‘ঢাবি ছাত্রশিবিরের পূর্ণাঙ্গ কমিটি শিগগিরই’
২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২০:৩৭
ঢাকা: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইসলামী ছাত্রশিবিরের পূর্ণাঙ্গ কমিটি শিগগিরই প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছেন সংগঠনটির ঢাবি শাখার সেক্রেটারি এস এম ফরহাদ হোসেন। সদস্যদের সরাসরি ভোটে কমিটির সদস্যরা নির্বাচিত হয় বলেও জানান তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের সভাপতি আবু সাদিক মো. কায়েম ও সেক্রেটারি এস এম ফরহাদের আত্মপ্রকাশের পর ভার্চুয়াল জগৎসহ নানা জায়গায় চলছে আলোচনা-সমালোচনা। এর পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে গণমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নিজেদের দলীয় অবস্থান স্পষ্ট করলেন এস এম ফরহাদ।
ছাত্রলীগের কমিটিতে নাম থাকার বিষয়ে এস এম ফরহাদ বলেন, ‘ছাত্রলীগের কমিটিতে পদ পাওয়ার জন্য নিয়মিত প্রোগ্রাম করতে হয়, নেতাদের প্রটোকল দিতে হয়, মধুর ক্যান্টিনে গিয়ে হাজিরা দিতে হয় এবং পদের জন্য সিভি দিতে হয়। আমি কখনও এসবের কোনোটি করেছি বলে কেউ প্রমাণ দিতে পারবে না। ডিবেটিং ক্লাবের সভাপতি ছিলাম, তাই তারা আমার নাম তাদের কমিটিতে দিয়েছে।’
বিভিন্ন ছবিতে ছাত্রলীগ নেতাদের সঙ্গে দেখা যাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘হল ডিবেটিং ক্লাবের সভাপতি এবং ডিপার্টমেন্ট ডিবেটিং ক্লাবের সেক্রেটারি হওয়ায় বিভিন্ন প্রোগ্রামে তাদের সঙ্গে তাদের সঙ্গে থাকতে হয়েছে। আর এ কারণে অনেক ছবি তোলা হয়েছে।’
আন্দোলনে নয় দফার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দল-মত নির্বিশেষে দেশের সকল মানুষের। সবার মতো আমরাও আমাদের সর্বোচ্চটা দিয়ে অংশ নিয়েছি। তবে এজন্য ক্রেডিট নিলে আন্দোলনের স্পিরিট ব্যাহত হবে।’
গোপনে রাজনীতি করা জাতির সঙ্গে প্রতারণা কি না? এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ছাত্রশিবির আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরও ২০১৪ পর্যন্ত মোটামুটি প্রকাশ্যে কার্যক্রম চালিয়েছে। আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় আসার পর থেকে দেশব্যাপী অনবরত গুম, ক্রসফায়ার আর রিমান্ডে নিহত ও নির্যাতনের শিকার হয়েছে শিবিরের নেতাকর্মীরা। দেশের কোনো দল বা সংগঠন এসবের খুব একটা প্রতিবাদ করেনি। বাধ্য হয়েই পরিচয় গোপন করতে হয়েছে শিবিরের নেতাকর্মীদের।’ এখন এটাকে যদি প্রতারণা বলার চেষ্টা করে তবে তা মজলুমের প্রতি আরও বেশি জুলুম বলে মনে করেন এস এম ফরহাদ।
পরিবেশ পরিষদ ক্যাম্পাসে ছাত্রশিবিরের রাজনীতির বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার বিষয়ে এস এম ফরহাদ বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোনো সিদ্ধান্ত দেওয়ার অধিকার তিনটি প্রতিষ্ঠানের আছে। সিনেট, সিন্ডিকেট এবং একাডেমিক কাউন্সিল ছাড়া অন্য কারও সিদ্ধান্ত এখানে গ্রহণযোগ্য নয়। এই তিন প্রতিষ্ঠান শিবির নিষিদ্ধের বিষয়ে কখনও আলাপ পর্যন্ত করেনি।’
শিক্ষার্থীদের ছাত্ররাজনীতি অপছন্দের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিদ্যমান চিন্তাভাবনা ফ্যাসিবাদের ১৫ বছরের অপকর্মের ফলাফল। শিক্ষার্থীরা ১৫ বছর ধরে যা দেখে আসছে, ছাত্ররাজনীতি বলতে তাই ধরে নিচ্ছে। আগামী দিনে ছাত্ররাজনীতি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করবে না। প্রশাসনই বিশ্ববিদ্যালয়ের সব সিদ্ধান্ত নিবে।’ ছাত্ররাজনীতিকে যদি সঠিকভাবে শিক্ষার্থীদের সামনে তুলে ধরা যায় তাহলে তারা খুব সহযেই গ্রহণ করে নিবে বলে বিশ্বাস এস এম ফরহাদের।
শিবির রগ কাটে এমন একটি ধারণা দেশে প্রচলিত আছে- এ বিষয়ে এস এম ফরহাদ বলেন, ‘আপনার একটু সার্চ করে দেখবেন, শিবিরের সংশ্লিষ্টতা এমন কিছুর সঙ্গে খুঁজে পান কি না। ফ্যাসিবাদ সরকার ১৫ বছর ধরে এমন একটি ন্যারেটিভ দাঁড় করিয়েছে, যা সমর্থন না করলেও বিরোধিতা করার সুযোগ কারও ছিল না। ফলে এই ন্যারেটিভ অনেকের মনেই প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে।’
ছাত্রশিবিরকে শেখ হাসিনা সরকার এত বেশি প্রতিরোধ কেন করেছে? এ প্রশ্নের জবাবে এস এম ফরহাদ বলেন, ‘ফ্যাসিবাদ কায়েমের পথে যাদেরকেই হাসিনা সরকার বাধা মনে করেছে তাদেরকে পথ থেকে সরিয়ে দিয়েছে। বিডিআর হত্যাকাণ্ড থেকে শিবিরের ওপর নির্যাতনের স্টিম রোলার এরই ধারাবাহিকতা।’
শিবিরের আত্মপ্রকাশের পর শিক্ষার্থীরা কীভাবে দেখছে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘হলের ৯০ শতাংশ শিক্ষার্থী আমাদের পজিটিভলি নিচ্ছে। হলের শিক্ষার্থীরা বিগত বছরগুলোতে আমাদের কাছ থেকে দেখার ও যাচাই-বাছাই করার সুযোগ পেয়েছে। ফলে ফ্যাসিবাদের তৈরিকৃত শিবির ভীতি ক্রমেই দূর হচ্ছে।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সব দল আন্দোলন করেছে। অনুরূপভাবে আগামী দিনেও রাজনীতির মাঠে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে আশাবাদী ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ সম্পাদক এস এম ফরহাদ।
সারাবাংলা/এআইএন/পিটিএম
আবু সাদিক মো. কায়েম এস এম ফরহাদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন