Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘আফগানিস্তানে রহস্য স্পিনার থাকেই’, বাংলাদেশে কবে হবে?

স্পোর্টস করেসপন্ডেন্ট
৭ নভেম্বর ২০২৪ ১৭:২১

রহস্য নাকি জাদু? কী বলবেন একে? দুই দিকেই বল ঘোরাতে পারেন, ক্যারম বল কিংবা ব্যাকস্পিন; আল্লাহ মোহাম্মদ গাজানফার সব বৈচিত্র্যের ঝাঁপি খুলে বসেছিলেন বাংলাদেশের বিপক্ষে শারজায় প্রথম ওয়ানডেতে। দিশাহীন ব্যাটিংয়ে তাকে আরো আনপ্লেয়েবল করে তুললেন বাংলাদেশের ব্যাটাররা । মুশফিক-তানজিদদের একেকটা ডিসমিসালে হয়ে উঠলেন আরো রহস্যময়। এক কথায় বললে ভেঙেচুড়ে একাকার করে দিয়েছেন বাংলাদেশকে। 

দ্বিতীয় ইনিংসে দুই উইকেটে ১২০ রান থেকে ১৪৩ রানে অলআউট! আফগানিস্তানের বিপক্ষে ২৩ রানের ব্যবধানে পড়ল শেষ আট উইকেট। এর মধ্যে পাঁচটাই নিলেন গাজানফার। আসা-যাওয়ার মিছিলে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ল ব্যাটিং অর্ডার। ব্যাখাতীত এই ব্যাটিং ব্যর্থতায় প্রথম ওয়ানডেতে হারের পর পুরস্কার বিতরণীতেও তাই বাংলাদেশ অধিনায়ক শান্ত গাজানফারের প্রশংসায় কার্পণ্য দেখাননি। 

বিজ্ঞাপন

২৩৬ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ভালোই এগোচ্ছিল বাংলাদেশ। সৌম্য সরকার আর মেহেদী হাসান মিরাজের দুটি পঞ্চাশোর্ধ্ব জুটিতে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ অনেকটাই নিজেদের হাতে রেখেছিলেন শান্ত। তবে নবীর বলে শান্ত ফেরার পর থেকেই শুরু হয়ে গাজানফারের স্পিন জাদু। বাংলাদেশের শেষ সাত উইকেটের পাঁচটাই তার। তানজিদ হাসান তামিমকে ফিরিয়ে শুরুটাও করেছিলেন তিনিই। 

মাত্র ষষ্ঠ ওয়ানডে খেলতে নামা গাজানফার মাঠ ছাড়লেন ক্যারিয়ারসেরা বোলিং ফিগার নিয়ে। ৬.৩  ওভার বল করে এক মেইডেনসহ মাত্র ২৬ রান দিয়ে নেন ছয় উইকেট। তাকে নিয়ে পুরস্কার বিতরণীতে শান্ত বলেন, ‘আফগানিস্তানে প্রায় সবসময়ই রহস্য স্পিনার দেখা যায়। তাদের সবাই আজকে ভালো বল করেছে। তবে গাজানফার ছিল আলাদা, দারুণ বল করেছে সে।’

বিজ্ঞাপন

গাজানফারকে খেলতে কেন এত হিমশিম খেয়েছেন বাংলাদেশী ব্যাটাররা? এমন তো নয়, যে রহস্য স্পিনারদের এবারই প্রথম খেলছেন তারা। অজন্তা মেন্ডিস থেকে শুরু করে সুনিল নারাইন, মাহিশ থিকশানা, মুজিব-উর-রহমান কিংবা গাজানফার; প্রযুক্তির এই যুগে আধুনিক ক্রিকেটে কোনো কিছুই আর রহস্য নয়। এমন একটা বোলিং স্পেলের পর নিশ্চয়ই তাকে নিয়ে  কাঁটাছেড়া হবে, বিশ্লেষণের ছুরিকাঁচির নিচে তার বোলিং-গ্রিপ-রিলিজ পয়েন্ট থেকে শুরু করে সবই রাখবেন দলগুলোর টেকনিক্যাল বিশেষজ্ঞরা। 

মিরাজের ডিসমিসালের কথাটা মনে করুন, ফিফথ স্টাম্পের বলে সুইপ খেলে ক্যাচ দিয়েছেন ওমরজাইয়ের হাতে। মিরাজ যতক্ষণে শট কমিট করেছেন, এর আগেই বলের গতি কমিয়ে এনেছেন গাজানফার। গতির হেরফেরে ক্যারম বলটা আর পড়তে পারেননি ঠিকমতো। 

কিংবা সুপার সিনিয়র মুশফিক; টেকনিক্যালি দলের সেরা ব্যাটার বলা হয় যাকে। যার পরিশ্রম-একাগ্রতা আর অনুশীলনের কথা বাংলাদেশের ক্রিকেটপাড়ায় মুখে মুখে ফেরে। কিন্তু তিনিও হতবুদ্ধি আউট হলেন গাজানফারের বলে। ফ্লাইটেড ক্যারম ডেলিভারিটা একেবারেই যে পড়তে পারেননি, সেটা বোঝা গেছে ব্যালেন্স হারিয়ে উইকেট ছেড়ে বেরিয়ে আসা দেখে। আগেই খেলতে চেয়েছিলেন লেগ সাইডে। কিন্তু শেষ মুহূর্তের ছোট্ট টার্নেই স্টাম্পড হয়ে মাঠ ছাড়তে হয়ে মুশফিককে।

বাংলাদেশ দলও নিশ্চয়ই দ্বিতীয় ম্যাচের আগে তাকে নিয়ে আলাদা প্রস্তুতি সারবে। সেটা ক্রিকেটারদের পাতে তুলে দেবেন টিম অ্যানালিস্ট। কিন্তু দিনশেষে মাঠের কাজটা করতে হবে ক্রিকেটারদেরই। সেই কাজে প্রথমবার ব্যর্থ মুশফিক-তানজিদরা। কেবল গাজানফারের বোলিং বৈচিত্র্যর সাথে মানিয়ে নিতে না পারাই নয়; ব্যাটারদের গেম অ্যাওয়ারনেস-সক্ষমতায় এখনো ঘাটতি।

সম্পর্কিতভাবেই এসে যায় আরো একটা প্রশ্ন, বাংলাদেশে কবে আসবে রহস্য স্পিনার? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে একটা নামই আসবে, আলিস আল ইসলাম। দেশের ক্রিকেটে যার আবির্ভাব হয়েছিল বিপিএল অভিষেকে দারুণ এক হ্যাটট্রিক দিয়ে। যে আলো ছড়িয়ে এসেছিলেন, সেটা ঢেকে যায় অবৈধ বোলিং অ্যাকশনের অভিযোগের কালো মেঘে। সাথে চোট সমস্যা, দীর্ঘ পুনর্বাসনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। খেলার বাইরে ছিলেন দুই বছর। ফিরেছিলেন সর্বশেষ ডিপিএল দিয়ে। 

গত বিপিএলে বল করেছেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের নেটে। সেখানে ভালো করায়, জায়গা পান মূল দলে। অস্ত্রভান্ডারে  টপ স্পিন, ফ্লোটারের সাথে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ; সিম এবং সুইং ডেলিভারি যোগ করে ফিরেন। আট ম্যাচে নয় উইকেট নিয়েছিলেন সেবার বিপিএলে। সেরাটা জমিয়ে রেখেছিলেন সিলেট স্ট্রাইকার্সের জন্য, ১৭ রানে চার উইকেট নিয়ে নজর কাড়েন নির্বাচকদের। প্রথমবারের মতো ডাক পান জাতীয় দলে। বিপিএলের পরই জায়গা হয় ঘরের মাঠে শ্রীলংকার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজের দলে। সেই সিরিজে চোট পাওয়ায় আর খেলা হয়নি তার। এখনো আছেন অভিষেকের অপেক্ষায়। 

সীমিত ওভারের ক্রিকেটে রহস্য স্পিনারদের কদর একটু আলাদাই। চার-পাঁচ ধরনের ডেলিভারি থাকবে হাতে, টার্ন, সাডেন বাউন্স কিংবা ক্যারম বলে প্রতিপক্ষকে নাস্তানাবুদ করবে; বাংলাদেশে হাপিত্যেশ আছে এই ক্যাটাগরির বোলারদের জন্য। বাস্তবতা হচ্ছে আফগানদের মতো বোলিং বৈচিত্র্য-প্রাচুর্য নেই, এখানে সীমাবদ্ধ কেবল আলিসেই। আপাতত তিনিই হয়তো ঘোচাতে পারেন সেই অভাবটা। সেই সামর্থ্যও তার আছে, কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সক্ষমতা যাচাইয়ের পথটা একটু দুরই বটে।

সারাবাংলা/জেটি/

বাংলাদেশ ক্রিকেট বাংলাদেশ ক্রিকেট দল বাংলাদেশ-আফগানিস্তান সিরিজ রহস্য স্পিনার

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর