Wednesday 30 Oct 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

চট্টগ্রামে দল গোছাচ্ছে জামায়াত, লক্ষ্য ‘ঘাঁটি’ পুনরুদ্ধার

ইমরান চৌধুরী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
৩০ অক্টোবর ২০২৪ ২২:৩৩

চট্টগ্রাম ব্যুরো: গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর রাজনীতির মাঠে ব্যাপকভাবে সক্রিয় হয়েছে জামায়াতে ইসলামী। প্রায় ১৬ বছর বিভিন্ন ইস্যুতে আন্দোলনের মাঠে বৈরী পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়েছে দলটিকে। শেষ মুহূর্তে নিষেধাজ্ঞার খড়গও নেমে আসে দলটির ওপর। তবে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর জামায়াত ফের মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে।

বন্দরনগরী চট্টগ্রাম জামায়াত ইসলামীর ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। ১৬ বছর ধরে নিজেদের ঘাঁটিতে কোণঠাসা থাকলেও পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এখন সেটা পুনরুদ্ধারের লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নেমেছেন দলটির নেতাকর্মীরা। দ্রুত দল গোছাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। সাধারণ মানুষের কাছে দাওয়াত ও সংগঠনের ইতিবাচক দিক তুলে ধরার পাশাপাশি আওয়ামী লীগের আমলে নির্যাতনের চিত্রও জানান দিচ্ছেন বিভিন্ন কর্মসূচিতে।

বিজ্ঞাপন

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম নগরীর ৪১ ওয়ার্ড ও ১৬টি থানায় জামায়াতে ইসলামীর পূর্ণাঙ্গ কমিটি আছে। এছাড়া, দলটির ভ্রাতৃপ্রতিম পেশাজীবী সংগঠনের ২১টি কমিটিও আছে নগরীতে। এবার কার্যক্রম সহজ করতে পাঁচটি করে ওয়ার্ডকে নিয়ে একটি সাংগঠনিক-প্রশাসনিক রূপ দিয়ে কমিটি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছেন দলটির নেতারা।

চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াত ইসলামীর নায়েবে আমীর আ জ ম ওবায়দুল্লাহ সারাবাংলাকে বলেন, ‘জামায়াত ইসলামী একটি সুশৃঙ্খল ও সুসংগঠিত দল। শৃঙ্খলা বজায় রেখে আমরা কার্যক্রম পরিচালনা করি। যেহেতু মুক্তভাবে এখন কাজ করা যাচ্ছে, তাই আমরা দলকে ভালোভাবেই গুছিয়ে নিচ্ছি। নগরীর ৪১ ওয়ার্ড ও ১৬টি থানায় আমাদের পূর্ণাঙ্গ কমিটি রয়েছে। পেশাজীবীদের ২১টি সংগঠনের কমিটি আছে। সাংগঠনিক কাজ সহজভাবে পরিচালনার জন্য আমরা কয়েকটি ওয়ার্ড মিলে একটি প্রশাসনিক কমিটি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সেটার কার্যক্রম চলছে।’

বিজ্ঞাপন

আগামী সংসদ নির্বাচনে নির্দিষ্ট আসনে প্রার্থী দেওয়া হবে জানিয়ে জামায়াতের এ নেতা বলেন, ‘সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে আমাদের কাছে সিদ্ধান্ত আছে। আমরা যেখানে প্রার্থী দাঁড় করানোর সেখানে করব। আমাদের সিলেক্ট করা আছে। যখন সুযোগ আসবে তখন যেখানে যাকে প্রয়োজন তাকে মনোনোয়ন দেব। চট্টগ্রাম নগরীতে সব আসনে প্রার্থী হয়তো দেবো না। কিছু নির্দিষ্ট আসনে প্রার্থী দেবো। তবে সেটা এখন বলা যাচ্ছে না। পরিবেশ বলে দেবে।’

১৬ বছর কাজ করতে না পারলেও সক্রিয় ছিল জামায়াত

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গত ১৬ বছর জামায়াতে ইসলামী প্রকাশ্যে রাজনীতি করতে পারেনি। তাই দলটির রাজনীতি অনেকটা সীমাবদ্ধ ছিল। ফলে ভেতরে ভেতরে নিজেদের সংগঠনের কাজ করা ছাড়া তাদের অন্য কোনো উপায় ছিল না।

জানতে চাইলে আ জ ম ওবায়দুল্লাহ বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন স্বৈরাচারের কবলে ছিলাম। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর লগি-বৈঠার তাণ্ডবের পরে দেশে যে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল সেটাকে পুঁজি করে আওয়ামী লীগ রাজনীতির ময়দানে নিজের অবস্থান তৈরি করেছিল। এর পর ওয়ান ইলেভেনের কুশীলবরা দায়িত্ব নেয়। তারা একটা পাতানো নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনে। সে-ই থেকে আওয়ামী লীগ ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত একচ্ছত্রভাবে ক্ষমতায় আসীন ছিল।’

তিনি বলেন, ‘ক্ষমতা অপব্যবহারের মাধ্যমে সব বিরোধীদলকে তারা দমিয়ে রেখেছিল। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ছিল তাদের এক নম্বর টার্গেট। তারা চেয়েছিল প্রথমে জামায়াতে ইসলামীকে নেতৃত্ব শূন্য করবে। সেজন্য তারা জুডিশিয়াল কিলিংয়ের পথ বেছে নেয়। এরপর তারা জামায়াতে ইসলামীর গুরুত্বপূর্ণ সব ব্যক্তিকে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলায়। ধারাবাহিক নির্যাতন ও অনেক নেতা শহিদ হওয়ার পরও জামায়াতে ইসলামী রাজনৈতিক ময়দানে অ্যাক্টিভ ছিল।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের মাঠে নামতে দেওয়া হয়নি। ঘরের ভেতরে দু’টি লোক বসছে, সেটাকে তারা বড়ধরনের নাশকতা হিসেবে দেখিয়েছে। ১৬ বছর কোনো ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড আমাদের করতে দেওয়া হয়নি। মহানগর অফিসেও আমরা অনেক বছর বসতে পারিনি। আওয়ামী লীগ চেয়েছিল জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতিকে নিষিদ্ধ করার আগে মাঠে-ময়দানে আমাদের সম্পূর্ণরুপে নিষ্ক্রিয় ও কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়ার। এত হত্যা, নির্যাতন, গুম ও জেল-জুলুমের পরেও রাজনৈতিকভাবে জামায়াতের মজবুত থাকা এটা অনেকের কাছে এখনো বিস্ময়কর।’

১৬ বছরে ১৪০০ মামলা

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই জামায়াতে ইসলামীর অধিকাংশ শীর্ষ নেতাকে বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার ও কারাবন্দি করা হয়। চট্টগ্রামেও দলটির নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে করা হয় সহস্রাধিক মামলা। সারাদেশের মতো নগরীর রুমঘাটা এলাকায় অবস্থিত চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতের দলীয় কার্যালয়ও বন্ধ করে দেওয়া হয়।

গত ১৫ বছরে তিন বছর জেলে কাটাতে হয়েছে জানিয়ে নগর জামায়াতের নায়েবে আমির আ জ ম ওবায়দুল্লাহ বলেন, ‘চট্টগ্রাম শহরে জামায়াতের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে প্রায় ১ হাজার ৪০০ মামলা হয়েছে। হাজার হাজার নেতাকর্মী বিনা দোষে জেল খেটেছে। ২০১৮ সালে নিউমার্কেটের মোটেল সৈকত থেকে ২১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। ওই একটি মামলায় আমরা একসঙ্গে ২১০ জন আসামি হয়েছি। আমি ওই মামলায় নয় মাস জেলে খেটে বের হয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ মামলার মাধ্যমে আমাদের ব্যস্ত ও নিষ্ক্রিয় রাখতে চেয়েছিল। একটি মামলা মানেই অন্তত কমপক্ষে মাসে একবার হাজিরা দিতে হবে। আমার নামে ৫৬টি মামলা হয়েছে। গত ১৫ বছরে প্রায় তিন বছর জেলে ছিলাম।’

তিনি আরও বলেন, ‘চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতে ইসলামীর আমীর শাহজাহান ভাইয়ের নামে মামলা আছে ৮৫ থেকে ৮৭টি। উনি প্রায় ছয় বছর জেলে ছিলেন। শামসুল ভাই সাত বছর। এতকিছুর পরও আওয়ামী লীগ আমাদের দমাতে পারেনি। আমাদের সাংগঠনিক পদ্ধতির কারণে আমরা সংগঠনটি ধরে রাখতে পেরেছি। এত নির্যাতন, হত্যার, খুন-গুমের পরও আমাদের নেতাকর্মীরা কাজ বন্ধ করে দেয়নি। আমাদের কাজ বন্ধ হয়নি। কোনো না কোনো ফরম্যাটে আমরা কাজ করতে থাকি। আমাদের কর্মীরা হতাশ হয় না, পালিয়ে যায় না। নেতারা কর্মীদের ছেড়ে চলে যায় না।’

‘মানুষ মুক্ত পরিবেশে অন্যভাবে সাড়া দেয়। আগে এটা পারতো না। আগে আমরা একটা মিছিলে ৫০০ লোক জমায়েতের জন্য বলেছি, সেখানে যদি ২০০ লোক আসতো তাহলে আমরা শুকরিয়া আদায় করতাম। যারা আসতো তারা ঝুঁকি নিয়ে আসতো। কারণ, এরা জানতো মিছিলে গেলে তারা আটক হবে। সে সময়ের পাঁচ জন লোক এখনকার ৫০০ জনের সমান। মানুষের সমর্থন পেয়েছি বলেই আমরা এখনও মাথা উঁচু করে রাজনীতি করতে পারছি’,- যোগ করেন আ জ ম ওবায়দুল্লাহ।

সারাবাংলা/আইসি/পিটিএম

গোছাচ্ছে চট্টগ্রাম দল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর