সংস্কারে গরুর গাড়ির গতিতে অসন্তোষ বাম জোটের, চাওয়া নির্বাচনি রোডম্যাপ
৫ অক্টোবর ২০২৪ ১৪:৩৫
ঢাকা: অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে রাষ্ট্র সংস্কারের কাজে ধীরগতি দেখা যাচ্ছে বলে মনে করছে বাম গণতান্ত্রিক জোট। তাদের দৃষ্টিতে সংস্কার কাজের গতি রীতিমতো গরুর গাড়ির মতো। এ অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটিয়ে সংস্কার কাজে গতি চায় এই জোট। পাশাপাশি পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ চাইবে বাম গণতান্ত্রিক জোট। এ ক্ষেত্রে জোটের পক্ষ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানানো হবে।
পাশাপাশি চলমান সংস্কার প্রক্রিয়ায় কমিশনগুলোতে ‘বির্তকিত’ ব্যক্তিদের উপস্থিতি রয়েছে বলেও মনে করছে বাম গণতান্ত্রিক জোট। তারা এসব ‘বিতর্কিত’ ব্যক্তিদের অপসারণের দাবিও জানাবে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে।
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের তৃতীয় দফায় সংলাপে আমন্ত্রণ পেয়েছে বাম গণতান্ত্রিক জোট। আজ শনিবার (৫ অক্টোবর) বিকেল ৪টায় উপদেষ্টা পরিষদের সঙ্গে সংলাপে বসবে জোটের ৯ সদস্যের প্রতিনিধি দল। ওই সংলাপেই জোটের পক্ষ থেকে এসব বক্তব্য ও দাবি তুলে ধরা হবে।
নির্বাচন ব্যবস্থা, পুলিশ, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন, সংবিধান ও দুর্নীতি দমন বিষয়ে সংস্কারের জন্য ছয়টি কমিশন গঠন করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। এর মধ্যে পাঁচটির সদস্যদের নামসহ কমিশনগুলো গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। সরকার জানিয়েছে, কমিশনগুলো ৯০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেবে। সেই প্রতিবেদনের সুপারিশ নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আরেক দফা আলোচনায় বসবে। তারপর পরামর্শমূলক মতবিনিময় হবে। তারপর সংস্কার বাস্তবায়ন করা হবে।
জোটের সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলেছ, অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে একটি লিখিত প্রস্তাবনা তুলে ধরবে বাম গণতান্ত্রিক জোট। প্রস্তাবনায় সাম্প্রদায়িক উগ্রপন্থিদের কর্মকাণ্ড ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণ, শ্রমিক হত্যার বিচার, সংস্কারের কাজ কচ্ছপ গতি থেকে ফিরিয়ে এনে এবং দ্রুত নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার দাবিগুলো থাকবে।
জানতে চাইলে জোট নেতা বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মো. শাহ আলম সারাবাংলাকে বলেন, দ্রুত নির্বাচন আয়োজনের ওপর জোর দেওয়া হবে। এ ছাড়া সাম্প্রদায়িক শক্তির কর্মকাণ্ড, শ্রমিক হত্যা, দ্রব্যমূলের ঊর্ধ্বগতি, সংস্কার প্রক্রিয়ায় গতি ফিরিয়ে আনার বিষয়গুলোতে গুরুত্ব দেবো।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার কে চালাচ্ছে— এমন প্রশ্নও রয়েছে জোটের মধ্যে। শাহ আলম বলেন, এ প্রশ্ন আমরা করব প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে। তার কাছে জানতে চাওয়া হবে, দেশে সরকার কয়টি? কারণ রাষ্ট্রের দিকে তাকালে দেখা যায়, সরকারের অভাব নেই। নির্বাচন নিয়ে সেনাপ্রধান বলছেন ১৮ মাসের কথা, আবার প্রধান উপদেষ্টা বলছেন তিনি জানেন না। প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব বলছেন আরেক কথা। এই সরকার অতিকথন ও সমন্বয়হীনতায় ভুগছে।
জানতে চাইলে জোটের আরেক নেতা বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য কিছু সংস্কার করবে। সব রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনের জন্য একটি অবস্থানে ঐক্যমতে নিয়ে আসবে। কিন্তু এসব দিকে সরকারের খেয়াল নেই। সব রাজনৈতিক দলকে একটি ঐকমত্যে নিয়ে এসে নির্বাচন তফসিল ঘোষণার যে প্রক্রিয়া, এ ক্ষেত্রে সরকারের গড়িমসি দেখা যাচ্ছে।
সরকারের কার্যক্রমের ব্যাখ্যা চাওয়ার কথা জানিয়ে বজলুর রশিদ বলেন, সংস্কার করা জন্য ছয়টি কমিশন করা হয়েছে। এর মধ্যে কোন কমিশনের কাজকে গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার, তা দেশবাসী জানে না। আমরা সরকারপ্রধানের কাছে জানতে চাইব, কোন কাজটির ওপর সরকার প্রাধান্য দিচ্ছে।
সরকারের কাজের গতি কী?— এমন প্রশ্ন রেখে বজলুর রশিদ বলেন, গরুর গাড়িরও গতি আছে, আবার রকেটেরও গতি আছে। সরকারের কাজের গতি দেখে মনে হচ্ছে, গরুর গাড়ির গতিতে সংস্কারের কাজ চলছে। এ ছাড়া সংবিধান সংস্কারের জন্য প্রথমে শাহাদীন মালিককে নেওয়া হলো। তাকে বাদ দিয়ে আবার আলী রিয়াজকে নেওয়া হয়েছে। আলী রিয়াজ একজন দ্বৈত নাগরিক। তিনি ন্যাটোর উপদেষ্টা। তিনি একজন বিতর্কিত ব্যক্তি। কোনো বির্তকিত ব্যক্তিকে দিয়ে সংস্কার কাজ করা হলে জনগণ মেনে নেবে না। কমিশনে এ রকম দুই-তিনজন বির্তকিত লোক রয়েছে। যেমন— তাজুল ইসলাম, তিনি মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার চলাকালে জামায়াতে ইসলামীর আইনজীবী ছিলেন। তিনিও বির্তকিত। এসব বিষয় সংলাপে তুলে ধরা হবে।
১৯৯০ সালে তিন জোটের রূপরেখা অনুযায়ী তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করা হয়েছিল। বিচারপতি শাহাবুদ্দিন তিন জোটের রূপরেখা অনুযায়ী দায়িত্ব নিয়ে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করে আবার প্রধান বিচারপতির পদে ফিরে গেছেন।
ওই সরকারের উদাহরণ টেনে বাসদ সাধারণ সম্পাদক বলেন, বর্তমান সরকার কী করবে, তা বুঝে উঠতে পারছি না। সংস্কার করতে বেশি সময় লাগার কথা নয়। এ সংস্কার তিন মাসেও করতে পারে, আবার পাঁচ বছরেও করতে পারে। সে ক্ষেত্রে নির্বাচনি ও সংস্কারের টাইম ফ্রেম জানতে চাওয়া হবে। নির্বাচনের ক্ষেত্রে আমাদের দাবি, দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচন দিয়ে নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হোক। এরপর জাতীয় সংসদে প্রথম অধিবেশনে অন্তর্বর্তী সরকারের কাজকে বৈধতা দেওয়া হবে। সংসদ ছাড়া অন্তর্বর্তী সরকারে কাজের বৈধতা হবে না।
এর আগে গত ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর এরই মধ্যে দুই দফায় উপদেষ্টা পরিষদের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিদের বৈঠক হয়েছে। এই চলমান প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই আজ শনিবার থেকে আবারও এক দফা আলোচনা শুরু হচ্ছে। এ পর্যায়ে প্রথম দিনে বিএনপি, জাময়াতে ইসলামী, বাম গণতান্ত্রিক জোট ও গণতন্ত্র মঞ্চকে সংলাপের জন্য আহ্বান করেছে সরকার। কিছুক্ষণের মধ্যেই বিএনপি প্রথম দল হিসেবে সংলাপ বসবে উপদেষ্টা পরিষদের সঙ্গে।
সারাবাংলা/এএইচএইচ/টিআর
অন্তর্বর্তী সরকার উপদেষ্টা পরিষদ বাম গণতান্ত্রিক জোট রাজনৈতিক সংলাপ