Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

৩ মাসে সাপে কেটেছে ২০০ জনকে, মেলেনি রাসেলস্ ভাইপারের ‘অস্তিত্ব’

তহীদ মনি, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
১০ জুলাই ২০২৪ ০৯:৫৭

যশোর: গত তিন মাসে যশোরে অন্তত ২০০ জনকে সাপে কেটেছে। এর মধ্যে ২৫ থেকে ৩০ জন বিষধর সাপের কামড়ের শিকার হয়েছেন। এদের মধ্যে সাত জনের মৃত্যু হয়েছে। এদিকে, রাসেলস্ ভাইপার নিয়ে ভয় ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লেও যশোরে কোথাও সাপের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি বলেও দাবি করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ।

অন্যদিকে, গত সোমবার (৮ জুলাই) চৌগাছায় ১২জনকে সাপে কেটেছে দাবি করে হাসপাতালে ভর্তি হয়। কিন্তু চিকিৎসকরা তদের শরীরে সাপের কামড়ের কোনো লক্ষণ ও বিষের অস্তিত্ব পায়নি বলে জানিয়েছে। ভর্তিকৃত রোগীরা ম্যাস সাইকোজেনেটিক ইলনেসের শিকার বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ।

জানা গেছে, জুনে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে মোট ৩১জন সাপের কামড়ে অসুস্থ রোগী ভর্তি হয়। এদের মধ্যে একজন রেফার্ডকৃত রোগী মারা যান। অন্যরা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। ৭ জুলাই পর্যন্ত যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে সাত জন সাপে কাটা রোগী ভর্তি হন। হাসপাতালের তথ্যানুযায়ী, এদের সবাইকে অবিষধর সাপ দংশন করেছিল।

এদিকে, সোমবার চৌগাছায় ১২ জনকে সাপে কেটেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। তাদের বেশিরভাগই নারী। এদের মধ্যে ১১ জন যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তবে তাদের কারও শরীরে সাপে কামড়ানোর দাগ ও বিষের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হারুণ অর রশিদ।

বিভিন্ন সূত্র থেকে যশোরে সাপে কাটা রোগীর মৃত্যুর যে তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ১ জুলাইয় যশোরের চৌগাছায় ঘুমন্ত অবস্থায় সাপের দংশনে ৪ সন্তানের জননী রাবিয়া বেগমের (৪০) মৃত্যু হয়। ওই দিন দিবাগত রাত ১০ টায় নিজ ঘরে তাকে সাপে কাটে। পরদিন মঙ্গলবার সকালে তাকে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে নিয়ে গেলে জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এদিকে, যশোরের শার্শার নিজামপুরে বিষধর সাপের কামড়ে প্রান্তি নামে ছয় বছরের এক শিশুর মৃত্যু হয়। ২৯ জুন রাতে উপজেলার নিজামপুর ইউনিয়নের একঝালা গ্রামের নিজ বাড়িতে তাকে সাপে কামড় দেয়। তখন তাকে প্রথমে শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। পরে তাকে নেওয়া হয় যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে। এরপর খুলনা ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল নেওয়া হয়। শনিবার দুপুরের দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় প্রান্তি।

অভয়নগরে বিষধর সাপের কামড়ে বিপ্লব দাস নামে এক যুবক মারা গেছেন। গতকাল ২৭ জুন রাতে উপজেলার ভাটপাড়া বাজারের একটি দোকানে কাজ করার সময় তাকে সাপে কামড় দেয়। সেখান থেকে হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। শার্শা উপজেলায় ফুফুর বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে সাপের কামড়ে আবদুল্লাহ (১৪) নামে এক মাদরাসা ছাত্রের মৃত্যু হয়। ২১ জুন শুক্রবার দুপুরে উপজেলার বেলতা গ্রামে সাপটি কামড় দেয়। পরে রাত ৯টার দিকে যশোর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

গত ১১ জুন যশোরের অভয়নগর উপজেলায় সাপের কামড়ে আসমা বেগম (৪০) নামে এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়। ওইদিন রাতে মালাধরা গ্রামের গৃহবধূর আসমাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পথে তিনি মারা যান। ওই দিন সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে আসমা বেগমের পায়ের বুড়ো আঙুলে কামড় দেয় সাপ। এর পর প্রথমে তাকে অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে রাত সাড়ে আটটার দিকে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

গত ২১ মে যশোরের চৌগাছায় সাপের কামড়ে রনি হোসেন (১৫) নামের এক কিশোরের মৃত্যু হয়। মঙ্গলবার দিবাগত রাত একটার দিকে উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের চাঁদপাড়া গ্রামের বাজার পাড়ায় এঘটনা ঘটে। রনি হোসেন গ্রামের কৃষক জাবেদ আলীর ছেলে। নিহতের বাবা জানান, রনি রাত ১২টার দিকে হঠাৎই ঘুম থেকে উঠে যন্ত্রণায় ডাকাডাকি শুরু করে। এক পর্যায়ে তার বিছানায় একটি বিষধর গোখরা সাপ দেখতে পাই। কিছু বুঝে ওঠার আগেই রাত আনুমানিক একটার দিকে তার মৃত্যু হয়।

মনিরামপুরে ১৫ এপ্রিল সাপের কামড়ে সাকিব হোসেন (২১)এক যুবকের মৃত্যু হয়। সাপে কামড়ানোর পর রাত ১০টার দিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য খুলনায় নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। সন্ধ্যায় বাড়ির পাশে রাস্তার ধারে বসে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়ার সময় একটি ইঁদুরের গর্ত বাম হাত ঢুকিয়ে দিলে সাপে কামড় দেয়। পরে তাকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করেন। রাত ১০টার দিকে পথেই সাকিবের মৃত্যু হয়।

যশোর জেনারেল হাসপাতাল তত্ত্বাবধায়ক ডা. হারুণ অর রশিদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘এ পর্যন্ত রাসেলস্ ভাইপারের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। হাসপাতালে যারা ভর্তি হয়েছেন তারা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। এদের বেশিরভাগই অবিষধর সাপের কামড়ের শিকার। শুধু শার্শার একটি শিশুকে রেফার্ড করা হয়েছিল, সে মারা গেছে। তবে হাসপাতালে পর্যাপ্ত এন্টিভেনাম রয়েছে।’

যশোরের সিভিল সার্জন ডা. মাহমুদুল হাসান সারাবাংলাকে বলেন, ‘গত তিন মাসে অন্তত ২০০ জনকে সাপে কাটার খবর পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে কম সংখ্যকই বিষধর। তবে রাসেলস্ ভাইপারের কোনো খবর পওয়া যায়নি। সাপ নিয়ে ভয়েরও কারণ নেই। প্রতিবছরই এই মৌসুমে সাপের কামড়ের শিকার হন অনেকে। সরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা ব্যবস্থা আছে, আতঙ্কিত না হয়ে হাসপাতালে নিয়ে আসতে হবে।’

সারাবাংলা/পিটিএম

যশোর রাসেলস্ ভাইপার সাপ


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

ধানমন্ডি থেকে গ্রেফতার শাজাহান খান
৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০২:৪৫

সম্পর্কিত খবর