এটা বিপ্লবী সরকার নয়, সাংবিধানিক সরকার: মির্জা ফখরুল
২২ নভেম্বর ২০২৪ ২৩:১২
যশোর: বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, মনে রাখতে হবে- এটা কোনো বিপ্লবী সরকার নয়, সাংবিধানিক সরকার। বিপ্লবী সরকার হলে আমাদের কোনো কথা থাকতো না। হাইকোর্ট থেকে বৈধতা নিয়ে এই সরকার গঠন করা হয়েছে। তাই বিএনপি দ্রুত নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে চায়।
শুক্রবার (২২ নভেম্বর) রাতে যশোরের বিডি হলে ‘ফ্যাসিবাদ বিরোধী দীর্ঘ আন্দোলন ও আজকের প্রেক্ষিত’ শীষর্ক নাগরিক ভাবনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। যশোর জেলা বিএনপি এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। তাদের কোনো গণতন্ত্র চর্চার ইতিহাস নেই। ৭১ পরবর্তী বাংলাদেশে শেখ মুজিব ফ্যাসিবাদের জন্ম দিয়েছিলেন। একদলীয় বাকশাল কায়েম করেছিলেন। যার অবধারিত পরিণতি ’৭৫ এর ১৫ আগস্ট। গত ১৫ বছর পতিত স্বৈরাচার হাসিনা দেশে যে অগণতান্ত্রিক পরিবেশ কায়েম করেছিলেন যার অবধারিত পরিণতি ৫ আগস্ট। গত ১৫ বছরে শেখ হাসিনা দেশকে নরকে পরিণত করেছিল। লাখ লাখ মানুষকে হামলা-মামলা দিয়ে দেশকে পঙ্গু করেছিল ‘
তিনি বলেন, ‘ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থান একদিনের কাজ নয়। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে বিএনপিসহ বিরোধী সব রাজনৈতিক দল ঐক্যবদ্ধ হয়ে যে আন্দোলন করেছে তার ফসল ৩৬ জুলাই গণ-আন্দোলন।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘দেশ নিয়ে প্রতিদিন চক্রান্ত চলছে। ফ্যাসিবাদের দোসররা সক্রিয়। তাই যেকোনো ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত রুখে দিতে ছাত্রসমাজকে রাজপথে সক্রিয় থাকতে হবে। ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতনের মাধ্যমে আন্দোলনের একটি উদ্দেশ্য সফল হয়েছে। মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জনমানুষের দ্বিতীয় লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সফল করার মাধ্যমে দেশে সত্যিকারের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। ফ্যাসিবাদবিরোধী আনেন্দালনে যারা ছিল তাদের নিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সম্মিলিতভাবে দেশ পরিচালনা করতে হবে, ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘৬৯ সালে শহিদ আসাদ, ৯০-এ স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে শহিদ ডাক্তার মিলন যেমন স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আগুন জ্বালিয়ে ছিল, তাদের আত্মত্যাগের পর যেভাবে মানুষ সম্মিলিতভাবে স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়েছিল, সেভাবে ২৪ সালে রংপুরের সাঈদ বুক পেতে বুলেটকে আলিঙ্গন করেছে; এবং তখনই স্বৈরাচার হাসিনার পতন নিশ্চিত হয়েছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘দেশ ও রাষ্ট্রের সংস্কার বিএনপি চায়। সে কারণেই আমরা প্রথমে ২৭ দফা ও পরে ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছিলাম।
বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, ‘আওয়ামী লীগের ইতিহাস হচ্ছে পালানোর ইতিহাস। ’৭১ সালে শেখ মুজিব জাতিকে পাকবাহিনীর মুখে ফেলে রেখে পাকিস্তানে পালিয়ে গিয়েছিল। শেখ মুজিব দেশের স্বাধীনতা চাননি। তিনি চেযেছিলেন ক্ষমতা। শেখ মুজিব পালিয়ে যাওয়ার পর আওয়ামী লীগের নেতারা সব পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছিলেন।’
এ সময় তিনি দেশের প্রয়োজনে সবাইকে যেমন ঐক্যবদ্ধ থাকার অনুরোধ করেন, তেমনি ছাত্র-জনতার আন্দোলন ও বর্তমান বাংলাদেশের অবস্থা তুলে ধরেন। সভায় যশোরের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ তাদের বক্তব্য উপস্থাপন করেন।
যশোর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক নার্গিস বেগমের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বিএনপির সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী ও খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত।
আলোচনা সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন- জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাড. সাবেরুল হক সাবু, যুগ্ম আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকন, যশোর প্রেসক্লাবের সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন, জেলা ইমাম পরিষদের সভাপতি মাওলানা আব্দুল মান্নান, পূজা উদযাপন পরিষদের দীপঙ্কর দাস রতন, ব্যবসায়ী শ্যামল দাস, ডা. রবিউল ইসলাম, মানবাধিকার ব্যক্তিত্ব বিনয় কৃষ্ণ মল্লিক প্রমুখ।
এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনে নিহত শহিদ আব্দুল্লাহ, শহিদ জাবের ও শহিদ তৌহিদের পরিবারের সদস্যসহ বিভিন্ন পেশাজীবীদের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন।
সারাবাংলা/পিটিএম