে করোনাভাইরাস মহামারির ধকল কাটতে না কাটতেই প্রথমে শুরু হয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং এ বছর ইজরাইল-ফিলিস্তিন যুদ্ধ। যেকোন যুদ্ধ শুধু দুই প্রতিবেশির সমরাস্ত্র ব্যবহারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। এটা সারবিশ্বকেই ক্ষতিগ্রস্থ করে।’
এ সময় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ সমরাস্ত্র যুদ্ধের পাশাপাশি ভয়াবহ বৈশ্বিক অর্থনৈতিক যুদ্ধে রূপান্তরিত উদাহরণ টানেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘অবরোধ-পাল্টা অবরোধের ফলে গোটা বিশ্বের অর্থনীতির টালমাটাল অবস্থা হয়েছে। আমাদের মত উন্নয়নশীল দেশগুলোকে অধিক মূল্যে পণ্য ক্রয় ও আমদানি করতে বাধ্য করা হচ্ছে। দেশীয় মুদ্রার মানের ব্যাপক অবনতিতে মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধি পেয়েছে। যার প্রভাব পড়েছে দ্রব্যমূল্য এবং মানুষের জীবনযাপনের ওপর। বহুমুখী ও সর্বাত্মক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও আমরা অনেক সময় নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্য বৃদ্ধি রোধ করতে পারিনি। এ সমস্যা শুধু আমাদের দেশের নয়, এ সমস্যা ধনী-গরিব সকল দেশের।’
তবে তার সরকার সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনির আওতা সম্প্রসারণসহ নানা উদ্যোগের মাধ্যমে নিম্নবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত মানুষের দুর্দশা লাঘবের চেষ্টা করে যাচ্ছে বলেও দাবি করেন তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা আশা করি, খুব শিগগিরই আমরা এই অভিঘাত কাটিয়ে উঠতে পারব, ইনশাআল্লাহ।’
দেশবাসীর উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচন এলেই মুক্তিযুদ্ধ, বাংলাদেশ এবং উন্নয়ন-বিরোধী একটি চক্র ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করে সক্রিয় হয়ে ওঠে। নির্বাচনে কুটকৌশল অবলম্বন বা কারচুপির মাধ্যমে কিংবা পিছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় যেতে তারা আঁটঘাট বেধে মাঠে নামে। সফল না হলে জনগণের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে প্রতিশোধ স্পৃহায়। অগ্নি-সন্ত্রাস, যানবাহন পোড়ানো, বোমাবাজি, নাশকতা বা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সাধারণ জনগণকে ভীত-সন্ত্রস্ত করে ঘরবন্দি করে রাখতে চায়। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। তার ওপর এবার বিদেশ থেকেও তারা কিছু কলকাঠি নাড়া বা উৎসাহ পাচ্ছে।’
নির্বাচন বিরোধী বিএনপি-জামায়াতের দিকে ইঙ্গিত করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘জনগণের ম্যান্ডেট পাবে না- এটা বুঝতে পেরে আগে থেকে এবার তারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়েছে। হরতাল-অবরোধের নামে যানবাহন পোড়ানো, মানুষ হত্যা, রেল-লাইন উপরে ফেলাসহ বিভিন্ন নাশকতা চালিয়ে যাচ্ছে। মা ও শিশুর অগ্নিদগ্ধ লাশ সকলের বিবেককে নাড়া দিয়েছে। এটা কেন হবে? কি অপরাধ ছিল ওই মা আর শিশুর! এই ধরনের হীন কাজ আর সহ্য করা যায় না।’
জনগণের সাড়া না পেয়ে ভাড়াটে বাহিনী দিয়ে এসব নাশকতা চালিয়ে জানমালের ক্ষতি করছে। সন্ত্রাস করে নির্বাচন বানচাল করার স্বপ্ন-সাধ কোনদিনই তাদের পূরণ হবে না বা জনগণ পূরণ হতে দেবে না বলে হুশিয়ারিও উচ্চারণ করেন।
দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘২০১৩-২০১৬ সময়ে যেমন আপনারা এই ঘাতকদের নিবৃত্ত করেছিলেন। তাদেরকে বাধা দিয়েছিলেন। আসুন, এবারও সম্মিলিতভাবে ওদের প্রতিহত করি। স্বাধীনতা-বিরোধী, উন্নয়ন বিরোধী এই শকুনের দল আর কোনো দিন যাতে বিষময় দন্ত-নখর বসিয়ে বাংলাদেশকে ক্ষতবিক্ষত করতে না পারে।’
দেশবাসীকে বিজয়ের মাসে সেই শপথ নেওয়ার আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের ইতিহাসে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ধারাবাহিকভাবে রাষ্ট্র পরিচালনার একটানা ১৫ বছর পূর্ণ হতে চলেছে। পাঁচ বছর মেয়াদি সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা স্থিতিশীল থাকায় আমরা বাংলাদেশের অভূপূর্ব উন্নতি সাধন করতে পেরেছি। বাংলাদেশ আজ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছে।’
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করে। তাঁর স্বপ্ন ছিল ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত, উন্নত-সমৃদ্ধ ‘সোনার বাংলা’ গড়ে তোলার অঙ্গীকার পুর্নব্যক্ত করেন।
দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আসুন, আরও একবার বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচনি প্রতীক নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আমাদের জয়যুক্ত করে আপনাদের সেবা করার সুযোগ দিন। আপনারা আমাদের ভোট দিন, আমরা আপনাদের উন্নয়ন, শান্তি ও সমৃদ্ধি দিব। এবারও নির্বাচনি ইশতেহার তৈরির জন্য দেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছ থেকে মতামতও গ্রহণ করে আওয়ামী লীগ। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়ন অভিযাত্রায় উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকারে কৃষি, সেবা ও শিল্পোৎপাদন খাতকে গুরুত্ব দিয়ে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার রয়েছে।’