Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘প্রশাসনের অবহেলায় সুন্দরবনের মধুর জিআই স্বত্ব ভারতের’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২৬ জুন ২০২৪ ২০:৫৩

সুন্দরবনের মধুর দুই-তৃতীয়াংশই সংগৃহীত হয় বাংলাদেশে। কিন্তু ভারত সুন্দরবনের মধুকে নিজেদের জিআই পণ্যের স্বীকৃতি দিয়েছে। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: সুন্দরবনের মধুর তিন ভাগের দুই ভাগই বাংলাদেশে সংগৃহীত হলেও একে নিজেদের ভৌগলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের স্বীকৃতি দিয়েছে ভারত। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিড) এর পেছনে বাংলাদেশের প্রশাসন ও দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের অবহেলাকে দায়ী করেছে।

সিপিডি বলছে, সুন্দরবনের মধুর দুই-তৃতীয়াংশ বাংলাদেশ অংশ থেকে সংগৃহীত হয়। অন্যদিকে ভারত সুন্দরবন থেকে তুলনামূলক কম মধু সংগ্রহ করে থাকে। এ হিসাবে বাংলাদেশ সুন্দরবনের মধু জিআই স্বত্বের দাবিদার। কিন্তু সম্প্রতি বিশ্ব মেধাসম্পদ সংস্থার (ডব্লিউআইপিও) এক সম্মেলনে সুন্দরবনের মধুকে নিজেদের জিআই পণ্য হিসেবে উপস্থাপন করেছে ভারত। প্রশাসন ও দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের অবহেলার কারণেই সুন্দরবনের মধুর জিআই মর্যাদা বাংলাদেশ হারিয়েছে।

বিজ্ঞাপন

বুধবার (২৬ জুন) দুপুরে সিপিডির ধানমন্ডি কার্যালয়ে আয়োজিত ‘সুন্দরবনের মধু এখন ভারতের ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য (জিআই)’ শীর্ষক এক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলা হয়। ব্রিফিংয়ে জিআই পণ্যের স্বীকৃতি বিষয়ে ভারতের সঙ্গে চুক্তি করার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্টদের তাগাদা দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন- টাঙ্গাইল শাড়িসহ ১৪টির সনদ হস্তান্তর, জিআই পণ্য বেড়ে হলো ৩১

সুন্দরবনের মধুর জিআই স্বীকৃতি না পাওয়ার কথা তুলে ধরে সিপিডির সম্মানীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ২০১৭ সালের ৭ আগস্ট বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক সুন্দরবনের মধুকে বাংলাদেশের জিআই পণ্য হিসেবে নিবন্ধনের জন্য শিল্প মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছিলেন। সেই নিবন্ধন এখনো দেওয়া হয়নি। অথচ ভারত আমাদের চার বছর পর ২০২১ সালে আবেদন করে জিআই স্বত্ব পেয়ে গেছে। এই দায় আমরা কাকে দেবো? টাঙ্গাইল শাড়ি কিংবা সুন্দরবনের মধু নিয়ে সংশ্লিষ্টদের আলোচনা নেই। দক্ষতা, সক্ষমতার সঙ্গে সঙ্গে জবাবদিহিতার জায়গাও দুর্বল।

বিজ্ঞাপন

দেবপ্রিয় বলেন, ‘মেড ইন বাংলাদেশে’ যেতে হলে, বিদেশি বিনিয়োগ আনতে হলে মেধাস্বত্বকে সুরক্ষা দিতে হবে। বিদেশি বিনিয়োগ না আসার অন্যতম বড় একটি কারণ মেধাস্বত্ব আইনের প্রয়োগ না থাকা। বাংলাদেশে হাজার হাজার ফ্রিল্যান্সার আছেন। তারা অ্যাপসহ নানা পণ্য তৈরি করেন। তাদের পণ্য সুরক্ষার ব্যবস্থা কী? অর্থনীতির জন্য মেধাস্বত্ব অধিকার (আইপিআর) সুরক্ষা ও এ সংক্রান্ত আইনের প্রয়োগ গুরুত্বপূর্ণ।

ভারতের সঙ্গে চুক্তির তাগিদ দিয়ে দেবপ্রিয় বলেন, আমাদের জিআই পণ্যের ক্ষেত্রে ইউরোপীয় আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে হবে। লিসবন-জেনেভা আইনের অধীনে অংশ নিতে হবে। জিআই পণ্যের স্বীকৃতির জন্য এখন সময় এসেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ব্যবস্থা আত্মস্থ করা। পাশাপাশি ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি করতে হবে। দুই দেশের মন্ত্রী ও সচিব পর্যায়ের পরবর্তী বৈঠকেই এটি উত্থাপন করার জোর দাবি জানাই। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে এলে তার সঙ্গে আলোচনাতেও বিষয়টি অবশ্যেই উত্থাপন করা উচিত।

সুন্দরবনের মধুর জিআই পণ্যের স্বীকৃতি নিয়ে বুধবার ব্রিফিং করে সেন্টার ফর পলিসি ডায়গল (সিপিডি)। ছবি: সারাবাংলা

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, দেশের ঐতিহ্যবাহী পণ্যগুলোর যদি জিআই না করি, তাহলে আমরা কোনোদিনই নিজেদের পণ্যকে নিজেদের বলে দাবি করতে পারব না। পণ্যগুলো তালিকাভুক্ত না করে জিআই না করলে অন্যরা নিয়ে নেবে। এ রকম কোনো পণ্যের জিআই স্বত্ব যখন অন্য দেশ নিয়ে যায়, তখন আমাদের ঘুম ভাঙে।

ফাহমিদা খাতুন আরও বলেন, এই পণ্যগুলোকে কেবল পণ্য হিসেবে দেখলে হবে না। এসব পণ্যের উৎপাদন-বিপণনের সঙ্গে অনেক মানুষের দক্ষতা যুক্ত, জীবন যুক্ত। তাদের শ্রমে যে পণ্যের সুনাম তৈরি হয়েছে তার ব্যবসায়িক মুনাফা অন্য কেউ নেবে, একে কম গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করার সুযোগ নেই। তাই আমাদের এ ধরনের পণ্যের পূর্ণাঙ্গ তালিকা করতে হবে। তারপর সেই তালিকার পণ্যগুলোকে জিআই পণ্য হিসেবে নিবন্ধত দেওয়া শুরু করতে হবে।

আরও পড়ুন- জিআই স্বীকৃতি কী-কেন-কীভাবে, এর গুরুত্বই বা কতটুকু

সিপিডির প্রবন্ধে বলা হয়, বাংলাদেশের পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্ক বিভাগ (ডিপিডিটি) এ বছরের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত ৩১টি জিআই পণ্য তালিকাভুক্ত করেছে, যে তালিকায় সুন্দরবনের মধু নেই। অথচ ২০১৭ সালের ৭ আগস্ট বাগেরহাট জেলা প্রশাসন সুন্দরবনের মধুকে জিআই সনদের স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য শিল্প মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছিল। সাত বছরেও সে আবেদন সাড়া পায়নি। অথচ ভারতের তুলনায় বাংলাদেশ সুন্দরবনের মধু সংগ্রহ করে প্রায় দ্বিগুণ। সে হিসাবে এর জিআই স্বীকৃতির দাবিদার বাংলাদেশ। দেশের প্রশাসনিক অবহেলার কারণে এটি অর্জিত হয়নি, যা একটি বিস্ময়কর ঘটনা।

ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন সিপিডির বিশেষ ফেলো ড. মুস্তাফিজুর রহমান ও সংশ্লিষ্ট বিষয়ে গবেষণা কর্মকর্তা নাইমা হক।

আরও পড়ুন-

সারাবাংলা/জিএস/টিআর

জিআই পণ্য জিআই পণ্যের স্বীকৃতি টপ নিউজ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য ভৌগলিক নির্দেশক পণ্য সিপিডি সুন্দরবনের মধু সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর