Thursday 05 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ভারতের সঙ্গে রেল ট্রানজিট চুক্তি বাতিল চেয়ে আইনি নোটিশ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২৬ জুন ২০২৪ ২০:২৯

ঢাকা: বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর সংযোগকারী রেল ট্রানজিট সমোঝোতা চুক্তি বাতিল চেয়ে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে।

বুধবার (২৬ জুন) রেজিস্ট্রি ডাকযোগে রেল মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও আইন সচিব বরাবর সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. মাহমুদুল হাসান এই আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন।

বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ও ভবিষ্যতে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সামরিক সংঘাত এড়াতে এই আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে বলে জানান আইনজীবী মাহমুদুল হাসান।

আইনি নোটিশে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জনের পর থেকে বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রণীত ‘সবার সাথে বন্ধুত্ব, কারও সাথে শত্রুতা নয়’ নীতি অনুসরণ করে আসছে। পাশাপাশি বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সংঘাত ও সহিংসতা থেকে নিজেকে সুরক্ষার জন্য শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলোর সাথে ‘ব্যালেন্স অব পাওয়ার’ (Balance of Power) নীতি অনুসরণ করে আসছে। কিন্তু ২০২৪ সালের জুনে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের রেল ট্রানজিটসংক্রান্ত সমোঝোতা চুক্তি সইয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশের ‘ব্যালেন্স অব পাওয়ার’ নীতি হুমকির মুখে পড়েছে। ফলে ভারতের অভ্যন্তরীণ সংঘাতে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ন হওয়ার পাশাপাশি ভবিষ্যতে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সামরিক সংঘাতের ঝুঁকি দেখা দিয়েছে।

নোটিশে বলা হয়েছে, বিশ্বের বিভিন্ন বন্ধুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রের মধ্যে রেলযোগাযোগ ব্যবস্থা নতুন কিছু নয় । কিন্তু ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের রেল ট্রানজিট স্বাভাবিক কোনো বিষয় নয়। ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর অবস্থা স্বাভাবিক নয়। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে বিভিন্ন বিদ্রোহী গোষ্ঠী রয়েছে, যারা স্বাধীনতা চায় । এ ছাড়া ভারতের অরুণাচল প্রদেশ নিয়ে চীনের সঙ্গে ব্যাপক বিবাদ রয়েছে। অরুণাচল প্রদেশ নিয়ে ভারত ও চীনের নিয়মিত সংঘাত লেগেই থাকে। এবং ইতোপূর্বে ভারত ও চীনের সঙ্গে যুদ্ধ হয়েছে।

এ সব কারণে ভারতের মূল ভূখণ্ড থেকে উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে দ্রুত সামরিক সরঞ্জাম পাঠানোর জন্য বাংলাদেশের রেল ট্রানজিট প্রয়োজন। এ ছাড়া বর্তমানে ভারতের শিলিগুড়ি দিয়ে ভারতের মূল ভূখণ্ড থেকে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে সড়ক ও রেলযোগাযোগ আছে, যা শিলিগুড়ি করিডোর যা ‘চিকন নেক’ বলে পরিচিত। এই শিলিগুড়ি করিডোর চীনের কাছাকাছি হওয়ায় ভারত তার সামরিক সরঞ্জাম পাঠানোর নিরাপদ রাস্তা হিসেবে বাংলাদেশের রেল ট্রানজিট ব্যাবহার করতে চাইছে।

এ সব কারণে ভারতকে রেল ট্রানজিট দেওয়া বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের ওপর ব্যাপক ঝুঁকি তৈরি করবে। কারণ ভবিষ্যতে চীন ও ভারতের মধ্যে বড় ধরনের যুদ্ধ শুরু হলে চীনের সামরিক বাহিনী ভারতের সামরিক সরঞ্জামের যোগান (Supply Chain) বাধাগ্রস্ত করার জন্য বাংলাদেশের ভূখণ্ডে ভারতীয় রেলের উপর মিসাইল হামলা চালাতে পারে। যুদ্ধে প্রতিপক্ষের সামরিক সরঞ্জামের যোগানে হামলা একটি পুরোনো রীতি । বর্তমানে চীনের কাছে ব্যাপক পরিমাণে ইন্টারকন্টিনেন্টাল মিসাইল আছে। যার মাধ্যমে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে তারা অনায়াসে হামলা চালাতে পারে।

এ ছাড়া বাংলাদেশের কাছে কোনো অ্যান্টি ব্যালিস্টিক মিসাইল (Anti Ballistic Missile) যেমন এস-৪০০, প্যাট্রিয়ট মিসাইল সিস্টেম নেই। ফলে বাংলাদেশ কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের মিসাইল হামলা ঠেকাতে পারবে না।

আইনি নোটিশে আরও বলা হয়েছে, ভারতের শিলিগুড়ি করিডোর দিয়ে দেশটির মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় সাতটি রাজ্যের রেলপথ ও সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা রয়েছে। এই রুট দিয়ে ভারতের দ্রুতগামী অসংখ্য যাত্রীবাহী ও পণ্যবাহী রেল চলাচল করে থাকে। সুতরাং বাণিজ্যিক মালামাল পাঠানোর জন্য বাংলাদেশের রেল ট্রানজিট ভারতের কোনো প্রয়োজন নেই। মূলত সামরিক সরঞ্জাম পাঠানোর জন্য বাংলাদেশের রেল ট্রানজিট ভারতের প্রয়োজন। ভারতের শিলিগুড়ি করিডোরের খুব কাছেই চীন ও ভূটান সীমান্ত। সেখানে ডোকলাম (Doklam) নামক অঞ্চলে চীন সামরিক ঘাঁটি সহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করছে। এই কারণে এই ডোকলাম নিয়ে ২০১৭ সালে ভারতের সাথে চীনের সংঘাত শুরু হয়। এসব কারণে ভারতের আশঙ্কা ভবিষ্যতে ভারত ও চীন বড়ধরনের যুদ্ধে জড়ালে চীনের সামরিক বাহিনী ভারতের এই শিলিগুড়ি করিডোরে আক্রমণ করতে পারে এবং এই করিডোর বন্ধ করে দিতে পারে।

এই চুক্তি বাস্তবায়ন হলে, ভবিষ্যতে ভারত ও চীন যুদ্ধে জড়ালে, চীনের সামরিকবাহিনী ভারতের সামরিক সরঞ্জামের জোগান বাধাগ্রস্ত করার জন্য বাংলাদেশের ভূখণ্ডে হামলা চালাতে পারে। ফলে ভবিষ্যতে চীন ও ভারতের যুদ্ধে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন হবে এবং অগণিত নাগরিকদের জীবন দিতে হবে।

তাই এই আইনি নোটিশ পাওয়ার সাত দিনের মধ্যে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি স্বরূপ এবং ভবিষ্যতে চীনের সাথে সামরিক সংঘাত সৃষ্টিকারী এই রেল ট্রানজিট সমঝোতা চুক্তি বাতিলের অনুরোধ জানানো হয়েছে। অন্যথায় এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে হাইকোর্ট রিট মামলা দায়ের করা হবে বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে।

সারাবাংলা/কেআইএফ/পিটিএম

চুক্তি টপ নিউজ বাতিল রিট রেল ট্রানজিট


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

ধানমন্ডি থেকে গ্রেফতার শাজাহান খান
৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০২:৪৫

সম্পর্কিত খবর