বিক্ষোভকারী-পুলিশ সংঘাতের ঘটনায় মামলা, আসামি ৪০০
৩০ জুলাই ২০২৪ ১৯:২১
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম নগরীতে ‘বৈষম্যবিরোধী’ আন্দোলনকারীদের বিক্ষোভ নিয়ে সংঘাতের ঘটনায় ১৬ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৩০০ থেকে ৪০০ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের হয়েছে।
সোমবার (২৯ জুলাই) রাতে নগরীর কোতোয়ালি থানায় পুলিশের পক্ষ থেকে মামলাটি দায়ের করা হয়েছে।
‘শিক্ষার্থী হত্যার বিচার ও বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়াসহ নয় দফা দাবিতে’ কেন্দ্রঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী সোমবার (২৯ জুলাই) বিকেলে নগরীর চেরাগি পাহাড় এলাকায় ‘বৈষম্যবিরোধী’ আন্দোলনকারীরা জড়ো হয়ে বিক্ষোভের চেষ্টা করেন। পরে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় শিক্ষার্থীদের ছোড়া ইট-পাটকেলে পুলিশের তিন সদস্য আহত হন। পরে সেখান থেকে পুলিশ ২০ জনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।
কোতোয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ওবায়দুল হক সারাবাংলাকে বলেন, ‘আন্দোলনকারীদের আক্রমণে তিন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। গুরুতর আহত এক পুলিশ সদস্যকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় বেআইনি জনতাবদ্ধ হয়ে দাঙ্গা, পুলিশের কর্তব্যকাজে বাধাদানের অভিযোগে একটি মামলা দায়ের হয়েছে। এতে বিএনপি-জামায়াতের ১৬ নেতাকর্মীর নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ৩০০ থেকে ৪০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।’
‘ঘটনাস্থল থেকে আটক করা ২০ জনের মধ্যে ১৬ জনকে তাদের অভিভাবকের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়। বাকি চারজনকে মামলায় আসামি করা হয়েছে। তারা শিবিরকর্মী বলে তথ্যপ্রমাণ পেয়েছি,’ – বলেন ওসি।
এদিকে, নগরীর পাহাড়তলী থানায় নাশকতার অভিযোগে আরও একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
পাহাড়তলী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কেপায়েত উল্লাহ সারাবাংলাকে জানান, সোমবার (২৯ জুলাই) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে পাহাড়তলীর কলকা সিএনজি মোড় এলাকায় জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা মিছিল বের করে। এ সময় তারা যানবাহন চলাচলে বাধা দিয়ে ভাঙচুরের চেষ্টা করে। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে তাদের ধাওয়া দিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় পাঁচজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
এ ঘটনায় গ্রেফতার পাঁচ জনসহ ৪৩ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ১৬০ থেকে ১৭০ জনকে আসামি করে মামলা হয়েছে। গ্রেফতার পাঁচ জন ছাত্রশিবিরের কর্মী বলেও দাবি ওসি’র।
এদিকে, কোটা সংস্কারের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে টানা সংঘাত ও পরবর্তী সময়ে নাশকতার ঘটনায় চট্টগ্রাম নগরী ও জেলায় পুলিশের গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত আছে। মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) সকাল পর্যন্ত নগরীতে ৩৪ ও জেলায় ১২ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। নগরীতে ২২টি ও জেলায় ১১টিসহ মোট ৩৩ মামলায় গত ১৪ দিনে ৯৬৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি-মিডিয়া) কাজী মো. তারেক আজিজ সারাবাংলাকে জানান, নগরীতে দায়ের হওয়া ২২ মামলায় মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) সকাল ৮টা পর্যন্ত নগরীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ৩৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ নিয়ে মোট ৫৬৬ জনকে গ্রেফতার করা হলো।
চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু তৈয়ব মো. আরিফ হোসেন সারাবাংলাকে জানান, কোটা সংস্কারের আন্দোলনের মধ্যে নাশকতার ঘটনায় জেলার বিভিন্নস্থানে অভিযান চালিয়ে আরও ১২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের নাশকতার ঘটনায় দায়ের হওয়া ১১টি মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। এ নিয়ে গ্রেফতারের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪০০ জনে।
কোটা সংস্কারের দাবিতে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের ধারাবাহিক আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গত ১৬ জুলাই থেকে টানা চারদিন চট্টগ্রামে দফায় দফায় সংঘাতে ছয় জন নিহত হন। আহত হন শতাধিক।
এ সব ঘটনায় নগরীর পাঁচলাইশ থানায় সাতটি, কোতোয়ালি থানায় পাঁচটি, চান্দগাঁও থানায় চারটি এবং বাকলিয়া, খুলশী, ডবলমুরিং, আকবর শাহ, হালিশহর ও পাহাড়তলী থানায় একটি করে ছয়টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। অধিকাংশ মামলার বাদী পুলিশ।
সারাবাংলা/আইসি/পিটিএম